‘চিরশত্রু’র পাড়ায় মমতার বিরল সৌজন্য, আপ্লুত সোমেন জায়া

‘চিরশত্রুতা’র যবনিকা পতন করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ?

‘চিরশত্রু’র পাড়ায় মমতার বিরল সৌজন্য, আপ্লুত সোমেন জায়া
আমহার্স্ট স্ট্রিট ভোটের প্রচারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Apr 15, 2021 | 7:56 PM

সৌরভ গুহ, কলকাতা

৩০ জুলাই, ২০২০। সোমেন মিত্রর (Somen Mitra) মৃত্যু দিন। সেদিন অপেক্ষা করেও ‘ছোড়দা’র সঙ্গে শেষ দেখা হয়নি ‘দিদি’র। বিধানসভায় অপেক্ষা করেও একদা সতীর্থের মরদেহতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করতে পারেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। সাদা ফুলের স্তবক রেখেই বেরিয়ে আসতে হয়েছিল তাঁকে। ভোটের এমনই বিধান, কংগ্রেস নেতার মৃত্যুর এক বছরও কাটল না, সোমেন মিত্রের পাড়ায় নির্বাচনী প্রচারে হাজির মমতা। এখানেই শেষ নয়। গোটা বাংলায় যখন ‘বাংলার মেয়ের’ প্রচার চলছে, তখন আমহার্স্ট স্ট্রিটে এসে তৃণমূল সুপ্রিমোর তরফে এল বিরল সৌজন্য। ‘আমহার্স্ট স্ট্রিট সোমেন মিত্রর পাড়া’, ‘চিরশত্রু’-কে এমন সম্মানে আপ্লুত সোমেন জায়া শিখাও।

এদিন বেলেঘাটা, মানিকতলা এবং জোড়াসাঁকোর তৃণমূল প্রার্থীর হয়ে প্রচারে বেরিয়েছিলেন মমতা। সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই আমহার্স্ট স্ট্রিট গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এটা সোমেন মিত্রর পাড়া। সোমেন দা আমাদের দল করতেন।” এরপরই দলীয় প্রার্থীকে জোড়াফুল চিহ্নে জয়যুক্ত করার জন্য আহ্বান জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন: বঙ্গে শেষ তিন দফার ভোট কি একসঙ্গে? চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাল নির্বাচন কমিশন

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর এই বিরল সৌজন্য দেখে খুশি প্রয়াত প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের স্ত্রী শিখা মিত্র (Sikha Mitra)। TV9 বাংলাকে তিনি জানান, “সোমেন মিত্রর পাড়া, মুখ্যমন্ত্রীর মুখে এই কথাটা শুনে ভাল লাগল। নববর্ষের দিন এমন সৌজন্য দেখে সত্যিই ভাল লাগছে।” আরও একধাপ এগিয়ে সোমেন জায়া বলেন, “পশুপাখির তো হয় না, সৌজন্যবোধ স্রেফ মানুষেরই থাকে। রাজনৈতিক সৌজন্য না থাকার জন্যই এতো নোংরামি হচ্ছে।”

প্রসঙ্গত, সোমেন মিত্র এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক বৈরিতা ইতিহাস বন্দিত। কংগ্রেসে থাকলেও দুজনের মধ্যে যে কোনও নৈকট্য ছিল না, তা অস্বীকারের কোনও জায়গাও নেই। এমনও কথিত আছে, যুব নেত্রী থাকাকালীন তৎকালীন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের সঙ্গে তাঁর সংঘাত এতোটাই চরম ওঠে যে দল ছাড়তে বাধ্য হন মমতা। তারপর যদিও ২০০৯ সালে মমতার হাত ধরেই তৃণমূলে আসেন সোমেন। একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে দলে যোগদান, সেবছরই ডায়মন্ড হারবার থেকে জোড়াফুলের টিকিটে জিতে সাংসদ হন সোমেন মিত্র। তৃণমূলের টিকিটে জিতে বিধায়ক হন শিখা মিত্রও।

আরও পড়ুন: শীতলকুচি নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জের, সায়ন্তন বসুর কাছে জবাব তলব কমিশনের

যদিও এই সুসম্পর্কের স্থায়িত্বও দীর্ঘ হয়নি। অনতিবিলম্বেই দল ছাড়েন সোমেন। ফিরে যান কংগ্রেসে। প্রদেশ সভাপতির পদে বসে এই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আসনচ্যুত করার জন্যই আবার বিমান বসুদের (Biman Bose) সঙ্গে আঁতাত করেন মিত্র মশাই। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে সোমেন মিত্রর আকস্মিক প্রয়াণে ইতি হয় ছোড়দা আর দিদির এই চর্চিত ডুয়েলের। বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, সেই রেশ টেনেই বৈশাখী বিকেলে সৌহার্দ্যর দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ‘চিরশত্রুতা’র যবনিকা পতন করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।