ভোটমুখী বাংলায় সিবিআই ও সিআইডি নিয়ে প্রতিহিংসার নালিশ দু’পক্ষের, চলছে স্নায়ুর লড়াই
সব তদন্তের গতিপথ কি রুলবুক মেনেই চলছে? নাকি রাজনৈতিক নেতারাই নিয়ন্ত্রণ করছেন সব? প্রশ্ন উঠেছে।
পশ্চিমবঙ্গ: নির্বাচনের সময় এলেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে লেলিয়ে দেয় বিজেপি। কেন্দ্রের বিজেপির বিরুদ্ধে রাজ্যের শাসক দলের এই অভিযোগ বহু দিনের। এখন তাদের বিরুদ্ধেও পাল্টা ‘প্রতিহিংসা’র রাজনীতি করার অভিযোগ করছে বঙ্গ বিজেপি। অর্থাৎ, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার রেডারে যখন একের এক ঘাসফুলের নেতারা তখন রাজ্য পুলিশের তদন্তের আওতায় পদ্মফুলের নেতারাও। তদন্তের গতিপথ কি পুলিশের রুলবুক মেনেই চলছে? নাকি রাজনৈতিভাবেই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে সব? প্রশ্ন উঠেছে। উত্তরও সহজ নয়।
মঙ্গলবার মাদক পাচার-কাণ্ডে তল্লাশি চালাতে বিজেপি নেতা রাকেশ সিংয়ের কলকাতার বাড়িতে যায় পুলিশ। কিন্তু বাড়িতে ঢোকার আগেই বাধা। দেখাতে হবে আদালতের পরোয়ানা। না হলে তল্লাশি দূরের কথা, বাড়িতে ঢুকতেই দেওয়া হবে না। পুলিশকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয় রাকেশের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিআইএসএফ জওয়ানরা। এরপর আড়াই ঘণ্টার টানাপড়েন। অবশেষে বিজেপি নেতার বাড়িতে প্রবেশ পুলিশের এবং আটক করা হয় রাকেশ সিংয়ের দুই পুত্রকে। এর একটু পরেই আবার সুদূর পূর্ব বর্ধমান থেকে গ্রেফতার করা রাকেশ সিংকে। চিটফান্ড-নারদ থেকে হালের কয়লা কাণ্ড নিয়ে যখন রাজ্যজুড়ে তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই, তখন সক্রিয় তখন রাজ্য পুলিশের কাজেও দেখা যাচ্ছে পাল্টা সক্রিয়তা। ভোটমুখী বাংলায় এ যেন এক নয়া চিত্র।
সামান্য অতীতে ফেরা যাক। চিটফান্ড তদন্তে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, মদন মিত্ররা। জেরার মুখে পড়েছেন মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারী, ফিরহাদ হাকিমরা। আবার সিবিআই তদন্তের আওতায় রয়েছেন মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারী, শোভন চট্টোপাধ্যায়রা। এঁদের তিনজনই অবশ্য এখন বিজেপিতে। অন্যদিকে সৌগত রায়, মদন মিত্র, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, অপরূপা পোদ্দারের মতো নারদ মামলায় অভিযুক্তরা এখনও তৃণমূলেই আছেন। সারদা চিটফান্ড তদন্তে নথি ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগে শাসকশিবিরের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত রাজীব কুমারকে হেফাজতে নিয়ে জেরার জন্য সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে সিবিআই। আর প্রায় সব ক্ষেত্রেই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে গেরুয়া শিবির রাজনৈতিক প্রতিহিংসার খেলায় মেতেছে বলে অভিযোগ করেছে তৃণমূল।
আরও পড়ুন: পামেলা কাণ্ডে গ্রেফতার বিজেপি নেতা রাকেশ সিং
অন্যদিকে রাজ্যের পুলিশ ও সিআইডিও বিভিন্ন মামলায় বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। সেক্ষেত্রেও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের পাল্টা অভিযোগ করছে বিজেপি। মাদক পাচারের অভিযোগে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের হাতে গ্রেফতার হওয়া বিজেপি যুব মোর্চার নেত্রী পামেলা গোস্বামী ও আর এক বিজেপি নেতা রাকেশ সিংকে নিয়ে প্রায় তৃণমূলের সুরেই অভিযোগ করছেন বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। পাশাপাশি কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিত্ বিশ্বাস খুনের মামলায় মুকুল রায়, রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকারের নাম রয়েছে সিআইডির চার্জশিটে। তা নিয়েও রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ গেরুয়া শিবিরের। বিজেপির আরও অভিযোগ, তাদের প্রচুর কর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশ ভুয়ো মামলা দায়ের করেছে।
অর্থাৎ, যখন রাজ্যের শাসকদলের নেতাদের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা, তখন রাজ্য পুলিশও বসে নেই। কেন্দ্রের শাসকদলের নেতানেত্রীদের বিরুদ্ধে চলছে সমান্তরাল তদন্ত প্রক্রিয়া। জারি স্নায়ুর লড়াই। একুশের ভোটমুখী বাংলায় এটাও নতুন ছবি বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।