Chris Hemsworth: ভুলে যাওয়ার অসুখের জিন রয়েছে ক্রিস হেমসওয়ার্থের দেহে! অভিনয় ছেড়ে দেবেন তিনি? কী এই অসুখ?

Early Signs of Alzheimer: সম্প্রতি হলিউড অভিনেতা ক্রিস হেমসওয়ার্থ জানতে পেরেছেন, তিনি বহন করছেন এপিওই৪ জিনের দু’টি প্রতিলিপি! বিভিন্ন গবেষণা বলছে, এই জিনের উপস্থিতি অ্যালঝাইমার্স ডিজিজ-এর আশঙ্কা বাড়ায়। অ্যালঝাইমার্সের রোগীর স্মৃতি ধীরে ধীরে লোপ পেতে থাকে। কেন আর কাদের হয় এই অসুখ?

Chris Hemsworth: ভুলে যাওয়ার অসুখের জিন রয়েছে ক্রিস হেমসওয়ার্থের দেহে! অভিনয় ছেড়ে দেবেন তিনি? কী এই অসুখ?
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 21, 2022 | 9:00 AM

মার্ভেল স্টুডিওর (Marvel Studio) ব্লু আয়েড বয়— থর ওরফে ক্রিস হেমসওয়ার্থ (Chris Hemsworth) সম্প্রতি জানিয়েছেন এক দুঃসংবাদ। অভিনেতা বলেছেন, ভবিষ্যতে তাঁর অ্যালঝাইমার্স ডিজিজ (Alzheimer) হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে! তিনি জানিয়েছেন, সাধারণ কতকগুলি টেস্ট করানোর সময়েই তিনি জানতে পারেন জিনগত কারণেই (Genetic Reason) অ্যালঝাইার্সে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে তাঁর। কারণ তিনি এপিওই৪ জিনের দু’টি প্রতিলিপি বহন করছেন! বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এই জিনের উপস্থিতি অ্যালঝাইমার্সের ঝুঁকি বাড়ায়। এক্সট্র্যাকশনের-এর অ্যাকশন হিরো এও বলেছেন, জিন থাকা মানেই যে রোগ হবে তা নয়। তবে অসুখটি হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয় জিন। তবে কি তিনি অভিনয় ছেড়ে দেবেন? না, তিনি অবসর নেওয়ার কথা মোটেই ভাবছেন না। প্রশ্ন হল অ্যালঝাইমার্স অসুখটি কী?

অ্যালঝাইমার্স—

স্নায়ুর ক্ষয়জনিত অসুখ হল অ্যালঝাইমার্স ডিজিজ। এই অসুখ সারানো যায় না। এই রোগে ব্রেনের কোষগুলি মারা যেতে থাকে ও ব্রেনের কার্যকারিতা কমতে থাকে, ব্রেন ক্রমশ সংকুচিত (অ্যাট্রফি) হতে থাকে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ডিমেনশিয়া রোগের অধীনে পড়ে অ্যালঝাইমার্স। ডিমেনশিয়া হলে মানুষের চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতা লুপ্ত হতে থাকে। কোনও জটিল ভাবনাই রোগী ভাবতে পারেন না। পরিকল্পনা করে সহজ কাজগুলিও করতে পারেন না। ভাষার ব্যবহার, সহজ গণিতও তার পক্ষে করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। অসুখের এক পর্যায়ে রোগী নিজের বাড়ির রাস্তাও ভুলে যান। এমনকী তাঁর দিক সম্পর্কেও জ্ঞান লোপ পায়! অর্থাৎ নিজের ঘরে দাঁড়িয়ে তিনি ভুলে যান বাথরুম কোনদিকে বা রন্নাঘর কোনদিকে! স্মৃতি লোপ পেতে থাকে। নিকটাত্মীয়দের চেহারা ভুলে যান। তাঁদের স্মৃতিও ভুলে যেতে থাকেন। ধীরে ধীরে নিজের থেকে খাওয়া দাওয়া এমনকী পায়খানা-বাথরুম করতেও ভুলে যান!

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যত ব্যক্তি ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হন তাঁদের ৮০ শতাংশের বয়স ৭৫ বা তার বেশি। অর্থাৎ অসুখটি বয়সজনিত। তবে ৭৫ বছর বয়সের আগেও কেউ কেউ অসুখটিতে আক্রান্ত হতে পারেন।

চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ডিমেনশিয়ার নানা ভাগ। তার মধ্যে একটি হল অ্যালঝাইমার্স। অ্যালঝাইমার্স নিয়ে বেশি আলোচনা হয় কারণ এই অসুখে রোগীর স্মৃতি লোপ পেতে থাকে। তবে আরও নানাভাবে ডিমেনশিয়া প্রকাশ পেতে থাকে যেমন সাধারণত হিসেব করতে না পারা, পরিকল্পনা করে সহজ কাজ করতে না পারা, ভাষার ব্যবহার ভুলে যাওয়া, মেজাজের পরিবর্তন ইত্যাদি। তবে অসুখ যত এগতে থাকে, সবধরনের সমস্যাই একসঙ্গে রোগীকে আক্রমণ করে।

চিকিৎসকরা বলছেন, অ্যালঝাইমার্সের লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে সাম্প্রতিক স্মৃতিভ্রম দিয়ে। অর্থাৎ রান্নায় নুন দিতে বারংবার ভুলে যাওয়া বা বাজার করতে গিয়ে টাকা পয়সার হিসেব মেলাতে না পারা, একদিন আগের কথা বা সকালের কথা বিকেলে মনে করতে না পারার মতো ঘটনা একাধিক বার ঘটলে সতর্ক হতে হবে রোগীর আত্মীয়দের। কারণ ডিমেনশিয়া বা অ্যালঝাইমার্সের রোগী কিন্তু নিজের সমস্যা নিজে বুঝতে পারেন না!

