এখন বক্স অফিসের কথা ভাবছি না, শুধু চাইছি মানুষ আবার হলে গিয়ে সিনেমা দেখুক: আবির সেনগুপ্ত

কিয়ারা অসম্ভব ডেডিকেটেড। কোনও স্টারসুলভ ট্যানট্রামস ওর নেই। ৯টায় ওয়ার্কশপের টাইম থাকলে কিয়ারা পনেরো মিনিট আগে চলে আসত। এতটাই পাংচুয়াল!

এখন বক্স অফিসের কথা ভাবছি না, শুধু চাইছি মানুষ আবার হলে গিয়ে সিনেমা দেখুক: আবির সেনগুপ্ত
খোলামেলা আড্ডায় 'ইন্দু কি জওয়ানি'-র পরিচালক আবির সেনগুপ্ত
Follow Us:
| Updated on: Dec 11, 2020 | 2:47 PM

রণজিৎ দে: আবির সেনগুপ্ত। মুম্বইতে থাকেন। প্রথম ছবিটা বাংলাতেই বানাতে চেয়েছিলেন: ‘যমের রাজা দিল বর’। রিলিজ নিয়ে কিছু সমস্যা হয়েছিল। একরাশ অভিমান নিয়ে ফিরে গিয়েছিলেন মুম্বই। তারপর প্রায় দু’বছরের যুদ্ধ। কিয়ারা আডবাণীকে নিয়ে বানিয়ে ফেলেছেন প্রথম হিন্দি ছবি ‘ইন্দু কি জওয়ানি’। আজ, ১১ ডিসেম্বর, দেশজুড়ে রিলিজ করছে সেই ছবি। মুম্বই থেকে আবির ফোনে আড্ডা দিলেন টিভি নাইন বাংলা ডিজিটালের সঙ্গে।

প্রশ্ন: শেষমেশ স্বপ্ন তাহলে সত্যি হল…

প্রথম ছবিতেই স্বপ্ন অনেকটা পূরণ হয়ে গিয়েছিল। তবে হ্যাঁ, সব পরিচালকেরই বলিউডে ছবি করার একটা স্বপ্ন থাকে, আমারও ছিল। স্বপ্নটা এবার ষোল আনা সত্যি হল।(হাসি)

প্রশ্ন: কত বছর অপেক্ষা করতে হল?

‘ইন্দু কি জওয়ানি’ করতে আমায় খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। ‘যমের রাজা দিল বর’-এর পর, ২০১৬-এ, আমি মুম্বইয়ে ফিরে আসি। তারপর অনেকগুলো গল্প নিয়ে বেশ কয়েকটা স্ক্রিপ্টও লিখি। আমি ঠিকই করে ছিলাম, একটা স্ক্রিপ্ট নিয়ে প্রযোজকদের কাছে খুব বেশি ঘোরাঘুরি করব না। তাই অনেকগুলো স্ক্রিপ্ট রেডি করে রেখেছিলাম। কিন্তু আমার কপাল ভাল, ‘ইন্দু কি জওয়ানি’-র স্ক্রিপ্টটা এক চান্সেই পছন্দ হয়ে যায় প্রযোজকদের। ২০১৮-র ডিসেম্বরে আমি স্ক্রিপ্টটা ওঁদের শোনাই। ২০১৯ জানুয়ারিতেই ওঁরা আমায় কনর্ফাম করেন।

প্রশ্ন: বলিউডে শুরুটা তো জমিয়ে হল, প্রথম ছবিতেই কিয়ারা আডবাণির মতো স্টার আপনার ছবির নায়িকা…

স্ক্রিপ্ট লেখার সময় স্টার, কাস্টিং নিয়ে সত্যিই কিছু ভাবিনি। তবে লিখতে-লিখতে মনে হয়েছিল, কিয়ারার মতো একটা মুখ পেলে ভাল হয়। বন্ধু-বান্ধবদেরও বলতাম। কিন্তু সেটাই যে সত্যি হয়ে যাবে, ভাবিনি। এটা আমার বাংলা ছবির ক্ষেত্রেও হয়েছিল। খুব চেয়েছিলাম, আবির চট্টোপাধ্যায়ের মতো দেখতে কাউকে যদি পাই। শেষমেশ আবির চট্টোপাধ্যায়ই চরিত্রটা করেন।

abir sengupta

স্ক্রিপ্টে মগ্ন পরিচালক আবির সেনগুপ্ত

কাজ করতে গিয়ে কিয়ারা সম্পর্কে নতুন কী জানলেন?

