Delhi Crime: ‘এই-ই-রামু’, জ্ঞান হারানোর আগে বলা মহিলার কথায় ফাঁস ২৫ বছর আগের হাড়হিম ‘সেই’ ঘটনার

Delhi Crime: চার সদস্যের পুলিশের দলই ২৫ বছর পুরনো এই মামলার সুরাহা করেছে। তাদের কাছে খুনির কোনও ছবি যেমন ছিল না, তেমনই খুনির হদিসও জানা ছিল না। ছদ্মবেশে দিল্লি ও উত্তর প্রদেশে মাসের পর মাস ধরে তদন্ত চালানোর পরই প্রথম সূত্র তাদের হাতে আসে।

Delhi Crime: 'এই-ই-রামু', জ্ঞান হারানোর আগে বলা মহিলার কথায় ফাঁস ২৫ বছর আগের হাড়হিম 'সেই' ঘটনার
প্রতীকী চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 20, 2022 | 7:56 AM

নয়া দিল্লি: সালটা ১৯৯৭। ফেব্রুয়ারির শীতে তখন কাঁপছে দিল্লি। এমনই এক হিম-শীতল রাতে খুন হন তুঘলকাবাদের বাসিন্দা কিষাণ লাল। দিনমজুরির কাজ করা কিষাণ লালকে হঠাৎ কে বা কারা, কেন কুপিয়ে খুন করল, তার কোনও উত্তর পাননি স্ত্রী সুনীতা। যেই সময়ে তাঁর স্বামী খুন হন, সেই সময় তিনি সন্তানসম্ভবা ছিলেন। সন্তান জন্মানোর পরও বছর খানেক পুলিশের দরজায় ঘুরেও কোনও লাভ হয়নি। পলাতক খুনি সম্পর্কে কোনও খোঁজ-খবরই মেলেনি। ন্যায়-বিচারের আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন অনেক আগেই, কিন্তু সম্প্রতিই দিল্লি পুলিশের কাছ থেকে আসে একটি ফোন। দ্রুত লখনউতে আসতে বলা হয় সুনীতাকে।

জন্মের আগেই বাবাকে হারিয়েছিল বছর ২৪-র সানি। কিন্তু পুলিশের ফোনের কথা শুনেই মাকে নিয়ে হাজির হয় লখনউয়ে। সেখানে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় থানায়। পুলিশি হেফাজতে থাকা এক ব্যক্তিকে দেখেই চমকে ওঠেন সুনীতা। সংজ্ঞা হারানোর আগে শুধু একটাই কথা বলেন, এই-ই রামু।

১৯৯৭ সালে কিষাণ লালের খুনের ঘটনায় পাটিয়ালা হাউস কোর্টের তরফে ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হিসাবে তাঁদেরই প্রতিবেশী রামুকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। কিন্তু বহু খোঁজাখুঁজির পরও তাঁর হদিস না মেলায়, আদালতের তরফে তাঁকে পলাতক হিসাবেই ঘোষণা করা হয়। ডিজিটাল নথির যুগের আগেরও ঘটা এই খুনের ঘটনার ফাইল এতদিন ধুলোর আস্তরণেই চাপা পড়েছিল। ২০২১ সালের অগস্ট মাসে দিল্লি পুলিশের উত্তর শাখার হাতে আসে সেই ফাইল। নতুন করে শুরু হয় তদন্ত।

এক বছর ধরে ভুয়ো পরিচয়ে অভিযুক্তের খোঁজ চালানোর পরই সম্প্রতি পুলিশের জালে ধরা পড়ে ৫০ বছর বয়সী রামু। কিন্তু তাঁর পরিচয়ও এই ২৫ বছরে বদলে গিয়েছে। সে আর রামু নয়, বর্তমানে তাঁর পরিচয় অশোক যাদব। ধৃত এই অশোক যাদবই রামু কিনা, তা জানার জন্যই লখনউয়ে ডাকা হয়েছিল সুনীতাকে।

ইন্স্যুরেন্স এজেন্ট সেজেই গ্রেফতার অভিযুক্তকে-

দিল্লি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার সাগর সিং কালসি জানান, চার সদস্যের পুলিশের দলই ২৫ বছর পুরনো এই মামলার সুরাহা করেছে। তাদের কাছে খুনির কোনও ছবি যেমন ছিল না, তেমনই খুনির হদিসও জানা ছিল না। ছদ্মবেশে দিল্লি ও উত্তর প্রদেশে মাসের পর মাস ধরে তদন্ত চালানোর পরই প্রথম সূত্র তাদের হাতে আসে। জীবনবিমার এজেন্ট সেজেই পুলিশকর্মীরা দিল্লির উত্তম নগরে পৌঁছন, সেখান থেকেই আর্থিক সাহায্যের নাম করে রামুর এক আত্মীয়ের খোঁজ পান। পরে উত্তর প্রদেশের ফারুকাবাদ জেলা থেকেও রামুর আরেক আত্মীয়ের খোঁজ মেলে। তাঁর কাছ থেকেই পুলিশ অভিযুক্তের ছেলে আকাশের ফোন নম্বর মেলে। খুঁজে খুঁজে বের করা হয় তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টও। সেখান থেকেই জানা যায়, লখনউয়ের কাপুরথালার বাসিন্দা আকাশ।

আকাশের কাছ থেকে রামুর সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে সে জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই বাবার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ নেই। তবে লখনউয়ের জানকিপুরম এলাকায় থাকে তাঁর বাবা, ই-রিক্সা চালান অর্থ উপার্জনের জন্য। ব্যস, এই খোঁজ মিলতেই পুলিশ হাজির হয় লখনউয়ে। সেখানে তারা ই-রিক্সা কোম্পানির এজেন্ট সেজে একাধিক চালকের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং সরকারি প্রকল্পের অধীনে আর্থিক সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নাম করেই  অশোক যাদব ওরফে রামুর কাছে পৌঁছয়। গত ১৪ সেপ্টেম্বর লখনউয়ের একটি রেলস্টেশনের কাছ থেকে আটক করা হয় রামুকে। ২৫ বছর আগে খুন হওয়া কিষাণ লালের স্ত্রী সুনীতাকে ডাকা হয় চিহ্নিতকরণের জন্য।

প্রথমে খুনের কথা অস্বীকার করলেও, পরে পুলিশি জেরায় রামু স্বীকার করে নেয় যে কমিটি নামক একটি চিট ফান্ডের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্যই সে কিষাণকে খুন করেছিল। ১৯৯৭ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সে কিষাণকে আকণ্ঠ মদ্যপান করিয়ে তারপর কুপিয়ে খুন করে এবং টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। বিভিন্ন জায়গা ঘুরে শেষে সে লখনউয়ে আশ্রয় নেয়। সেখানেই সে ভুয়ো আধারকার্ড বানিয়ে বসবাস শুরু করে।