৭০ হাজারের চাকরিতে ৩ কোটি খোরপোশ দেওয়া সম্ভব? অতুলের মৃত্যু তুলে দিল যে যে প্রশ্ন
Divorce:
“এদেশের আইন ছেলেদের কথা চিন্তা করে না। আইন শুধু মেয়েদের কথা ভেবেই তৈরি। ছেলে দোষ না করলেও আদালত ধরে নেয়, তাঁরাই দোষী। মেয়েদের কোনও অপরাধ থাকতেই পারে না। এই আইনি ব্যবস্থায় ছেলেরা কীভাবে সুবিচার পাবে? “একটা চিঠি থেকে কোট-আনকোট লাইনগুলি। এটা এমন একটা জ্বলন্ত সমস্যা, যা সচরাচর মিডিয়ায় উঠে আসে না। কিন্তু আসা উচিত। কেননা এর সঙ্গে বহু মানুষের মানসম্মান এমনকী জীবনের প্রশ্ন জড়িয়ে। ভালোভাবে বাঁচার প্রশ্ন জড়িয়ে। কথা হচ্ছে অ্যালিমনি বা খোরপোশের। গোটা দেশে বিভিন্ন আদালতে লক্ষ, লক্ষ ডিভোর্সের মামলা চলছে। এর মধ্যে কয়েক-শো মামলায় এমন সব খোরপোশ চাওয়া হয়েছে, শুনলে ভিরমি খেতে হয়। কোনও ক্ষেত্রে দাবির অঙ্ক ৭ কোটি, কোনও ক্ষেত্রে ৫ কোটি, কোনও ক্ষেত্রে আরও বেশি। ৭০-৮০ লাখ টাকা দাবি করার দৃষ্টান্ত তো ভুরি ভুরি।
এই অবস্থায় খোরপোশের অঙ্ক নিয়ে আট দফা নির্দেশিকা নির্দিষ্ট করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি বিক্রম নাথ ও বিচারপতি প্রসন্ন বি-র নির্দেশ, এই আট ফ্যাক্টরের নিরিখেই খোরপোশের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। মহিলা চাকরিরত কি না, তাঁর রোজগারের ব্যবস্থা আছে কি না, তাঁর সংসার চালাতে কত টাকা লাগতে পারে, স্বামীর আয় ও খরচের অনুপাত – এমন আরও কিছু ফ্যাক্টর বিবেচনা করে তবেই ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ঠিক হবে।
কাকে, কতটা খোরপোশ দিতে হবে, এটা এখনই অনুমান করা সম্ভব নয়। তবে স্বামীর উপর যাতে অত্যাধিক চাপ না পড়ে, সেটা নিশ্চিত করতে চেয়েছে শীর্ষ আদালত। একইসঙ্গে স্ত্রী ও সন্তানদেরও যাতে ভবিষ্যত সুরক্ষিত হয়, সেদিকেও নজর রাখা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের এই রায় ভুক্তভোগীদের কতটা সুরাহা দেবে, এখনই বুঝে ওঠা সম্ভব নয়।
আইন নারী – পুরুষ সহ সবার ক্ষেত্রে সমান হওয়া উচিত। এনিয়ে তো কোনও দ্বিমত থাকতে পারে না। কিন্তু দেশের আইন যে কিছুটা হলেও মেয়েদের দিকে ঝুঁকে, তাতেও কোনও সন্দেহ থাকার কথা নন। মহিলারা হিংসার শিকার হন বেশি, তাঁদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি – এমন একটা ভাবনা থেকে অনেকগুলো আইন তৈরি হয়েছে। এখন আবার সেগুলো অপব্যবহার করার অভিযোগও উঠছে।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর হয়ত অবিশ্বাস্য অঙ্কের খোরপোশ চাওয়ার সংখ্যাটা কমবে। এই মুহূর্তে দেশের ফ্যামিলি কোর্টগুলিতে কমবেশি সাড়ে ১৪ লক্ষ ডিভোর্স কেস পেন্ডিং রয়েছে। এর মধ্যে দেড় লাখের মতো মামলা দশ বছর বা তার বেশি বয়স ধরে চলছে। গত দশ বছরে হাজারে হাজারে এমন মামলা হয়েছে, যেখানে মাসে লক্ষাধিক টাকার ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে। কাদের থেকে? যাঁদের থেকে এই অঙ্কের ক্ষতিপূরণ চাওয়া হচ্ছে, তাঁরা পেশায় কেউ আইটি প্রফেশনাল, কেউ চাকুরে কেউ কর্পোরেট কর্মী। তাঁরা বলছেন, আমি ৭০ হাজার টাকা মাইনের চাকুরে। আমি আড়াই কোটি টাকা কী করে দেব? স্ত্রীর পক্ষের আইনজীবী দাবি করছেন, ওনার পৈতৃক বাড়ি আছে, বাবা – মায়ের গহনা- টাকা আছে। সেসব বিক্রি করে হলেও খোরপোশ দিতেই হবে। না হলে আমার মক্কেল ডিভোর্স দেবে না ফ্যামিলি কোর্ট থেকে হাইকোর্ট – কয়েকটা ব্যতিক্রম বাদ দিলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে একই ঘটনা।
সোমবার বেঙ্গালেরুতে এক যুবকের আত্মহত্যার ঘটনায় তোলপাড় চলছে এখন। ২০১৯ সালে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত নিকিতার সঙ্গে অতুলের বিয়ে হয়েছিল। গত তিন বছর ধরে তাঁরা আলাদা থাকছিলেন। অতুলের বিরুদ্ধে পারিবারিক হিংসা, খুনের চেষ্টা, অস্বাভাবিক যৌনতা, পণের টাকা চেয়ে চাপ দেওয়ার অভিযোগে মামলা করেছিলেন নিকিতা। সেই মামলায় অতুলের বিরুদ্ধে রায় দেয়। তারপর থেকেই নাকি মামলা তুলতে টাকার দাবি করছিল নিকিতার পরিবার। ৫০ লক্ষ থেকে শুরু করে সেই দাবি পৌঁছয় ৩ কোটিতে। সোমবার বেঙ্গালেরুতে নিজের ফ্ল্যাট থেকে অতুলের দেহ উদ্ধার হয়। সঙ্গে ২৪ পাতার সুইসাইড নোট। তাঁর উপর টাকা চেয়ে চাপ, মিথ্যে মামলায় জড়ানোর হুমকি সবটাই রয়েছে সেই সুইসাইড নোটে। সঙ্গে উত্তর প্রদেশের ফ্যামিলি কোর্টের ভূমিকা নিয়েও লিখে গিয়েছেন অতুল।
নোটে লেখা হয়েছে, নিকিতা শুনানির মধ্যেই টাকা দিয়ে মিটমাট করার প্রস্তাব দিত। বিচারকও ওর কথাতেই সায় দিতেন। আমি বলতাম, আমার অত টাকা দেওয়ার ক্ষমতা নেই। নিকিতা বলত, টাকা দিতে না পারলে তোমার মরাই ভাল। এটা শুনে বিচারক মজা করতেন। আমাকে বলতেন, আরে মশায়, বউয়ের কথা শুনতে হয়। টাকাটা দিয়ে মিটমাট করে নিন। অতুল লিখেছেন, এদেশে মৃত্যুর পর নিকিতা, তাঁর বাবা-মা, ভাই ও কাকার বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন অতুলের ভাই বিকাশ কুমার। গত কয়েকদিন ধরে অতুলের ঘটনায় উত্তাল সোশাল মিডিয়া। এই সময় এল সুপ্রিম কোর্টের রায়।