প্রথম ভোট: সময়টা সত্যিই আনন্দ-উৎসবের মতো ছিল
প্রথম ভোটের (First Vote) স্মৃতিচারণে চিত্রপরিচালক গৌতম ঘোষ (Goutam Ghosh)
গৌতম ঘোষ: আমরা তখন বালিগঞ্জ প্লেসে থাকতাম। বালিগঞ্জেই আমার ভোট। তখন কংগ্রেসের রাজত্ব ছিল। ১৯৬৮ সালে আমি প্রথম ভোট দিয়েছিলাম। ১৯৬৭-তে যুক্তফ্রন্ট সরকার এলো। ১৯৬৮ সালে আবার ভেঙেও গেল। সেবার খুব গণ্ডগোল হয়েছিল। আমার প্রথম ভোটকেন্দ্র ছিল বালিগঞ্জ গার্লস স্কুল। প্রথম ভোটের দিন সকাল থেকেই উত্তেজনা। তখন কলকাতা অশান্ত ছিল। একদিকে বামেদের রাজনৈতিক উত্থান অন্যদিকে বিভিন্ন পার্টির মধ্যে কলহ। এখন যা যা দেখি সেটাই যেন অন্য ফর্মে ছিল।
১৯৬৭ সাল থেকে নকশালবাড়ি আন্দোলনের উত্থান হয়। ১৯৬৯ সালে নকশালরা ময়দানে শপথ গ্রহণ করে। সেই স্মৃতি এখনও আমার মনে আছে। আমরা অনেকে দেখতে গিয়েছিলাম। এই সময়টায় কলকাতা উত্তাল ছিল। আমাদের একদল বন্ধু ভোট বয়কট করেছিল। আর আমরা আরেক দল ভোট দিয়েছিলাম। ভোট বয়কটের দলে থাকা বন্ধুরা মনে করত ‘এ আজাদি ঝুট হ্যা। এখানে ভোট দিয়ে কিচ্ছু হবে না।’
আরও পড়ুন: প্রথম ভোট : ছাপ্পা ভোট দেওয়ার জন্য রেডি ছিলাম
আমার ওই বয়সে পরিণত রাজনৈতিক চেতনা ছিল না। তবে সামাজিক ধারণা ছিল। আমার মনে হয়েছিল, একটা গণতান্ত্রিক পথে হাঁটলে ভাল হয়। সংবিধানকে আমাদের মান্য করে চলা উচিত। অবশ্য এখন মনে হয় সংবিধান ব্যাপারটাই মানুষ ভুলে যাচ্ছে। সংবিধান স্কুলে পড়ানো হয় কিনা তা-ও আমার অজানা।
আমি তখন মনে করতাম, এত বড় একটা গণতান্ত্রিক দেশে সংবিধান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। এখানে গণতান্ত্রিক উপায়ে সরকার নির্বাচিত হোক। ভোটের দিন পোলিং এজেন্টদের একটা করে বুথ বসত। সেটা খুব মজার ছিল। সব পার্টিতেই আমার একাধিক বন্ধু ছিল। কেউ হয়ত জিগ্যেস করত ‘কী রে কাকে ভোট দিবি? আমাদের স্লিপটা নিয়ে যা’। আমি তখন বলতাম– ‘এটা আমার সিক্রেট ব্যাপার!’
আরও পড়ুন: গঙ্গার ফুরফুরে হাওয়া খেয়ে প্রথম ভোট দিয়েছিলাম
প্রথম ভোটের সময়টা সত্যই আনন্দ-উৎসবের মতো ছিল। এখন ভাবি, আজকের চিত্রটা একেবারেই অন্যরকম হয়ে গিয়েছে। এখন অনেক সময় আমার বিরক্তই লাগে। আরেকটা কথা বলি, এখনও প্যান্ডেমিক পিরিয়ড চলছে। করোনা আবার বাড়ছে। অডিনেন্স জারি করে ভোটটা কি পেছানো যেত না? আমেরিকা প্যান্ডেমিকের মধ্যে ভোট করেছে বলে কি আমাদেরও করতে হবে? আমার ব্যক্তিগত ধারনা, এবারের ভোটটা পিছলে ভাল হত। কারণ, মানুষের জীবনটাই সব থেকে বড়। ভোট মানেই প্রচার, রোড শো, ভিড়। সামাজিক দূরত্বের কথা কারও মাথায় থাকছে না। অনেকের মুখে মাস্ক নেই। করোনা পরিস্থিতি আরেকটু আয়ত্বে আসার পর ভোট হলে ভাল হত।