এনডিএ-তে ‘বড়দা’ বিজেপি, তাহলে নীতীশই কি মুখ্যমন্ত্রী?

আরজেডির সঙ্গে হাত মেলানোর কোনও পথ খোলা রাখেননি নীতীশ। অন্যদিকে সেই 'ভুলও' আরজেডি করবে না বলে মত তাঁদের।

এনডিএ-তে 'বড়দা' বিজেপি, তাহলে নীতীশই কি মুখ্যমন্ত্রী?
ফাইল ছবি
Follow Us:
| Updated on: Nov 11, 2020 | 7:05 AM

TV9 বাংলা ডিজিটাল: সম্ভাব্য ফল যে দিকে গড়াচ্ছে, তাতে ভোটের আগে বিজেপি আরও একটু সংযমী হলে কি ফায়দা বেশি পেত! এমনই গুঞ্জন এখন গেরুয়া শিবিরের অন্দরে। যা ধারা তাতে বিহার বিধানসভা নির্বাচনে একক বৃহত্তম দল হওয়ার পথে বিজেপি। সেই তুলনায় নীতীশ কুমার (Nitish Kumar) অনেকটাই ফিকে! স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, বিহারে এনডিএ-তে বিজেপি যদি বৃহত্তম দল হয়, তাহলে নীতীশই কি মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন না বিকল্প পথ খোলা থাকছে পদ্মশিবিরের কাছে? এখনও পর্যন্ত এমন কোনও ইঙ্গিত মেলেনি বিজেপি নেতাদের কাছ থেকে। চূড়ান্ত ফল যত স্পষ্ট হচ্ছে ততই জোরালো হচ্ছে নতুন নতুন জল্পনা ও সমীকরণ।

ভোট গ্রহণ পর্বের আগের দিন পর্যন্ত অমিত শাহ-নরেন্দ্র মোদীরা বলে এসেছেন, এনডিএ জিতলে নীতীশই হবেন মুখ্যমন্ত্রী। এক সংবাদিককে অমিত শাহ তো বলেই ফেলেন, ঘুরে-ফিরে যাই জিজ্ঞাসা করুন না, নীতীশই মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছে। এটা তাদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, ম্যাজিক ফিগার ১২২ ছাড়িয়ে এনডিএ এগিয়ে রয়েছে ১৩১ আসনে। বিজেপি একাই ৭৫। সঙ্গী জেডিইউ ৪৮। অন্যদিকে কংগ্রেস-আরজেডি-র মহাগঠবন্ধন এগিয়ে ১০১ আসনে। চিরাগ পাসওয়ানের লোকজন শক্তি পার্টি এগিয়ে মাত্র একটি-তে। এমতাবস্থায়, বিজেপি এখনও পর্যন্ত একক বৃহত্তম দল। অর্থাৎ সরকার গড়লে পাল্লা ভারী থাকবে সুশীল মোদীদের দিকেই।

Nitish Kumar

ফাইল চিত্র

পাসওয়ানের পাশা:

আসন সমঝোতা না হওয়ায় বিজেপি-আরজেডির জোট থেকে বেরিয়ে আসে চিরাগ পাসওয়ানের এলজেপি (LJP)। কিন্তু এনডিএ (NDA)থেকে বেরিয়ে যায়নি। উল্টে চিরাগ পাসোয়ান স্পষ্ট করে দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে এনডিএ-তে তাঁরা থাকছেন। রাজনৈতির কারবারিরা মনে করছেন, নীতীশ কুমারকে কোণঠাসা করতেই জোট থেকে বেরিয়ে আসে এলজেপি। আর এতে পরোক্ষ ইন্ধন রয়েছে গেরুয়া শিবিরের। ভোটের ময়দানে নীতীশের বিরুদ্ধে চিরাগ যতটা সুর চড়িয়েছেন, বিজেপির জন্য ততটাই নরম মনোভাব দেখিয়েছেন। এখনও পর্যন্ত প্রায় ৬ শতাংশ ভোট পেয়েছে এলজেপি। গত বিধানসভার তুলনায় কিছুটা বেশি। মনে করা হচ্ছে, নীতীশের ভোট কাটতে অনুঘটকের কাজ করেছে পাসওয়ানের এলজেপি।

‘আত্মনির্ভর’ বিজেপি:

নীতীশের কাঁধে চড়ে ভোটের বৈতরণী পার করতে চেয়েছিল বিজেপি। ফলের প্রবণতা দেখে বোঝা যাচ্ছে. কাঁধে চড়া তো দূর এবার হেঁটে সহজেই জয়ের দোরগড়ায় গেরুয়া শিবির। আসন সমঝোতার সময় এতটা ‘আত্মবিশ্বাস’ যে তাদের ছিল না এ কথা মেনে নিচ্ছেন বিজেপির অন্দরের অনেকেই। ভোট শতাংশের নিরিখে গত নির্বাচনের থেকে প্রায় ৪ শতাংশ পিছিয়ে থাকলেও কমপক্ষে ১৫-২০টা বেশি আসন জেতার পথে এবার বিজেপি। এখানেই ভোট পরবর্তী সমীকরণ পাল্টে যাওয়ার ইঙ্গিত মিলছে। তর্কের খাতিরে এনডিএ সরকার গড়লে, শাহ-মোদীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নীতীশই মুখ্যমন্ত্রী হবেন। কিন্তু যে নীতীশ কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির বিরুদ্ধে মাঝেসাজে অম্লসুর গেয়ে থাকেন, তাঁকে এবার বাগে আনা কঠিন হবে না বলেই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। আগামী দিনে বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীত্বের দাবিদার হবে না এও হলফ করে বলা কঠিন।

নীতীশের ‘পাল্টি’:

২০১৫ বিধানসভা নির্বাচনে নীতীশ কুমারের জয়ের সিংহভাগ অংশীদার ছিলেন লালু প্রসাদ যাদব। লণ্ঠন হাতে নিয়েই পাটনার কুর্সির লক্ষ্যভেদ করেন নীতীশ। পরবর্তী সময়ে কুর্সি টিকিয়ে রাখতে একেবারে উল্টো মেরুতে গিয়ে বিজেপির হাতও ধরেন তিনি। ফলে মুখ্যমন্ত্রীর সিংহাসন দখলেই থাকে। কিন্তু নীতীশের ধারবাহিক ‘প্লাটি খাওয়ার রাজনীতি’ কিছুটা ভাবমূর্তি নষ্ট করে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, আরজেডির সঙ্গে হাত মেলানোর কোনও পথ খোলা রাখেননি নীতীশ। অন্যদিকে সেই ‘ভুলও’ আরজেডি করবে না বলে মত তাঁদের।

এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত ফল বেরয়নি। মধ্য রাত হয়ে যাবে পুরো ফলাফল পেতে। কোভিড বিধি মানতে গিয়ে গণনা ধীর গতিতে হচ্ছে বলে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে। এই মুহূর্তে ফলের প্রবণতায় যদি চূড়ান্ত সিলমোহর পড়ে, তাহলে আগামী দিনে বিহার এনডিএ-র অন্দরে ভারসাম্যের বড়সড় রদবদল হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তার একটাই কারণ, উনসত্তর বয়সী নীতীশ কুমার।