অগস্তা ওয়েস্টল্যান্ড তদন্ত: জড়াল কমল নাথের ছেলের নাম! তালিকায় কংগ্রেসের খুরশিদ, আহমেদও

অগস্তা ওয়েস্টল্যান্ড বা ভিভিআইপি চপার চুক্তি হিসেবে পরিচিত এই দুর্নীতির বিষয়টি ২০১৩ সালে প্রথমবার প্রকাশ্যে আসে। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ ওঠে। সংসদীয় কমিটির তদন্তে দাবি করা হয়, ২০০৬-০৭ সাল নাগাদ প্রথম সারির রাজনৈতিক নেতাদের জন্য এই মডেলের ১২টি হেলিকপ্টার কিনতে একাধিক দালাল এবং ভারতের উচ্চপদস্থ কর্তাদের মোটা টাকা ঘুষ দেওয়া হয়েছিল। সিবিআই সূত্রে দাবি, এই ঘুষের অঙ্কটা কমপক্ষে ২৫০ কোটি মার্কিন ডলারের।

অগস্তা ওয়েস্টল্যান্ড তদন্ত: জড়াল কমল নাথের ছেলের নাম! তালিকায় কংগ্রেসের খুরশিদ, আহমেদও
Follow Us:
| Updated on: Nov 17, 2020 | 8:46 AM

TV9 বাংলা ডিজিটাল: ৩ হাজার কোটির অগস্তা ওয়েস্টল্যান্ড (Agusta Westland) ভিভিআইপি কপ্টার চুক্তি মামলার অন্যতম অভিযুক্ত রাজীব সাক্সেনাকে জেরা করে বহু ‘রাঘববোয়াল’দের নাম উঠে এসেছে। পেশায় চাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট রাজীব ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেট)-র কাছে কংগ্রেসের বেশ কয়েকজন নেতার নাম নিয়েছে। যে তালিকায় মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথের ভাইপো রাতুল পুরী ছাড়াও তাঁর নিজের ছেলে বকুল নাথের নামও রয়েছেল বলে জানা যাচ্ছে। পাশাপাশি কংগ্রেস নেতা সলমন খুরশিদ ও আহমেদ প্যাটেলের নামও উঠে এসেছে।

এই মামলার অন্যতম অভিযুক্ত রাজীব সাক্সেনা এই মুহূর্তে জামিনে মুক্ত। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে তাকে দুবাই থেকে প্রত্যর্পণ করে ভারতে আনা হয়। রাজীবের ৩৮৫ কোটি টকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে ইডি (ED)। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সংস্থা মামলাটি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। তাদের দাবি, রাজীব সাক্সেনা ইচ্ছাকৃতভাবে এই মামলার বহু তথ্য চেপে গিয়েছে এবং তা সামনে আনা যাচ্ছে না।

সর্বভারতীয় সংবাদপত্র ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাঙ্কিং স্টেটমেন্ট, অফশোর কোম্পানির রেকর্ড এবং নানা সময় একাধিক ব্যক্তিকে করা ই-মেল সম্পর্কিত তথ্য মেলে রাজীবের বয়ানে। রাজীব নিজে স্বীকারও করে নিয়েছেন বেশ কিছু তথ্য জাল করা হয়েছে। ইডি-র কাছে রাজীব সাক্সেনার বয়ানের মূল বক্তব্য ছিল- অগস্তা ওয়েস্টল্যান্ড চুক্তি সময় কী কী ধরনের সমস্যা হয়েছিল, দ্বিতীয় ইউপিএ সরকার কী ভাবে তা বাতিল করে দেয় এবং সাক্সেনার সংস্থা ইন্টারস্টেলার টেকনলেজি এবং ক্রিশ্চিয়ান মিশেলের সংস্থা গ্লোবাল সার্ভেসেজের মাঝে কী ভাবে এই চুক্তি আটকে যায়।

