Money Without Doing Anything : কাজ না করেই মিলছে দিনে হাজার হাজার টাকা, আপনিও কি এরকম স্বপ্নের চাকরির খোঁজে?
Money Without Doing Anything : কোনও কাজ না করে টোকিওয়ের এক বাসিন্দার এক ঘণ্টায় আয় প্রায় ৬ হাজার টাকা। এইভাবেই চলে সংসার।
চাকরিক্ষেত্রে বসের চাপ, প্রতিদ্বন্দ্বীদের রেষারেষি, কাজের চাপ- এসব লেগেই থাকে। শত বাধা অতিক্রম করে বসের চোখে নিজের পারফরমেন্স বসের নজর কাড়তে পারলে তবেই মেলে প্রশংসা। আর প্রশংসার হাত ধরে আসে বেতন বৃদ্ধি। কর্পোরেটে চাকরি টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে করতে হয় কসরত। কসরত না করে মাসে মাসে বেতন পাওয়ার ভাগ্য হয়ত খুব কম লোকেরই হয়। ভারতে সরকারি চাকরি সুখের চাকরি হিসেবে একটা মিথ থাকলেও সেখানেও কিছুটা হলেও পরিশ্রম করতে হয়। কিন্তু কার্যত কোনও কাজ না করেও বেতন পাওয়া যায়। জাপানেই এরকম ঘটনা দেখা গিয়েছে। ৩৮ বছর বয়সী টোকিওর বাসিন্দা শোজি মরিমোটো শুধুমাত্র এক ঘণ্টার জন্য তাঁর ক্লায়েন্টদের সঙ্গ দেওয়ার জন্য ধার্য করেন ৫ হাজার ৬৫৫ টাকা (৭১ ডলার)। অর্থাৎ প্রায় ৬ হাজার টাকা এক ঘণ্টার জন্য।
কিন্তু শোজির কাজটা কী? তিনি সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ‘আসলে আমি নিজেকে ভাড়া দিই। আমার ক্লায়েন্টরা আমাকে যেখানে চান আমার কাজ হল সেখানে উপস্থিত থাকা। এবং আদতে কিছু না করা।’ তিনি জানিয়েছেন, গত চার বছরে এরকম ৪ হাজারটি সেশন তিনি করেছেন। দেখতে ছিমছাম। গড়পড়তা চেহারা। টুইটারে সেই মরিমোটোরই ফলোয়ারের সংখ্যা প্রায় ১ মিলিয়ন। এই টুইটার থেকে তিনি বেশিরভাগ ক্লায়েন্ট পেয়ে থাকেন। তাঁদের মধ্যে এক চতুর্থাংশ ভাগই তাঁকে একাধিকবার ভাড়া নিয়েছেন। এরকম একজন রয়েছেন যিনি তাঁকে ২৭০ বার ভাড়া নিয়েছেন।
তবে এই ভাড়ার প্রসঙ্গ উঠলে অনেকেই ভুল ব্যাখ্যা করতে পারেন। সেক্ষেত্রে স্পষ্টভাবে বলে রাখা ভাল, এরকম কোনও ধরনের আবেদনে মরিমোটো সাড়া দেন না। তিনি একটি ফ্রিজ সরানো ও কম্বোডিয়া যাওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। কোনও যৌন আবেদনও গ্রহণ করেননি তিনি। মরিমোটোর কাজ হল শুধুই সঙ্গ দেওয়া। একটি উদাহরণ দেওয়া যাক, অরুণা চিদা নামের এক ২৭ বছর বয়সী যুবতি একটি ভারতীয় পোশাক পরার পরিকল্পনা করেছিলেন। পেশায় তিনি একজন ডেটা অ্য়ানালিস্ট। তিনি প্রকাশ্যে শাড়ি পরে বেরোনোর কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু এতে তাঁর বন্ধুরা বিব্রত বোধ করতে পারে বলে মনে হয়েছিল চিদার। তাই তিনি সাহচর্যের জন্য মরিমোটোর শরণাপন্ন হন। এবং গত সপ্তাহেই শাড়ি পরিহিতা চিদার সঙ্গে চা এবং কেক সহযোগে আড্ডা হয় মরিমোটোর।
চিদা জানিয়েছেন, ‘বন্ধুদের সঙ্গে থাকলে মনে হয় যে আমাকে তাঁদের বিনোদন দিতে হবে। কিন্তু ভাড়া করা মরিমোটোর সঙ্গে আমি সেই প্রয়োজন বোধ করি না।’ তাই সবার বুকিং মতো শুধু সঙ্গ দেওয়াটাই মরিমোটোর কাজ। এর জন্য তাঁকে কোনও কাজই করতে হয় না। চুপচাপ বসে কফি খেলেও ঘণ্টায় পকেটে আসে প্রায় ৬ হাজার টাকা। এই কাজ করার আগে মরিমোটো একটি প্রকাশনা সংস্থায় কাজ করতেন। সেখানে প্রায়সই কিছু না করার জন্য তাঁকে তিরস্কার করা হত। তারপর থেকেই উপার্জনের ভিন্ন পথের চিন্তা শুরু করেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি ভাবতে শুরু করে যে ক্লায়েন্টদের আমি যদি আমার কিছু না করার ক্ষমতা পরিষেবা রূপে প্রদান করি তাহলে কেমন হয়।’ সেই ভাবতেই ভাবতেই সঙ্গ দেওয়ার এই ব্যবসা দাঁড় করিয়েছেন মরিমোটো। এখন এটাই তাঁর একমাত্র উপার্জনের পথ। এই রোজগার থেকেই তাঁর স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে তিনজনের পরিবার চালান। যদিও তাঁর মাসিক আয় নিয়ে তিনি খোলসা করে কিছু বলতে চাননি। তবে এখন তিনি দিনে এক কী দু’জন ক্লায়েন্টের সঙ্গে দেখা করেন। অতিমারির আগে সংখ্যাটা একটু বেশি ছিল। মরিমোটো বলছেন, ‘লোকেরা এখন মনে করতে শুরু করেছে যে আমার কিছু না করাটা খুব মূল্যবান কারণ এটি খুব প্রয়োজনীয় (অন্যদের জন্য) … তবে সত্যিই কিছু না করে ভাল। মানুষকে সব সময়ই উপযোগী হওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই।’ এই পৃথিবীতে বন্ধুত্ব খুব দামি। নিঃশব্দে পাশে থাকার লোক খুব কম মেলে। মরিমোটো সমাজে সেই কাজটাই করছে। হয়তো অনেকে মরিমোটোর জন্যই কোনও ভুল সিদ্ধান্ত শুধরে নিচ্ছে।