গঙ্গার ফুরফুরে হাওয়া খেয়ে প্রথম ভোট দিয়েছিলাম

প্রথম ভোটের (First Vote) স্মৃতিচারণে সাহিত্যিক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় (Sanjib Chattopadhyay)

গঙ্গার ফুরফুরে হাওয়া খেয়ে প্রথম ভোট দিয়েছিলাম
সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Apr 18, 2021 | 1:36 PM

সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়: ভারত স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম নির্বাচন হল। সেই সময় বরাহনগর কেন্দ্রের দিকে সবার চোখ। কারণ, এখানে লড়াইটা বেশ জোরদার। একদিকে কংগ্রেসের হরেন্দ্রনাথ চৌধুরীর। তিনি আবার জমিদার। রায় বাহাদুর খেতাবপ্রাপ্ত। হরেন্দ্রনাথ বাবু ডক্টর বিধান চন্দ্র রায়ের ক্যাবিনেটে এডুকেশন মিনিস্টার হয়েছিলেন। তাঁর বিপরীতে সিপিআইয়ের জনপ্রিয় যুবনেতা জ্যোতি বসু ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। তখন ডান এবং বাম রাজনীতির বিভাজন বেশ লক্ষ্য করা যেত। বামেরা পৌঁছতে চেয়েছিলেন ব্রাত্যজনেদের কাছে। অর্থাত খেটে খাওয়া মানুষদের স্বার্থ রক্ষা করা বামেদের উদ্দেশ্য ছিল। যে কোনও দেশেই খেটে খাওয়া মানুষের সংখ্যা বেশি আর বড়লোকরা সংখ্যায় কম। এই যে আপার অ্যান্ড লোয়ার ক্লাস– এখানেই পলেটিক্সটা দুটো ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। আপারের সঙ্গে লোয়ারের লড়াই বেঁধেছিল। এটা আমরা খুব এনজয় করতাম। কারণ আমরা তো মিডিল ক্লাস!

গঙ্গার ধারে বরাহনগর ভিক্টোরিয়া স্কুল আমার প্রথম ভোটকেন্দ্র। খুব বিখ্যাত স্কুল। এই স্কুলের অনেক ছাত্র পরে নাম করেছেন। উল্টোদিকেই বেলুড় মঠ। ১৯৫২ সালে গঙ্গার ফুরফুরে হাওয়া খেয়ে প্রথম ভোট দিয়েছিলাম। সেই সময় ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া যেত। যে নির্বাচন তখন দেখেছিলাম তাতে প্রবল উত্তেজনা ছিল। অবশ্য ধাক্কাধাক্কিও ছিল। তখন তো আর এত ভোটকেন্দ্র ছিল না আজকের মতো। একজন অন্যজনের ঘাঁড়ের ওপরে উঠে পড়ত! তবে উৎসবের মেজাজ ছিল। চারদিকে কাগজের ব্যানার উড়ছে। মাথার ওপরে নানা দলের ফ্ল্যাগ। চতুর্দিকে একটা হইচই ভাব। একটা চাপা উত্তেজনা– কে জেতে কে জেতে! নির্বাচন উৎসবের সঙ্গে নিজেদের স্বার্থ কোনও ভাবেই জড়িয়ে থাকত না। কেবল মনে হত ভোট একটা ফেস্টিভ্যাল।

তখন বলা হত নির্বাচন, এখন বলা হয় ভোটযুদ্ধ! বরাহনগর থেকেই জ্যোতিবাবু প্রথম উঠে এসেছিলেন। তারপর কংগ্রেস পার্টিও দুটো ভাগে ভেঙে গেল। যেহেতু আমাদের কোনও স্বার্থ ছিল না তাই নির্বাচন ব্যাপারটা সিরিয়াসলি নিতাম না। একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে উপভোগ করতাম মাত্র। কিন্তু ক্রমে সব পালটে গেল। এখন একটা শ্রেণীর কাছে ভোট যেন জীবন-মরণের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে!

কেন্দ্র ও রাজ্যের পলিটিক্সের মধ্যে একটা সংঘাত তখনই দানা বেঁধেছিল। তবে সেসব গভীর কথা। আমরা যারা আমজনতা তাঁদের এসব দেখে মজাই লাগত। রেজাল্টের দিন আমার ভোট দেওয়া প্রার্থী জিতলেন কিনা তা দেখার জন্য কৌতূহল ছিল। হারলে হয়ত মনখারাপ হত কিন্তু জিতলে বেশ আনন্দ পেতাম। তবে সেই উত্তেজনা কিছুদিনের মধ্যেই মসৃণ হয়ে যেত। জিনিসপত্র একই দামে কিনতে হত। যে অসুবিধার মধ্যে ছিলাম সেই অসুবিধাই জীবনে ফিরে আসত। পুরোনো দিনের উৎসবের মেজাজটা ধীরে ধীরে নির্বাচন থেকে হারিয়ে গেল। এখন ইলেকশন মানেই গুলির শব্দ!