Baths in Winter: সাবধান! শীতকালে বীরত্ব দেখিয়ে ঠান্ডা জল গায়ে ঢাললে হতে পারে আচমকা স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক!
Cold Water Baths:‘শীতকাল তো কী হয়েছে! গায়ে ঠান্ডা জলই ঢালব’— এই ভেবে অনেকেই গায়ে শীতল জল ঢালেন। জানলে অবাক হবেন, এইভাবে শীতকালে কনকনে জলে স্নানের পরিণতি হতে পারে মারাত্মক।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতকালে হার্ট অ্যাটাকের (Heart Attack) সমস্যা কিন্তু মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঠান্ডার (Winter Season) প্রভাবে আমাদের দেহের রক্তবাহী নালিকাগুলি সংকুচিত হয়ে যায়। এর ফলে রক্তচাপ খানিকটা বেড়েও যায়। এর ফলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ( Stroke) ঝুঁকিও কিঞ্চিৎ বৃদ্ধি পায়। অথচ এই শীতকালেই বহু লোক গায়ে ঠান্ডা জল (Cold Water) ঢেলে স্নান করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। হ্যাঁ, ঠান্ডা জলের কিছু স্বাস্থ্যগুণ অবশ্যই রয়েছে। ঠান্ডা জল বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। ব্যথা হ্রাস করে, স্ট্রেস, ফোলা ও ক্লান্তি দূর করতেও কাজে আসে।
অথচ হেলথ এক্সপার্টরা বলছেন, ঠান্ডা জলের এত গুণ থাকলেও শীতকালে গায়ে-মাথায় ঠান্ডা জল ঢালার আগে সতর্ক হন। কারণ ঠান্ডা জল থেকে স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়! হার্ট অ্যাটাক অথবা স্ট্রোক তখনই হয় যখন হার্টের পেশিতে সঠিকভাবে রক্ত প্রবাহিত হয় না বা মস্তিষ্কের কোষে রক্তবাহী নালিতে জমাট রক্তের কণার উপস্থিতির কারণে ব্রেনে রক্তসঞ্চালন ব্যাহত হয়। এর ফলে হার্টের পেশিতে ও মস্তিষ্কের কোষে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। ঘটে যায় অঘটন।
হার্ট অ্যাটাক কিংবা স্ট্রোক হওয়ার পিছনে একাধিক রিস্ক ফ্যাক্টর থাকে। উদাহরণ হিসেবে বয়স, পারিবারিক ইতিহাস, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা, রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরলের মাত্রার কথা বলা যায়। এছাড়া জীবনযাত্রার ধরনও কিছু কিছু ক্ষেত্রে দায়ী থাকে। এই রকমই নেতিবাচক জীবনশৈলী হল শীতকালে ঠান্ডা জলে স্নান করার অভ্যেস!
কীভাবে ঠান্ডা জল সমস্যা তৈরি করে?
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হার্টের সমস্যা আছে এমন ব্যক্তির দেহে হঠাৎ করে ঠান্ডা জল পড়লে তা নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে। ঠান্ডা জল শরীরে শক দেওয়ার মতো কাজ করে। শীতল জলের প্রভাবে ত্বকে উপস্থিত রক্তবাহী নালিকাগুলি হঠাৎ করে সংকুচিত হয়ে যায়। এর ফলে সমগ্র শরীরে রক্তপ্রবাহের গতি ঢিমে হয়ে যায়। এমতাবস্থায় ওই ব্যক্তির হার্ট শরীরের সব জায়গায় রক্ত পৌঁছে দেওয়ার জন্য আরও বেশি মাত্রায় রক্ত পাম্প করতে চায়। বেড়ে যায় হৃৎস্পন্দন। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ এবং স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এভাবে ঠান্ডা জলে স্নান করার কারণে কম সময়ের মধ্যে অত্যন্ত দ্রুত রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার কারণে স্ট্রোক হওয়ার ঘটনাও বিরল নয়।
শীতকালে কীভাবে সাবধানে থাকবেন?
চিকিৎসকরা বলছেন, ব্রেন স্ট্রোকের কারণে শরীরে দেখা দিতে পারে পক্ষাঘাত। এর ফলে একজন সুস্থ ব্যক্তিও শয্যাশায়ী হয়ে যেতে পারেন। প্রতি বছর প্রায় ১৮ লক্ষ ব্রেন স্ট্রোকের ঘটনা ঘটে। শীতকালে ব্রেন স্ট্রোক থেকে বাঁচার জন্য রইল কিছু টিপস—
ঠান্ডা জলে স্নান এড়িয়ে চলুন: গরম জলে স্নান করতে সমস্যা হলে ঈষদুষ্ণ জলে স্নান করুন।
নিজেকে উষ্ণ রাখুন: শীতকালে বারংবার অসুস্থ হয়ে পড়ার মতো ঘটনা ঘটলে যথেষ্ট মাত্রায় গরম জামকাপড় পরুন। বিশেষ করে ঘরের বাইরে বেরলে কান, মাথা ঢেকে নিন। পরুন সোয়েটার বা জ্যাকেট।
শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকুন: প্রতিদিন ৩০ মিনিট এক্সারসাইজ করুন। আধঘণ্টা ছুটতে পারেন, করেত পারেন জগিং। হালকা এরোবিক এক্সারসাইজ যথেষ্ট কাজে আসে। এছাড়া করতে পারেন যোগা। ঘরের অন্দরেও হাত-পা ছুড়ে এক্সারসাইজ করা যায়। আবার নাচতে ইচ্ছে হলে নাচুন। করুন ধ্যান। মোট কথা শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকুন।
শীতে স্বাস্থ্যকর খাদ্য খান: শীতকালে তাজা শাকসব্জি পাওয়া যায় যথেষ্ট মাত্রায়। মেলে রঙিন ফলও। তাই মরশুমি টাটকা ফল, সব্জি খান। এড়িয়ে চলুন ভাজা, চর্বিযুক্ত এবং প্রসেসড ফুড। এছাড়া বেশি মাত্রায় মিষ্ট খাদ্যও এড়িয়ে যেতে হবে। নিয়ম মেনে চললে রক্তে সুগারের মাত্রার ওঠানামা কম হবে। ফলে ডায়াবেটিস থাকলেও সমস্যায় পড়তে হবে না। এছাড়া রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রাও থাকবে নিয়ন্ত্রণে। সবসময় টাটকা এবং গরম খাবার খান। খাদ্যে অবশ্যই আদা যোগ করুন।
হেলথ চেকআপ: ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, কিডনির সমস্যা থাকলে নিয়মিত হেলথ চেকআপ করান। পরিস্থিতির দিকে খেয়াল রাখুন। ওষুধ খেয়ে অসুখগুলি নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম নয়: পরিশ্রম করুন, তবে বুঝেশুনে। শরীরে দিচ্ছে না বুঝেও এক্সারসাইজ করতে যাওয়া মূর্খামি হতে পারে হার্টের রোগীর পক্ষে।
অ্যালকোহল এড়ান: মদ্যপানের অভ্যেস থেকে শরীরে নানাবিধ সমস্যা দেখে দিতে পারে যা বাড়িয়ে দেয় হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের আশঙ্কা।
ধূমপান ত্যাগ করুন: তামাক সেবন ও ধূমপানের অভ্যেস থেকে রক্তবাহী নালিকা সংকুচিত ও শক্ত হয়ে যায়। শীতকালে এই সমস্যা বেড়ে গিয়ে যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটিয়ে দিতে পারে। তাই এখনই ধূমপানের অভ্যেস ত্যাগ করুন। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।