বিশ্লেষণ: একাদশে ভর্তির আসন বাড়ল, পরিকাঠামো তৈরি তো? কী হবে নয়া কলেজ পড়ুয়াদের?

Madhyamik and HS: উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়েছে এখন থেকে প্রত্যেক স্কুলগুলিতে ২৭৫ জন পড়ুয়া থেকে বাড়িয়ে ৪০০ জন ভর্তি হতে পারবে। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে যে প্রশ্ন সর্বাগ্রে উঠে আসছে তা হল, পড়ুয়া ভর্তির উর্ধ্বসীমা বাড়লেও রাজ্যের সব স্কুলের একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির জন্য এই পরিকাঠামো প্রস্তুত রয়েছে তো?

বিশ্লেষণ: একাদশে ভর্তির আসন বাড়ল, পরিকাঠামো তৈরি তো? কী হবে নয়া কলেজ পড়ুয়াদের?
অলংকরণ: অভিজিৎ বিশ্বাস
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 30, 2021 | 9:15 PM

মাধ্যমিকে একশো শতাংশই পাশ। আর তা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোল হতে হচ্ছে করোনা পরিস্থিতিতে জীবনের প্রথম পরীক্ষা লিখিত দিতে না পারা একুশের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের। কিন্তু সবাই পাশ তো হল। একাদশে ভর্তির কী হবে? এই প্রেক্ষিতে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়েছে এখন থেকে প্রত্যেক স্কুলগুলিতে ২৭৫ জন পড়ুয়া থেকে বাড়িয়ে ৪০০ জন ভর্তি হতে পারবে। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে যে প্রশ্ন সর্বাগ্রে উঠে আসছে তা হল, পড়ুয়া ভর্তির উর্ধ্বসীমা বাড়লেও রাজ্যের সব স্কুলের একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির জন্য এই পরিকাঠামো প্রস্তুত রয়েছে তো? প্রশ্ন আরও রয়েছে। এবার উচ্চ মাধ্যমিকে ঢালাও পাশ করা পড়ুয়াদের কলেজে ভর্তির কী হবে? এত সংখ্যক পাশ করা পড়ুয়াদের জন্য যদি কলেজের আসন সংখ্যা বাড়ানো হয় সে ক্ষেত্রেই বা কী অবস্থা হতে পারে?

কী পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত:

করোনা অতিমারীর জেরে ২০২১ সালে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। উভয়ের ফলপ্রকাশও হয়েছে বিভিন্ন মূল্যায়নের ভিত্তিতে। সেই মূল্যায়নের মাধ্যমে চলতি বছরে মাধ্যমিকে পাশ করেছে ১০০ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী। অন্যদিকে উচ্চ মাধ্যমিকে যে সামান্য সংখ্যক পরীক্ষার্থী অনুর্ত্তীর্ণ হয়েছেন, তাঁরা দাবি তুলেছেন পরীক্ষা না নিয়ে কেন ফেল করান হল। এই বিক্ষোভ-আন্দোলনে গত কয়েক দিন ধরেই অশান্ত রাজ্যের একাধিক স্কুল।

এদিকে সকল মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী পাশ করার ফলে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি নিয়ে স্বাভাবিক ভাবে একটা সংশয় তৈরি হয়েছিল। এতদিন পর্যন্ত ২৭৫ জনকে ভর্তি নিতে পারত স্কুলগুলি। এবার এক ধাক্কায় ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের জন্য একাদশ শ্রেণিতে অতিরিক্ত ১২৫ জনকে ভর্তি নিতে পারবে স্কুলগুলি বলে জানিয়েছে সংসদ। অর্থাৎ, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, স্কুলগুলিতে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আসন সংখ্যা করা হয়েছে ৪০০ জন।

কী রয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে?

