Presidential Election: দ্রৌপদীর জয়ে বিরোধীদের ‘বস্ত্রহরণ’! ২০২৪-এ মোদী-বিরোধী ঐক্য এক আকাশ কুসুম কল্পনা
আপাত দৃষ্টিতে ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন গুরুত্বহীন। কারণ, ভারতের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির পদটা সাম্মানিক। তবে, সেই আপাত নিরীহ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল বিজেপি-বিরোধী শিবিরের কাছে। বস্তুত এই নির্বাচনকে তারা বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলার মঞ্চ হিসেবে দেখেছিল।
নয়া দিল্লি: আপাত দৃষ্টিতে ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন গুরুত্বহীন। কারণ, ভারতের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির পদটা সাম্মানিক। তবে, সেই আপাত নিরীহ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল বিজেপি-বিরোধী শিবিরের কাছে। বস্তুত এই নির্বাচনকে তারা বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলার মঞ্চ হিসেবে দেখেছিল। কাজেই এই নির্বাচনে ৬৪ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে দ্রৌপদী মুর্মুর জয়, বিরোধীদের মধ্যে ঐক্যের অভাবকেই আরও স্পষ্ট করে দিল। ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোটের প্রার্থীর জয় প্রত্যাশিতই ছিল। কিন্তু বিরোধীদের কাছে বড় ধাক্কা হল রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিপুল পরিমাণ ক্রস-ভোটিং! রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যা দারুণভাবে নিশ্চিন্ত করবে গেরুয়া শিবিরকে।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হওয়ার আগে থেকেই দ্রৌপদী মুর্মুর জয় একপ্রকার নিশ্চিত ছিল। এনডিএ-র হাতে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ভোটের থেকে হাজারখানেক ভোট কম ছিল। তবে, প্রার্থী হিসাবে দ্রৌপদী মুর্মুর মতো আদিবাসী নেত্রীর মনোনয়ন নিঃসন্দেহে বিজেডির মতো জোট নিরপেক্ষ দলগুলিকে, এমনকি, জেএমএম-এর মতো ইউপিএ জোটের শরিকদেরও এনডিএ প্রার্থীকেই সমর্থনে বাধ্য করেছিল। সব মিলিয়ে নির্বাচনের আগেই ৪৪টি দল দ্রৌপদী মুর্মুকে সমর্থন করার কথা জানিয়েছিল। মাথায় রাখতে হবে, এনডিএ-র সদস্য সংখ্যা মাত্র ২০। অর্থাৎ, বেশ কয়েকটি দল ইউপিএ জোটের পাশে থাকতে রাজি হয়নি।
তারপরও, বিরোধী ঐক্য কলুসিত হয়েছে ক্রস ভোটিং-এ। সূত্রের খবর, তৃতীয় রাউন্ডের শেষেই ১৭ জন সাংসদ এবং ১২৫ জনেরও বেশি বিধায়ক দ্রৌপদী মুর্মুকে ক্রস ভোট দিয়েছেন। চতুর্থ রাউন্ডের শেষে ক্রস-ভোটিং করা এমএলএদের সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে। এবিপির এক প্রতিবেদনে রাজ্য অনুযায়ী, ক্রসভোটিং-এর পরিসংখ্যানও দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী, বিহারে ৬ জন, অরুণাচল প্রদেশে ১ জন, অসমে ২২ জন, ছত্তীসগঢ়ে ৬ জন, গোয়ায় ৪ জন, গুজরাটে ১০ জন, হরিয়ানায় ১ জন, হিমাচল প্রদেশে ২ জন, ঝাড়খণ্ডে ১০ জন, মধ্যপ্রদেশে ১৮ জন, মহারাষ্ট্রে ১৬ জন, মেঘালয়ে ৭ জন ক্রস ভোট দিয়েছেন। বাংলাতেও ১ জন তৃণমূল বিধায়ক এবং ২ জন তৃণমূল সাংসদ ক্রসভোট দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
এঁদের একটা অংশ, দ্রৌপদী মুর্মুর জাতি পরিচয়ের কারণে বিবেকের ডাকে সাড়া দিয়েছেন। আদিবাসী এলাকার জনপ্রতিনিধি হয়ে আদিবাসী নেত্রীর বিরুদ্ধে ভোট দিতে দ্বিধা করেছেন। তবে, প্রত্যেকের ক্ষেত্রে এটাই কারণ, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। আর যারা জাতি পরিচয়ের কারণে ভোট দিয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রেও যে মোদী-শাহদের চাল কাজে দিয়েছে, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। দিনের শেষে নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর বিরোধী ফ্রন্ট গড়ার সম্ভাবনা মরীচিকাই থেকে গেল। আবার একই দিনে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটদানে বিরত থাকার কথা ঘোষণা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। ইউপিএ প্রার্থী মার্গারেট আলভাকে মনোনীত ঘোষণা করার আগে কংগ্রেস তাদের সঙ্গে কোনও শলা-পরামর্শ করেনি বলে দাবি করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের দল। এতে যে এনডিএ-এই লাভবান হবে, এটা আর নতুন করে বলার কিছু নেই।
জগদীপ ধনখরের সঙ্গে গত কয়েক বছর ধরে আদায়-কাঁচকলায় সম্পর্ক তৃণমূলের। উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তিনিই এনডিএ প্রার্থী। তাঁর বিরুদ্ধেও ভোট দানে তৃণমূলকে রাজি করাতে পারল না কংগ্রেস। রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতি পদের লড়াই ছিল সংসদ-বিধানসভার অন্দরে। সেখানেই এককাট্টা হয়ে লড়তে ব্যর্থ হল বিরোধীরা। ফলে, ২০২৪ সালে জনগণের সামনে আসল নির্বাচনে তারা ঐক্যবদ্ধ হবে, এটা আকাশ কুসুম কল্পনা বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।