কিয়ারাকে তো আমি আগে চিনতাম না। ভাবিওনি ওর সঙ্গে কাজ করব। খুব ক্যাজুয়াল একটা মিটিং হয়েছিল আমাদের। আমি তো জাস্ট একটা ‘হাই’ বলেই মাথা নিচু করে স্ক্রিপ্টটা পড়তে শুরু করে দিয়েছিলাম। তারপর ইন্টারভ্যালে যখন মাথা তুললাম, দেখলাম কিয়ারা মিট-মিট করে হাসছে। বুঝলাম স্ক্রিপ্টটা ওর পছন্দ হয়েছে। দু’দিনের মধ্যেই ও আমায় কনর্ফাম করল। কিয়ারা অসম্ভব ডেডিকেটেড। কোনও স্টারসুলভ ট্যানট্রামস ওর নেই। ৯টায় ওয়ার্কশপের টাইম থাকলে কিয়ারা পনেরো মিনিট আগে চলে আসত। এতটাই পাংচুয়াল!

প্রশ্ন: ছবিতে নায়ক-নায়িকার আলাপ হচ্ছে তো ডেটিং অ্যাপে। আপনার কাছে ভার্চুয়াল প্রেম কতটা মজার বা কতটা রিস্কি?

ভার্চুয়াল প্রেম আমার কাছে খুব এক্সসাইটিং। কয়েক বছর আগে আমার এক বন্ধুর একটি মেয়ের সঙ্গে আলাপ হয় ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে।পরে তারা বিয়েও করে। এই ঘটনাটা আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়।

প্রশ্ন: এখান থেকেই কি আপনি ‘ইন্দু কি জওয়ানি’-র প্লট খুঁজে পান?

একদমই। এরপর থেকেই আমি ডেটিং অ্যাপগুলো নিয়ে নাড়াঘাঁটা শুরু করি। প্লটটা মাথায় চলে আসে।

প্রশ্ন: দিল্লিতে মেয়েদের ওপর ক্রাইম যে বাড়ছে, সেটা নিয়ে একটা ডায়লগ ছিল ছবিতে। কিন্তু সেন্সর কাঁচি চালিয়ে দিল! সত্যি কথাটা বলতে পারলেন না বলে খারাপ লাগছে না?

না, খুব একটা খারাপ লাগছে না…

প্রশ্ন: সে কী! কম্প্রোমাইজ করলেন?

না, কম্প্রোমাইজের তো কিছু নেই! একটা ডায়লগ জাস্ট কেটে দিয়েছে। এতে গোটা ছবিটার মানে তো বদলে যাচ্ছে না! আমি যা বলতে চেয়েছি, তাই-ই বলতে পেরেছি। তাহলে সমস্যা কোথায়?

প্রশ্ন: তবু…

শুনুন, এটাও তো ঠিক, সোশ্য়াল মিডিয়ায় এখন যে যা খুশি তাই-ই বলছে, কাউকে ট্রোল করতে ছাড়ছে না! সত্যি যদি একটা ডায়লগ নিয়ে পরে কোনও সমস্যা তৈরি হয়, তার দায় কে নেবে? এতে তো সিনেমাটারই ক্ষতি। তারচেয়ে বরং যা হয়েছে, ভাল হয়েছে।

kiara advani and abir sengupta

কিয়ারার সঙ্গে পরিচালক

প্রশ্ন: সব বিগ বাজেট ছবি যেখানে ওটিটিতে রিলিজ করছে, সেখানে আপনার ছবি হলে রিলিজ করছে, একটু বেশি রিস্কি হয়ে যাচ্ছে না?