ইডি-কে দেওয়া বয়ান অনুসারে রাজীব সাক্সেনা বলে, ‘সেই সময় সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করার মত রাজনৈতিক নেতা ও আমলাদের লাভের জন্য সব কিছু করা হয়েছিল। কিছু ফান্ডকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে স্টান্ডার্ড ট্রানজেকশনের মধ্যে দিয়ে ভারতে বিনিয়োগের জন্য আনার কাজে ব্যবহার করেছিলাম আমি।’

এই প্রসঙ্গে কমল নাথ বলেন, ‘আমি আগেও স্পষ্ট জানিয়েছি যে আমার ভাইপোর কোম্পানির লেনদেনের সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। আমার ছেলের কথা বলতে হলে ও দুবাইয়ের প্রবাসী ভারতীয়। এমন কোনও কাগজপত্রও নেই যা আমার ছেলের সঙ্গে এই ওই কোম্পানির যোগাযোগ প্রমাণিত করে।’ অন্যদিকে কংগ্রেসের আরেক নেতা সলমন খুরশিদ এই বিষয়ে বলেন, ‘অগস্তা ওয়েস্টল্যান্ড তদন্তে যেভাবে আমার নাম ব্যবহার করা হয়েছে তাতে আমি হতবাক। যতদূর আমি জানি রাজীব সাক্সেনা বা কারোর সঙ্গে রাতুল পুরীর যোগাযোগ নেই।’

একনজরে অগস্তা ওয়েস্টল্যান্ড চুক্তি দুর্নীতি

অগস্তা ওয়েস্টল্যান্ড বা ভিভিআইপি চপার চুক্তি হিসেবে পরিচিত এই দুর্নীতির বিষয়টি ২০১৩ সালে প্রথমবার প্রকাশ্যে আসে। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ ওঠে। সংসদীয় কমিটির তদন্তে দাবি করা হয়, ২০০৬-০৭ সাল নাগাদ প্রথম সারির রাজনৈতিক নেতাদের জন্য এই মডেলের ১২টি হেলিকপ্টার কিনতে একাধিক দালাল এবং ভারতের উচ্চপদস্থ কর্তাদের মোটা টাকা ঘুষ দেওয়া হয়েছিল। সিবিআই সূত্রে দাবি, এই ঘুষের অঙ্কটা কমপক্ষে ২৫০ কোটি মার্কিন ডলারের।

অভিযুক্তের তালিকায় কারা?

তদন্তে নেমে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা দাবি করে, একাধিক প্রথম সারির কংগ্রেস নেতার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা ও যোগশাজস রয়েছে এই চুক্তির ক্ষেত্রে। একাধিকবার সোনিয়া গান্ধী (Sonia Gandhi) থেকে শুরু করে এম ভিরাপ্পা মৌলি (M Veerappa Moily), অস্কার ফার্নান্ডেজের (Oscar Fernandes) মতো নাম জড়িয়েছে। এবার আহমেদ প্যাটেল, সলমন খুরশিদ ও কমল নাথের ছেলের নামও উঠে এল।

কোন পথে তদন্ত?

আর্থিক তছরুপের বিষয়টি ইডি এবং দুর্নীতির বিষয়টি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই খতিয়ে দেখছে। এই চুক্তির অন্যতম দালাল ক্রিশ্চিয়ান মিচেলকে ২০১৮ সালে দুবাই থেকে ভারতে প্রত্যর্পণ করা হয়। তারপর তদন্তে অনেকটাই গতি আসে। এরপর ২০১৯ সালে দুবাই থেকেই প্রত্যর্পণ করা হয় এই মামলার আরও দুই অভিযুক্ত রাজীব সাক্সেনা ও দীপক তলোয়ারকে। তারপর থেকে তদন্ত ও জিজ্ঞসাবাদ চলছে দুই কেন্দ্রীয় সংস্থার। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও কংগ্রেস নেতা নেত্রীর বিরুদ্ধে পোক্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি।