
২০০ বছর যে দেশকে শাসন ও শোষণ করেছিল ব্রিটিশরা, আজ সেই দেশে এসে তাদের প্রযুক্তিকেই ব্রিটেনে নিয়ে যেতে চাইছেন বর্তমান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার। আজ্ঞে হ্যাঁ, ভারতে পা রেখেই বর্তমান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ছুটে গেলেন ইনফোসিসের সহ প্রতিষ্ঠাতা ও ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান নন্দন নিলেকানির সঙ্গে বৈঠক করতে। কারণ? কারণ একটাই। ব্রিটেনে ভারতের আধার কার্ডের মতো একটি ডিজিটাল পরিচয়পত্র চালু করতে চান তিনি। আর সেই বিষয়েই ভারতের সাহায্যপ্রার্থী লর্ড ক্লাইভের দেশের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর পরিকল্পনা স্পষ্ট, ব্রিটেনে কাজ করতে গেলে এই ডিজিটাল পরিচয়পত্র হতে হবে বাধ্যতামূলক।
গত মাসেই ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘আপনার কাছে যদি নতুন এই ডিজিটাল আইডি না থাকে তাহলে আপনি ইউনাইটেড কিংডমে কাজ করতে পারবেন না’। নতুন এই ডিজিটাল আইডি কার্ডের মূল লক্ষ্য আসলে ২টো। অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করা ও জনসাধারণের পরিষেবাগুলিকে সহজ করা।
স্টারমার যদিও জানিয়েছেন, এই ব্যবস্থায় এখন বায়োমেট্রিক ডেটা ব্যবহারের কোনো পরিকল্পনা নেই তাদের। এই ব্যাপারে ব্রিটেন তাদের নিজস্ব মডেল তৈরি করতে আগ্রহী।
এই ক্ষেত্রে বলা যায় যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই ব্রিতিষ নাগরিকদের জন্য কোনও বাধ্যতামূলক পরিচয়পত্র নেই। এর কারণ, যে কোনও ধরনের আইডি কার্ডের কারণে ব্যক্তি স্বাধীনতা খর্ব হতে পারে বলে মনে করেছিল সে দেশের সরকার।
কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডনের অধ্যাপক টিম বেল অবশ্য মনে করিয়েছে যে, ব্রিটেন কখনই বাকি ইউরোপের মতো ‘কাগুজে’ হতে চায়নি। ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারও একদা বায়োমেট্রিক আইডি চালু করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সে দেশের সাধারণ মানুষের বিরোধিতায় সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
যদিও, অধ্যাপক বেল এই কথাও বলেন যে, ‘বর্তমানে একাধিক কাজে নিজের পরিচয় প্রমাণে যে ঝামেলা তা থেকে বাঁচতে একটা ডিজিটাল আইডি কার্ড হলে মন্দ হয় না’। কিন্তু এখানে একটাই প্রশ্ন— নতুন ডিজিটাল আইডি কার্ড এলে সুবিধা বাড়বে, নাকি ব্যক্তিগত স্বাধীনতার সত্যিই খর্ব হবে? আর সেই কারণেই আগামী কয়েক মাস ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের জন্য পরীক্ষা বেশ কঠিন।