রিস্ক তো নিতেই হবে। অন্য় সময়ে একদিনে হয়ত ছ’টা ছবি রিলিজ করে! তখন হল পেতে, ঠিকঠাক শো-টাইমিং পেতে খুব অসুবিধা হয়। সেটাও তো রিস্ক! আমরা তো এখন বক্স অফিসের কথা ভাবছি না। আমরা শুধু চাইছি মানুষ আবার হলে গিয়ে সিনেমা দেখুক। আর মানুষকে হলমুখী করতে হলে নতুন ছবি তো রিলিজ করতেই হবে।

প্রশ্ন: আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে ইন্ডাস্ট্রির দায়িত্ব আপনি একাই কাঁধে তুলে নিয়েছেন! বক্স অফিসের কথাও ভাবছেন না!

এই মুহূর্তে অতশত ভাবছি না। ওটিটিতে পরে তো লোকজন দেখতে পাবেই। আমি এখন শুধু চাইছি মানুষ আবার হলে গিয়ে সিনেমা দেখুক।

প্রশ্ন: হিন্দি ছবি করার এটা সুবিধা বলুন। বাংলা ছবি বানালে তো এমন করে ভাবতে পারতেন না?

(একটু ভেবে) তা হয়ত ঠিক।

প্রশ্ন: বলিউডে একটা ছবি করতে গিয়ে কতটা কম্প্রোমাইজ করতে হল?

আমায় সত্যি কোনও কম্প্রোমাইজ করতে হয়নি…

প্রশ্ন: কী বলছেন! সবাই যে বলে বলিউড নেপোটিজমের আখড়া! আর আপনি তো একেবারাই আউট সাইডার!

কার সঙ্গে কী হয়েছে আমি জানি না। আমি শুধু আমারটা বলতে পারি। কাজ পেতে আমার কোনও অসুবিধা হয়নি। আমি কোনও পার্টিতে যাই না। কোনও ফিল্মি সার্কলও আমার নেই। তা-ও তো কাজ করছি আমি। প্রথম ছবি করতে আমায় সত্যি সেইভাবে স্ট্রাগল করতে হয়নি। এত বছর মুম্বই থেকে আমি এটুকু বুঝেছি, তুমি কাজের লোক হলে, বলিউড তোমায় ফেরাবে না।

প্রশ্ন: কিন্তু আপনি কি বাংলা ছবি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন?

না না, একেবারেই না। সুযোগ এলে কেন বাংলা ছবি করব না?

প্রশ্ন: বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে আপনার তো অনেক অভিযোগ ছিল…

‘যমের রাজা দিল বর’ রিলিজ নিয়ে অনেক সমস্যা তৈরি হয়েছিল। আমায় হল দেওয়া হচ্ছিল না, কাস্টদের প্রমোশন করতে বারণ করা হয়েছিল। এগুলো আমার একদমই ভাল লাগেনি। তবে এখন আর কোনও অভিমান বা অভিযোগ কিছুই নেই। হয়ত নতুন ছিলাম বলে ফেস করেছিলাম।

প্রশ্ন: তাহলে আর বাংলা ছবি করলেন না কেন? করছেন না কেন?

আসলে বাংলা ভাষাটার ওপর আমার খুব একটা দখল নেই। সময় নিয়ে যে একটা বাংলাতে স্ক্রিপ্ট লিখব, সেই সময়টুকুই আমি পাচ্ছি না। আর আমি অন্য কারও স্ক্রিপ্টে কাজও করতে পারি না। তাই-ই একটু সময় নিচ্ছি।

প্রশ্ন: বলিউডে ডেবিউ, পায়েল সরকার অভিনন্দন জানালেন?

না, পায়েল কেন! আবির (চট্টোপাধ্য়ায়)-ও তো জানায়নি। আসলে আমার কারওর সঙ্গেই কোনও যোগাযোগ নেই। তাই আশাও করি না।