‘ফিল্ম উইদ ইন ফিল্ম’-এর এক স্মার্ট উপস্থাপনা

অনুরাগ কাশ্যপের লেখা বুদ্ধিদীপ্ত সংলাপ। সিনেম্যাটোগ্রাফিতে স্বপ্নীল সোনাওয়ানে। এক চেজিং সিনে ফোকাস এতটুকুও খেই হারায়নি।

‘ফিল্ম উইদ ইন ফিল্ম’-এর এক স্মার্ট উপস্থাপনা
'এক ভার্সেস একে'
Follow Us:
| Updated on: Jan 23, 2021 | 6:42 PM

একের সঙ্গে অন্যে একের লড়াই।

এক দৃশ্যের গল্প বলতে হয়। স্টেজে দাঁড়িয়ে অনিল কাপুর (একে)। অনুষ্ঠান চলছে। স্টেজের নীচে দাঁড়িয়ে প্রচুর মানুষ। তাঁরা ‘রাম লক্ষ্ণণ’ ছবির ফ্যান। বারবার চাইছেন তিন দশক আগে ‘মাই নেম ইজ লক্ষ্মণ’-গানে অনিল ‘ধি না ধিন ধা’-তে দেদার নাচুন। কিন্তু অনিল চাইছেন না। তাঁর মেয়ে অপহৃত। তিনি ভেঙে পড়েছেন। তাঁর চোখেমুখে আকুতি। এমন একজনকে খুঁজছেন যে মেয়েকে মুখ চেপে ধরে এক ট্যাক্সিতে তুলেছে। আর এই গোটা কর্মকাণ্ডের মাথা আরেক একে, অনুরাগ কাশ্যপ। যিনি স্টেজের নীচে দাঁড়িয়ে গোটা ব্যাপারটার মজা নিচ্ছেন এবং তাঁর তত্ত্ববধানে একটি মেয়ে গোটা পরিস্থিতি শুট করছেন। অনিল কাপুর স্টেজে শেষ পর্যন্ত পারফর্ম করেন এবং যেভাবে রাগ-ঘেন্না-দুশ্চিন্তা মিলেমিশে বেরিয়ে আসে তাঁর পারফর্ম্যান্সে, তা এক শব্দে ‘ঝকাস’!

মাত্র ১০ ঘণ্টা। এবং এই সময়টুকুর মধ্যে নিজের মেয়েকে খুঁজে বের করার জন্য এক অভিনেতা-বাবার স্ট্রাগল এ ছবির ছত্রে-ছত্রে ঠিকরে বেরিয়ে এসেছে। এক দিকে ক্যামেরা রোল হচ্ছে। ‘ফিল্ম উইদ ইন ফিল্ম’ বলতে দর্শক যা বুঝে এসেছে, তা ভেঙেচুরে দিয়েছেন পরিচালক বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানে।

 

অনুরাগ এবং অনিল।

 

দুই সত্ত্বার বিরোধিতা। এক অভিনেতা (অনিল কাপুর) যিনি একসময়ে ব্লকবাস্টার মাতিয়ে দিয়েছেন। আরেকজন পরিচালক (অনুরাগ কাশ্যপ) যাঁর সিনেমা দেখার জন্য সমালোচকেরা মুখিয়ে থাকে। ইংরেজিতে ‘ক্রিটিক্যালি অ্যাক্লেমড’ পরিচালক। কে বড়?

যে অভিনেতা সুপারহিট না যাঁর পরিচালিত ছবি বহু চর্চিত?

এক টক শো-তে পরিচালকের সঙ্গে অভিনেতার উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়। বাকবিতণ্ডা। এবং অভিনেতার মুখে জলের গ্লাস ছুড়ে মারা, ঠিক এখান থেকে যে গল্পের শুরু এবং শেষ হয় এমন এক মুহূর্তে যা ‘ফিল্ম উইদ ইন ফিল্ম’-এর ক্লাইম্যাক্স সিনে। যেখানে বন্দুকের নলের মুখোমুখি হতে হয় দু’জনকে।

 

 

অনিল কাপুর অভিনেতা। আর অনুরাগ পরিচালক-অভিনেতা। কিন্তু এ ছবিতে অনুরাগ কিংবা অনিল দু’জনেই ‘ন্য়াচেরাল অ্য়াক্টিং’-এর যে উৎকর্ষতা ছুঁয়েছে, তা আবারও অনিলকে উদ্ধৃত করতে চাইলে ‘ঝকাস’। অনিল অভিনয় করেছেন অনিল কাপুর-এর চরিত্রে এবং অনুরাগ অনুরাগ কাশ্যপ হয়েছেন। তা-ই এতটুকুও অন্য হয়ে ওঠার চেষ্টা করেননি দু’জন। শুধু অনিল-অনুরাগ নন, যাঁরা অভিনয় করেছেন, তাঁর প্রত্যেকে বাস্তবের নাম-ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। তবে বাড়তি পাওনা ছোটখাটো অনুভূতি, অভিব্যক্তি কোনও সংলাপে নয়। অভিনয়ে প্রকাশ পেয়েছে।

 

 

অনুরাগ কাশ্যপের লেখা বুদ্ধিদীপ্ত সংলাপ। সিনেম্যাটোগ্রাফিতে স্বপ্নীল সোনাওয়ানে। এক চেজিং সিনে ফোকাস এতটুকুও খেই হারায়নি। এবং যেভাবে একটি ডকুমেন্টারি শুট হয়, ঠিক তেমন করে সে-ই সিন দৃশ্যায়িত হয়েছে, তা প্রশংসনীয়। ছবির মিউজিক করেছেন এক বাঙালি প্রবাদপ্রতিম পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর মেয়ে অলোকানন্দা। ছবির গল্প না বলে ছবি প্রসঙ্গে যা বলা যায়, ফিল্ম উইদ ইন ফিল্মের এক স্মার্ট উপস্থাপনা।

 

একে ভার্সেস একে

 

পরিচালক বিক্রামাদিত্য মোতওয়ানে

গল্প অবিনাশ সম্পথ

সংলাপ অনুরাগ কাশ্যপ

অভিনয় অনিল কাপুর, অনুরাগ কাশ্যপ, সোনম কাপুর, যোগিতা বিহানি, হর্ষবর্ধন কাপুর

সিনেমাটোগ্রাফার স্বপ্নীল সোনাওয়ানে

মিউজিক  অলোকানন্দা দাসগুপ্ত