‘বাংলায় এনআরসি হবে না’, তৃণমূলের ‘কুৎসা’ উড়িয়ে শাহি সুরেই সাফ বার্তা কৈলাসের

রাজ্যের মানুষ আসল পরিবর্তন চায়, এ কথা আরেকবার মনে করিয়ে দেন রাজ্য বিজেপির পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়(Kailash Vijayvargiya)। তিনি জানান, স্বজনপোষণ, দুর্নীতি ও অনুপ্রবেশে জর্জরিত বাংলার সাধারণ মানুষ দীর্ঘদিন ধরে এই পরিবর্তনের অপেক্ষা করেছিল। এ বার সেই পরিবর্তন আসবে।

'বাংলায় এনআরসি হবে না', তৃণমূলের 'কুৎসা' উড়িয়ে শাহি সুরেই সাফ বার্তা কৈলাসের
(ফাইল চিত্র)
Follow Us:
| Updated on: Apr 04, 2021 | 3:53 PM

কলকাতা: বিজেপির বঙ্গজয়ের লক্ষ্যে বাধা দিতে তৃণমূলের অন্যতম হাতিয়ার জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (National Register of Citizens)। এ দিকে বিজেপি(BJP)-র অভিযোগ, “সাধারণ মানুষের নাগরিকত্বের অধিকার কেড়ে নেওয়া হবে, এই ভয়ই দেখাচ্ছে রাজ্যের শাসক দল”। এ বার সেই অভিযোগের কড়া জবাব দিলেন বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়(Kailash Vijayvargiya)। রবিবার তিনি সাফ জানিয়ে দেন, গেরুয়া শিবিরের এমন কোনও পরিকল্পনা নেই। তবে নয়া নাগরিকত্ব আইন লাগু করতে যে তাঁরা আগ্রহী, সেই ইঙ্গিতও দেন তিনি।

রবিবার কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেন, “বাংলায় এনআরসি করা হবে না। তবে নির্বাচনে জয়লাভের পর ইস্তাহার অনুযায়ীই সিএএ(CAA) চালু করার ইচ্ছে রয়েছে। এটি আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। যাঁরা ধর্মের নামে হত্যালীলার হাত থেকে বাঁচতে প্রতিবেশী দেশ থেকে আমাদের দেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন, তাঁদের নাগরিকত্ব দিতে চাই আমরা।”

উল্লেখ্য, সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ(Amit Shah)-ও একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, বাংলার ক্ষমতায় এলেও এনআরসি করা নিয়ে এই মুহূর্তে কোনও পরিকল্পনা নেই। তবে বিজেপির প্রকাশিত ইস্তাহারে বলা হয়েছে যে, ক্ষমতায় এলে প্রথম ক্যাবিনেট বৈঠকেই নয়া নাগরিকত্ব আইন বা  সিএএ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ দিন সেই সুরেই কথা বললেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়।

আরও পড়ুন: আর দু’দফার পরেই সব ঘরে ঢুকে যাবে: আত্মপ্রত্যয়ী দিলীপ

শাসকদলের বিরুদ্ধে ভুল তথ্যের প্রচারের অভিযোগ এনে তিনি প্রশ্ন তোলেন যে সিএএতে বাংলা সহ দেশের প্রায় দেড় কোটি মানুষ উপকৃত হবে, তবুও তৃণমূল কেন এর বিরোধিতা করছে? একইসঙ্গে নির্বাচন কমিশন বিজেপি দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে বলে যে অভিযোগ এনেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তার পাল্টা জবাব দিয়ে তিনি বলেন, “যখন তৃণমূল পরপর দুটি নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল, তখন তো নির্বাচন কমিশনের দিকে আঙুল তোলা হয়নি। এখন নিজেদের হারের আন্দাজ করতে পেরেই এখন নির্বাচন কমিশন ও ভোটিং মেশিনকে দোষ দেওয়া হচ্ছে। এই ধরনের বোকা বোকা অভিযোগ করা হচ্ছে।”

বিধানসভা নির্বাচনে ২০০-রও বেশি আসনে জয়ী হবে বিজেপি, এই বিষয়ে তিনি আত্মবিশ্বাসী বলেই জানান কৈলাস বিজয়বর্গীয়। তবে দলের কোনও মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা না করায়, ভোটব্যাঙ্কে প্রভাব পড়বে কিনা, এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “বিজেপির বহু নেতাই রাজ্য পরিচালনের ক্ষমতা রাখেন। তবে নির্বাচন শেষের পরই এই বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” তিনি আরও যোগ করে বলেন, “আমরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে লড়ছি। আমরা কোনওদিনই মুখ্যমন্ত্রীর মুখ নিয়ে নির্বাচনে লড়াই করি না। আমাদের কাছে আদর্শই গুরুত্বপূর্ণ। ভোটে জিতলে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলেই মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী বেছে নেওয়া হবে।”

