কমছে বেকারত্ব, কাজ আছে, কিন্তু কাজের লোক কই? রিপোর্টে চিন্তার ভাঁজ

নিজস্ব প্রতিবেদন: পুজোর মুখে খুশির খবর। সেপ্টেম্বরে সার্বিকভাবে এক ধাক্কায় বেড়েছে কর্মসংস্থান। কমেছে বেকারত্বের হার। আনলক পর্বে ‘সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি’ (CMIE)-র সেপ্টেম্বরের রিপোর্টে নিশ্চিয়ই কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবেন আমজনতা। বিহার ভোটে শাসক দলের কাছে বড় অক্সিজেনও হতে পারে। কিন্তু এই রিপোর্ট কি আদৌ খুশির খবর? প্রশ্ন তুলছেন অর্থনীতিবিদদের একাংশ। আগে এক নজরে জেনে […]

কমছে বেকারত্ব, কাজ আছে, কিন্তু কাজের লোক কই? রিপোর্টে চিন্তার ভাঁজ
ফাইল চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Oct 20, 2020 | 1:13 PM

নিজস্ব প্রতিবেদন: পুজোর মুখে খুশির খবর। সেপ্টেম্বরে সার্বিকভাবে এক ধাক্কায় বেড়েছে কর্মসংস্থান। কমেছে বেকারত্বের হার। আনলক পর্বে ‘সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি’ (CMIE)-র সেপ্টেম্বরের রিপোর্টে নিশ্চিয়ই কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবেন আমজনতা। বিহার ভোটে শাসক দলের কাছে বড় অক্সিজেনও হতে পারে। কিন্তু এই রিপোর্ট কি আদৌ খুশির খবর? প্রশ্ন তুলছেন অর্থনীতিবিদদের একাংশ।

আগে এক নজরে জেনে নেওয়া যাক সেপ্টেম্বরের রিপোর্ট:

সিএমআইই-র রিপোর্ট অনুযায়ী, অগস্টের তুলনায় গত মাসে ৫১ লক্ষ কর্মসংস্থান বেড়েছে, পাশাপাশি বেকারত্ব কমেছে ৭৩ লক্ষ। রিপোর্ট বলছে, সেপ্টেম্বরে কর্মসংস্থান ৩৯.২৫ কোটি থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯.৭৬ কোটি। অন্য দিকে, বেকারত্ব ৩.৫৭ কোটি থেকে কমেছে ২.৮৪ কোটিতে। এই পর্যন্ত তথ্য আশাব্যঞ্জক। কিন্তু বাধ সেধেছে শ্রম শক্তির পরিসংখ্যান। যেখানে কর্মসংস্থানের বৃদ্ধি এবং বেকারত্বের হ্রাস হচ্ছে, কার্যত উলাট-পুরাণ অবস্থানে দাঁড়িয়ে শ্রম শক্তির রিপোর্ট। এমনটা নজিরবিহীন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

অগস্টের তুলনায় ২২ লক্ষ শ্রম শক্তি কমেছে। অগস্টে শ্রম শক্তি ছিল ৪২.৮৩ কোটি। সেপ্টেম্বরে কমে দাঁড়ায় ৪২৬ কোটি। এই তথ্য চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে অর্থনীতিবিদদের কপালে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্মসংস্থানের বৃদ্ধি হওয়া সত্ত্বেও শ্রম শক্তি কমা মানে মানুষের কাজের প্রতি অনীহা তৈরি হয়েছে। কিন্তু এমন পরিস্থিতি তৈরি হল কেন?

শহর ও গ্রামীণ কর্মক্ষেত্রে বৈপরীত্য:

আপাত দৃষ্টিতে সেপ্টেম্বরে কর্মসংস্থান বেড়েছে। তবে, অধিকাংশটাই গ্রামমুখী। শহর এবং গ্রামে কর্মসংস্থানের তথ্যে এতটাই ফারাক যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। রিপোর্ট বলছে, গ্রামে ৭৪ লক্ষ কর্মসংস্থান বেড়েছে। বেকারত্ব কমেছে ৫০ লক্ষের বেশি। একমাত্র গ্রামেই প্রায় ২৩ লক্ষ শ্রম শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাত্ আনলক পর্বে গ্রামের কর্ম পরিবেশ যে স্বাভাবিক হচ্ছে এই রিপোর্টেই তার প্রমাণ। কিন্তু প্রশ্ন, গ্রামের শ্রম শক্তির বৃদ্ধির প্রভাব কেন সার্বিক রিপোর্টে দেখা গেল না?

অর্থনীতিবিদদের মতে, গ্রামে কর্মসংস্থানের অধিকাংশই মহিলা। মোট ৭৪ লক্ষের মধ্যে ৪২ লক্ষ মহিলা অসংগঠিত ক্ষেত্রে কাজ করছেন। বাকি ক্ষেত্রগুলিতে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণিতে পড়া অথার্ত উচ্চ শিক্ষা না থাকা শ্রমিকরা যুক্ত রয়েছেন। তাঁরা অধিকাংশই কৃষি, ক্ষুদ্র-অতি ক্ষুদ্র শিল্পে দিনমজুরিতে যুক্ত। ৩০ থেকে ৩৪ বছর বয়সী শ্রমিকদের হাতে কাজ রয়েছে। যে কারণে, গুণগত কর্মক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে না গ্রামে।

শহরের চিত্রটা একেবারে উল্টো। অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান এবং বেকারত্বের হার কমেছে। পাশাপাশি তলানিতে ঠেকেছে শ্রম শক্তিও। বেকারত্ব এবং কর্মসংস্থান দুটো ক্ষেত্রে ২৩ লক্ষ কমেছে। শহরগুলিতে শ্রমশক্তি কমেছে প্রায় ৪৬ লক্ষ। সেপ্টেম্বরে প্রায় ৩.৩ শতাংশ শ্রমশক্তি কমেছে। গ্রামের তুলনায় শহুরে শ্রমশক্তি হ্রাস উদ্বেগের কারণ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

তবে, আশার আলো সংগঠিত ক্ষেত্রে বৃদ্ধি পেয়েছে কর্মসংস্থান। স্নাতক স্তরে ২১ লক্ষ কর্মসংস্থান বেড়েছে। কনজিউমার পিরামিডস হাউসহোল্ড সার্ভের রিপোর্ট অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে ৪৪ লক্ষ মানুষ চাকরি পেয়েছেন।

মোদ্দা বিষয় এক কথায়:

** সেপ্টেম্বরে ৫১ লক্ষ কর্মসংস্থান বেড়েছে। বেকারত্ব কমেছে ৭৩ লক্ষ। ** ইতিবাচক রিপোর্টে কাঁটা শ্রম শক্তি হ্রাস। অগস্টের তুলনায় শ্রম শক্তি কমেছে ২২ লক্ষ। ** গ্রামে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেলেও গুণগত কাজের পরিবেশ তৈরি হয়নি। ** শহরে কর্মসংস্থান এবং বেকারত্ব নজিরবিহীন ভাবে কমেছে। কমেছে শ্রম শক্তির হারও। ** সংগঠিত ক্ষেত্রে কমেছে বেকারত্বের হার।