সূত্রের খবর, আসন সংখ্যা বৃদ্ধির অনুমোদনের জন্য বিকাশ ভবনে আবেদন করেছিল সংসদ। বিকাশ ভবন থেকে সবুজ সংকেত মিলতেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে তারা। সেই বিজ্ঞপ্তিতে লেখা হয়েছে, ‘মাননীয়া সভাপতির নির্দেশে সকল উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যায়তনকে জানানো যাচ্ছে যে এবার ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের জন্য একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আসন সংখ্যা ২৭৫ থেকে বর্ধিত করে ৪০০ আসন সংখ্যা করা হল।’

উদ্বেগ কোথায়?

নয়া বিজ্ঞপ্তি অনুসারে দেখা যাচ্ছে ২৭৫জনের জায়গায় ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ৪০০জন পড়ুয়া কোনও স্কুলে ভর্তি হতে পারবেন। শিক্ষকদের একাংশের দাবি, এর মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রী ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন। কিন্তু এর সঙ্গেই বড় প্রশ্ন ২৭৫ জন পড়ুয়াকে জায়গা দিতেই স্কুলগুলিতে সমস্যা তৈরি হয়। সে জায়গায় ৪০০জন পড়ুয়ার জায়গা হবে কীভাবে? রাতারাতি পরিকাঠামো বৃদ্ধি কি আদৌ সম্ভব?

একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে আসন সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিকাঠামোও বাড়ানোর কী কী পরিকল্পনা রয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের? না, এখনও পর্যন্ত পরিকাঠামো বাড়ানোর কোনও কথা সরকারিভাবে ঘোষণা করেনি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। বৃহস্পতিবার একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে শুধু জানানো হয়েছে যে, একাদশ শ্রেণিতে ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তির ক্ষেত্রে আসন সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। উদ্বেগ এখানেই।

পড়ুয়া তো বাড়ল, ক্লাসঘর কোথায়?

বৃহস্পতিবার এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ্যে আসতেই শিক্ষক মহলে আলোড়ন শুর হয়েছে। প্রশ্ন তোলা হয়েছে বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির পক্ষ থেকেও। সংগঠনের বক্তব্য, ভর্তির সর্বোচ্চ সংখ্যা বাড়ানো হল তাকে তারা স্বাগত জানাচ্ছেন। কিন্তু এত বেশি পরিমাণ ছাত্রছাত্রীকে বসার জায়গা দেওয়ার জন্য গত বছর থেকে কত সংখ্যক অতিরিক্ত ক্লাস রুম তৈরি করা হয়েছে? এত পরিমাণ ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর জন্যই বা উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগে জন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে? তাছাড়া করোনা পরিস্থিতিতে আপাতত তো অনলাইন ক্লাস চলছে। সেক্ষেত্রে এত সংখ্যক পড়ুয়া বাড়লে তার পরিকাঠামোর বিষয়টিও চিন্তায় ফেলেছে শিক্ষক মহলকে।

প্রশ্ন অনেক, উত্তর অজানা:

১) প্রশ্ন রয়েছে আরও। স্কুলে পড়ুয়া সংখ্যা বাড়লে ল্যাবভিত্তিক বিষয়গুলির জন্য স্বাভাবিক ভাবেই বাড়াতে হবে ল্যাবের সংখ্যাও। সেটি নিয়ে কী ভাবনা রয়েছে? না, এখনও জানা যায়নি।

২) আসনসংখ্যা বাড়ালে সে অনুপাতে শিক্ষকসংখ্যাও তো বাড়াতে হবে। সেটি কি সম্ভব? উত্তর মেলেনি এখনও।

৩) ল্যাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট, ল্যাব অ্যাটেড্যান্ট ও অশিক্ষক শিক্ষাকর্মীর ব্যবস্থা কী ভাবে হবে, সে প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে।

৪) সর্বোচ্চ সীমা মেনে আসন বাড়ানোর সামর্থ্য কটি স্কুলের রয়েছে? এই প্রশ্নও ভাবাচ্ছে শিক্ষকদের একাংশকে।

৫) একইভাবে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা পড়ুয়াদের জন্য যদি কলেজের আসন সংখ্যা বাড়াতে হয়, সেক্ষেত্রে কী হবে?