Alopecia Areata: অস্কারের সম্ভ্রান্ত মঞ্চ নতুন করে চেনাল টাকপোকার শারীরিক ও মানসিক কষ্ট
Alopecia Areata Treatment: রোগের চরিত্র অনুযায়ী সাধারণ অ্যালোপেসিয়া অ্যারিয়েটা থেকে রোগী যত অ্যালোপেসিয়া অ্যারিয়েটা টোটালিসের দিকে এগোতে থাকেন, ততই জটিল হয় তাঁর চিকিৎসা ও শারীরিক অবস্থা
নন্দন পাল
অসুখ। শব্দটাই বলে সুখ নেই শরীরে, নেই মনে। আছে শুধুই যন্ত্রণা। সম্প্রতি জনসমক্ষে এল একটি রোগের নাম: অ্যালোপেসিয়া অ্যারিয়েটা (Alopecia Areata)। সৌজন্যে অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডের (94th Annual Academy Awards) সম্ভ্রান্ত মঞ্চ। এবছর অস্কারের মঞ্চে সঞ্চালক ক্রিস রক আচমকাই উইল স্মিথের স্ত্রী, জাডা পিঙ্কেট স্মিথকে ( Jada Pinkett Smith) নিয়ে মস্করা করতে শুরু করেন। স্মিথের স্ত্রী অ্যালোপেসিয়া অ্যারিয়েটা রোগে আক্রান্ত। এই রোগের কারণে মাথার চুল পড়ে যায়। ক্রিস রক বলেন, জাডাকে GI Jane ছবির দ্বিতীয় পর্বে নেওয়া হবে। প্রসঙ্গত, ওই ছবিতে মূখ্য ভূমিকায় ছিলেন ডেমি মুর। ছবিতে ডেমি মুর ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক সৈনিক, তাঁর চুল ছিল ছোট করে কাটা। জাডার চুল নিয়ে পরোক্ষে কটাক্ষ করায় দর্শকাসনেই চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে তাঁর। মুহূর্তেই দেখা যায় মেজাজ হারিয়ে তড়িঘড়ি মঞ্চে উঠছেন উইল স্মিথ। সবাইকে অবাক করে দিয়ে তিনি চড় কষিয়ে দেন ক্রিসের গালে। মঞ্চ থেকে নেমেও রাগ কমেনি তাঁর।। ক্রিসকে উদ্দেশ করে কিছু গালিগালাজও দিতে দেখা যায় তাঁকে। বলতে শোনা যায়, “আমার স্ত্রীর নাম তোমার নোংরা মুখে এনো না”। ঘটনার আকস্মিকতায় হকচকিয়ে যান উপস্থিত শিল্পীরা।
রিল লাইফে সদাহাস্যময় উইল স্মিথের এহেন আচরণ কেন? কী এই অসুখ অ্যালোপেসিয়া অ্যারিয়েটা? কী হয় অ্যালোপেসিয়া রোগে? কী চলে রোগীর শরীরে আর মনে? সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের চর্মরোগ বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডাঃ নিলয় দাস বলছেন- “সহজে বলতে গেলে অ্যালোপেসিয়া অ্যারিয়েটা হল বাংলায় যাকে বলে টাকপোকা। এটি একটি অটো ইমিউন ডিজিজ়। মানে এক্ষেত্রে দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা দিগভ্রষ্ট হয়ে যায়। অর্থাৎ যে প্রতিরোধ ক্ষমতার কাজ হল জীবাণুকে ধ্বংস করা, সেই প্রতিরোধ ক্ষমতাই মানুষের নিজের দেহের কোষগুলিকে ধ্বংস করে। অ্যালোপেসিয়া অ্যারিয়েটায় এই ইমিউনিটি মাথার চুলের গোড়ায় আক্রমণ করে। তার ফলে মাথার চুল পড়ে যায়।”
শিশু থেকে বড়দের মধ্যে এই রোগের প্রাদুর্ভাব হতে পারে। ছোটদের সেরে ওঠার হার বড়দের তুলনায় অনেকটাই কম। আবার অনেক সময়ে এই অসুখ নিজে থেকেই শুরু হয়, আবার নিজে থেকেই সেরে যায়।
কী-কী ধরণের হয় এই অ্যালোপেসিয়া অ্যারিয়েটা?
মোটের ওপর তিন ধরণের অ্যালোপেসিয়া অ্যারিয়েটা দেখা যায়:
১. অ্যালোপেসিয়া অ্যারিয়েটা: এতে মাথার চুল পড়ে যায়, বা খাবলা-খাবলা ভাবে চুল উঠে যায়। ২. অ্যালোপেসিয়া অ্যারিয়েটা টোটালিস: এতে মাথা ছাড়াও মুখের সব চুল, যেমন ভ্রুও পড়ে যায় ৩. অ্যালোপেসিয়া অ্যারিয়েটা ইউনিভার্সালিস: এতে দেহের সমস্ত লোম ও চুল পড়ে যায়।
রোগের চরিত্র অনুযায়ী সাধারণ অ্যালোপেসিয়া অ্যারিয়েটা থেকে রোগী যত অ্যালোপেসিয়া অ্যারিয়েটা টোটালিসের দিকে এগোতে থাকেন, ততই জটিল হয় তাঁর চিকিৎসা ও শারীরিক অবস্থা। দেখা গিয়েছে তখন অন্য কিছু অটো ইমিউন ডিজিজ় এই রোগের সঙ্গে হাত ধরাধরি করে আসে। ডাঃ নিলয় দাস জানিয়েছেন, থাইরেয়েড বা অ্যানিমিয়ার কিছু অটো ইমিউন ডিজিজ এর সঙ্গে অনেক সময়েই যুক্ত হয়।
যখন অ্যালোপেসিয়া অ্যারিয়েটা নিজে থেকে সারে না, সেক্ষেত্রে পড়ে যাওয়া চুলের গোড়ায় ইঞ্জেকশন দিতে হয়। আর তা ছাড়াও রয়েছে খাবার ওষুধ আর ইমিউনো সাপ্রেসিভ থেরাপি। কিছু-কিছু ট্রপিক্যাল সেন্সেটাইজার জাতীয় ইমিউনো থেরাপি ব্যবহার করা হয় এই রোগের চিকিৎসায়। তবে এসবই করা হয় রোগের গুরুত্ব বুঝে।
এ তো গেল রোগীর শরীরের অবস্থা ও তার চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়। অন্যদিকে রোগীর মনেও তখন চলে একটা ঝড়। চুল পড়ে যাচ্ছে প্রতিদিন। এই অবস্থায় আয়নার সামনাসামনি কীভাবে করবেন? মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ জয়রঞ্জন রাম বলছেন: “আমরা অনেক সময়েই নিজের সম্বন্ধে অপরে কী ভাবছে, সেটা নিয়েই ব্যস্ত থাকি। আমাদের চেহারাগত কোনও পরিবর্তন বা অস্বাভাবিকত্ব থাকলে আমরা হীনমন্যতায় ভুগি। অন্যের চেহারা নিয়ে মন্তব্য করা আমাদের একটা স্বভাবে পরিণত হয়েছে। প্রায়শই আমরা ব্যাঙ্গাত্মকভাবে, মস্করা করে, না ভেবেচিন্তে কাউকে ছোট করার জন্য মন্তব্য করি। এর ফলে ওই ব্যক্তির মনে একটা কষ্ট অনুভূত হয়। যে কষ্ট তিনি বাইরে প্রকাশ করতে পারেন তো পারেনই না, বরং তিনি ধরেই নেন এটাই তাঁর প্রাপ্য। এতে রোগীর মনখারাপ আরও বাড়ে।”
একাডেমি অ্যাওয়ার্ডের মঞ্চে উইল স্মিথের চড় প্রসঙ্গে ডাঃ রাম বলছেন, “উইল স্মিথ যদি আরও সংযত হতেন এবং ওই মঞ্চে উঠে ক্রিস রককে চড় না মেরে ওই অসুখটিতে ভোগা সমস্ত মানুষের পক্ষ নিয়ে বলতেন, জানার চেস্টা করুন এই রোগে যাঁরা আক্রান্ত কী চলে তাঁদের শরীরে আর মনে—এরকম হলে সেই প্রতিবাদ অনেক সাবলীল, ভদ্র ও দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ হতে পারত। এক্ষেত্রে দুটি ঘটনাই চরম নিন্দনীয়।”
সামাজিকতার ক্ষেত্রে রোগা-মোটা, বেঁটে-ঢ্যাঙা, ট্যারা, কানা, খোঁড়া, টেকো প্রভৃতি শারীরিক চেহারাগত অবস্থা নিয়ে অনেকেই মস্করা করে থাকেন। এমনকী সেই মস্করার তালিকা থেকে বাদ যায় না জটিল কোনও শারীরিক অসুস্থাও। অ্যালোপেসিয়া অ্যারিয়েটায় আক্রান্ত রোগীর চুল পড়ে গোছা-গোছা। আয়নায় নিজেকে দেখলে একে তো মনোকষ্টে ভোগেন আক্রান্ত মানুষটি, তার ওপরে রয়েছে সামাজিক মেলামেশার যন্ত্রণা। আক্রান্তের শারীরিক পরিবর্তন নিয়ে মস্করা করতেও ছাড়েন না অনেকেই। আরও ক্ষতবিক্ষত হন রোগী। বডি শেমিংকে মনোবিদ ও সমাজবিজ্ঞানীরা অপরাধ হিসেবে গণ্য করলেও অহরহ ঘটে বডি শেমিংয়ের ঘটনা। আমাদের চারপাশেই। আমরা হয়ত গুরুত্ব দিই না। দেখেও দেখি না। শুনেও কর্ণপাত করি না। কিন্তু যখন কারও কোনও অসুস্থতা নিয়ে মস্করা করা হয়,তখন সবচেয়ে বেশী আহত হন বোধহয় আক্রান্ত মানুষটি। এবারের অস্কারের মঞ্চ সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্যের জন্য, কোনও ওষুধ বা চিকিৎসা সংক্রান্ত নয়। বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।