কাদের ঝুঁকি বেশি?

৬০ বছর বয়সের মাঝামাঝি সময়ে অসুখটির লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। মূলত বয়স এবং তার জন্য হওয়া স্নায়ুর ক্ষয়ই অসুখটির পিছনে মূল কারণ। ৬৫ বছর বয়স পৌঁছানোর পরে প্রতি ৫ বছরে অ্যালঝাইমার্স হওয়ার ঝুঁকি দ্বিগুণ হতে থাকে।

পরিবারে অ্যালঝাইমার্স হওয়ার ইতিহাস থাকলে অসুখটি হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। অর্থাৎ কোনও পরিবারের সুস্থ ব্যক্তির বাবা, মা, ভাই বা বোনের অ্যালঝাইমার্স থাকলে তাঁরও রোগটি হওয়ার আশঙ্কা যথেষ্ট বেশি থাকে। তবে বংশগতির সঙ্গে পরিবেশগত প্রভাবও রয়েছে।

জিনের প্রসঙ্গে বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, মোটমুটি দুই ধরনের জিনের উপস্থিতির সঙ্গে অ্যালঝাইমার্স হওয়ার ঝুঁকির সংযোগ মিলেছে! প্রথমটি হল ‘ঝুঁকি বৃদ্ধিকারক জিন (রোগটি হওয়ার ঝঁকি বাড়ায়)’ এবং ‘নিশ্চিতকরণ জিন (এই জিন থাকার কারণে অসুখটি হতে পারে)’। দেখা গিয়েছে ১ শতাংশেরও কম ক্ষেত্রে অ্যালঝাইমার্স হওয়ার পিছনে সরাসরি দায়ী থাকতে পারে ‘নিশ্চিতকরণ জিন’।

বিজ্ঞানীরা বোঝার চেষ্টা করছেন, স্বাস্থ্যকর জীবনশৈলী বেছে নিয়ে এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখলে ডিমেনশিয়া এবং অ্যালঝাইমার্স প্রতিরোধ করা যায় কি না।

অন্যান্য সমস্যা—

মস্তিষ্কে আঘাত: মস্তিষ্কে চোট কিন্তু ভবিষ্যতে ডিমেনশিয়ার কারণ হতে পারে! তাই দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে গাড়ি চালানোর সময় সিটবেল্ট পরুন। বাইক চালানোর সময় হেলমেট পরতেও ভুলবেন না। এছাড়া বাড়ির মধ্যে বাথরুমে পড়ার ঘটনা বেশি দেখা যায়। তাই বাথরুমে পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পেতে দেওয়ালে হ্যান্ডেল লাগান।

হার্ট-হেড কানেকশন: কিছু কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে ব্রেন ও হার্টের স্বাস্থ্যের মধ্যে নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। অবশ্য তার কারণও রয়েছে। কারণ হার্ট সঠিকভাবে পাম্প করে বলেই শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্ত পৌঁছতে পারে। ব্রেনও এমন একটি অঙ্গ যা হার্টের কাছে রক্তের জন্য ঋণী! তাই হার্ট ও শরীরের বিভিন্ন রক্তবাহী নালীগুলিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হলে বিভিন্ন অঙ্গে সঠিকভাবে রক্ত পৌঁছবে না। রক্তবাহী নালীর সমস্যা তৈরি হতে পারে বিভিন্ন অবস্থার জন্য যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, অতিরিক্ত কোলেস্টেরল ইত্যাদি। এই ধরনের অবস্থার কারণে স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। স্ট্রোক কিন্তু ভাসকুলার ডিমেনশিয়ার পিছনে অন্যতম প্রধান কারণ। অতএব ডিমেনশিয়া এবং অ্যালঝাইমার্স প্রতিরোধ করতে হলে উপরিউক্ত অবস্থাগুলি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

স্বাস্থ্যকর বয়ঃবৃদ্ধি: চিকিৎসকরা বলছেন বয়স বাড়লেও আনন্দে বাঁচার চেষ্টা করুন। স্বাস্থ্যকর খাবার খান। মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখুন। বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডা দিন। আত্মীয়স্বজনের বাড়ি যান, ঘুরে আসুন। গল্প করুন। তামাক সেবন এড়িয়ে চলুন। মদ্যপান করবেন না। এক্সারসাইজ করুন নিয়মিত। বই পড়ুন। খবরের কাগজ পড়ুন। খবর নিয়ে আলোচনা করুন। পাজল খেলুন। শব্দছক করুন। মোট কথা ব্রেনকে ব্যস্ত রাখুন। অসুখটিকে অনেকাংশেই প্রতিরোধ করা সম্ভব এভাবে।