প্রথম ভোট : ছাপ্পা ভোট দেওয়ার জন্য রেডি ছিলাম

শুরু হল নতুন সিরিজ 'প্রথম ভোট' (First Vote)। আজ প্রথম ভোটের স্মৃতিচারণে সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় (Shirshendu Mukhopadhyay)

প্রথম ভোট : ছাপ্পা ভোট দেওয়ার জন্য রেডি ছিলাম
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
Follow Us:
| Updated on: Apr 18, 2021 | 1:09 PM

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়: জীবনে প্রথম ভোট দিয়েছিলাম কত সালে সেটা এখন আর মনে নেই। তবে মনে আছে ২১ বছর বয়সে প্রথম ভোটাধিকার পেয়েছিলাম। তখন ভোটার কার্ডের কোনও রকম প্রচলন ছিল না। ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজের বলতে হত। সেই অনুযায়ী লিস্ট থেকে নাম বের করে ভোট দিতে হত এবং হাতে কালি লাগিয়ে দেওয়া হত। সংস্কৃত কলেজ আমার প্রথম ভোটকেন্দ্র।

তখন ভোট লুট বা ছপ্পা ভোটের এত বেশি রমরমা ছিল না। ছাপ্পা ভোট কিছু কিছু পড়ত ঠিকই তবে সেটা নিয়ে বিশাল কোনও অভিযোগ বা নালিশ ছিল না। বেশির ভাগ মানুষ নিজের ভোট নিজেই দিতে পারত। একটা দুটো ব্যতিক্রম অবশ্য হত যে, একজনের ভোট অন্য কেউ আগেই দিয়ে দিয়েছে। তবে সেটা হয়ত দুশোতে একটা কি তিনশোতে একটা! ভোট নিয়ে এত উন্মাদনা, মারপিট, ঝগড়াঝাটি ছিল না। তখন রেডিওতে প্রচার ছিল না। টিভি আসেনি। আমরা নিরাপদে ভোট দিতে পারতাম। আর ভোট উপলক্ষ্যে খুনোখুনি, জিততে হবে বলে প্রতিপক্ষকে আক্রমণ– এসব আমরা দেখিনি।

আমি বামপন্থী ছিলাম। কিন্তু আমি একটা দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছিলাম। তাঁরা আমাকে বলেছিল– ‘ছাপ্পা ভোট দিবি?’ একথা শুনে আমার বেশ রোমান্টিক আনন্দ হয়েছিল। ছাপ্পা ভোট দেওয়ার মধ্যে যে একটা উত্তেজনা আছে, গোপনীয়তা আছে, রহস্যম্যতা আছে– সেটা টের পেলাম। আমাকে বলা হল– “তুই রেডি থাকিস। বেরিয়ে এলে আমরা হাতের কালিটা মুছে দেব। তারপর তুই আবার অন্য একজনের নামে ভোট দিয়ে আসবি।” আমি সেই অনুযায়ী তৈরি ছিলাম। কিন্তু আমাকে শেষ অব্দি আর ছাপ্পা ভোট দিতে হয়নি! বুথে একটা গণ্ডগোল হয়েছিল। তাই ছাপ্পা ভোট দেওয়ার জন্য আমাকে কেউ আর চাপাচাপি করেনি!

এটা মনে আছে, সংস্কৃত কলেজে জীবনের প্রথম ভোট দিয়েছিলাম এবং অবশ্যই কোনও বামপন্থীকে দিয়েছিলাম। ভোট দিয়ে বেরিয়ে এসে আমার খুব আনন্দ হল। আমি এখন সাবালক এবং নাগরিক– এরকম একটা বোধ হল, একটু গৌরব হল। তারপর আবার আমাদের যে-রকম জীবনযাপন, সেই জীবনেই ফিরে গেলাম।