রাজ্যের মানুষ আসল পরিবর্তন চায়, এ কথা আরেকবার মনে করিয়ে দেন রাজ্য বিজেপির পর্যবেক্ষক। তিনি জানান, স্বজনপোষণ, দুর্নীতি ও অনুপ্রবেশে জর্জরিত বাংলার সাধারণ মানুষ দীর্ঘদিন ধরে এই পরিবর্তনের অপেক্ষা করেছিল। এ বার সেই পরিবর্তন আসবে। বহিরাগত প্রসঙ্গে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “বিগত ১০ বছর ধরে নিজেদের দোষগুলিকে ঢাকতেই শাসকদল বহিরাগত তত্ত্ব তৈরি করেছে। তাদের কাছে কথা বলার জন্য আর কিছু নেই।”

বিজেপির আসল পরিবর্তনের পাল্টা প্রচারে তৃণমূলের তরফে “বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়” বলে বিজ্ঞাপনী প্রচার শুরু করে। সেই প্রচারকেও এক হাত নেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়। তিনি বলেন, “বাংলার মেয়ে বলে তৃণমূল আবেগে সুড়সুড়ি দিতে চাইছে। কিন্তু এ বার তা হবে না। এটা ২০২১, এইসব কথায় এখন কোনও প্রভাব পড়ে না। নিজেদের কোনও সাফল্য না থাকায় এখন কে বহিরাগত, আর কে রাজ্যবাসী, তা নিয়ে তর্ক শুরু করেছে।”

তৃণমূলের সিন্ডিকেট সংস্কৃতি, স্বজনপোষণের রাজনীতি ও প্রশাসনকে ব্যবহার করার নীতিতে রাজ্যের সাধারণ মানুষ বিরক্ত হয়ে গিয়েছেন বলেই মনে করছেন বিজেপির শীর্ষ নেতা। তাঁর মতে, দুর্নীতি একেবারে তৃণমূল স্তরে পৌঁছে গিয়েছে এবং সেই কারণেই রাজ্যবাসী এতটা ক্ষুব্ধ। অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “অনুপ্রবেশ কেবল দেশের নিরাপত্তার জন্যই ভয়ঙ্কর নয়, একইসঙ্গে দেশের অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়ে।অনুপ্রবেশ বেড়ে যাওয়ার কারণেই স্থানীয় মানুষদের চাকরির জন্য লড়াই করতে হচ্ছে।”

বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূলের অন্যতম অভিযোগ, তারা জাত-পাতের রাজনীতি করে। এর জবাবে তিনি বলেন, “তৃণমূলই নাম পরিচয়ে রাজনীতি প্রথার সূচনা করেছে। বিজেপি ক্ষমতায় এলে সেই প্রথাতেই ইতি টানা হবে।”

বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী তালিকায় একঝাঁক নতুন মুখের দেখা মিলেছে। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই আবার তারকা প্রার্থী। দলের অন্দরে নতুনদের সঙ্গে পুরনোদের বিরোধ রয়েছে কিনা, সেই প্রশ্নের জবাবে কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেন, “এমন কোনও বিরোধ নেই। দলের মধ্যে নিয়ম-শৃঙ্খলা রয়েছে। সকলকেই সেই নিয়ম মেনে চলতে হবে। গত বছর বিধানসভা নির্বাচনের সময় আমরা ২৯৪টি আসনে যোগ্য প্রার্থী দিতে পারছিলাম না। এ বার প্রায় পাঁচ হাজারেরও বেশি মুখ ছিল, যারা ভোটে দাঁড়ানোর যোগ্য। আমরা দলের সব কর্মীদের সঙ্গেই কথা বলেছি, তাঁরা সকলেই জানিয়েছেন যে দলের জন্যই কাজ করছেন। আমরা অত্যন্ত শৃঙ্খলাবদ্ধ একটি দল, আমাদের দলের মধ্যে গণতন্ত্র রয়েছে, সকলের মত প্রকাশের স্বাধীনতাও রয়েছে।”

আরও পড়ুন: ৯০০ কোটির ‘সবেচেয়ে বড় স্ক্যাম’! ‘কয়লাকাণ্ডের টাকা গিয়েছে ভাইপোর কাছে’, অভিষেককে নিশানা বিজেপির