Marital Rape: মহিলাদের উপর বৈবাহিক ধর্ষণ মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী, ক্রমেই জোরালো হচ্ছে প্রতিবাদ
Marital Rape: প্রথাগতভাবে বৈবাহিক সম্পর্কে ক্ষমতার ভারসাম্য ছিল স্বামীর পক্ষে। এক্ষেত্রে সেখানে কোনও বদল করা স্বামী-স্ত্রীর জন্য নয় বরং বিবাহের প্রতিষ্ঠানের জন্যও বেশ অস্বস্তিকর।
নয়া দিল্লি : স্ত্রীর সম্মতি ছাড়া যৌন মিলনকে মৌলিক অধিকার (Fundamental Rights) ও আইন লঙ্ঘন হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। এমনটাই দাবি উঠতে শুরু করেছে। উল্লেখ্য, ব্রিটেনের আইনবিদ স্যার ম্যাথিউ হেল ১৭৩৬ সাসেল বৈবাহিক ধর্ষণ সংক্রান্ত বিষয়ে বলেছিলেন, “কোনও স্বামী তা স্ত্রীর উপর বৈবাহিক ধর্ষণের (Marital Rape) জন্য দোষী সাব্যস্ত হতে পারে না। কারণ তাদের পারস্পরিক বৈবাহিক সম্মতি মাধ্যমে স্ত্রী নিজেকে তার স্বামীর কাছে সমর্পণ করেছে। এটিকে সে অস্বীকার করতে পারে না।” দুর্ভাগ্যবশত, ম্যাথিউ হেলের এই দৃষ্টিভঙ্গি বেশ কয়েকটি দেশে আইনি স্বীকৃতি পেয়েছে এবং এর ফলে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে অনিচ্ছাকৃত যৌনতাকে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করা হয় না।
কয়েক শতাব্দী ধরে চলে আসা চিন্তাধারা
অর্থাৎ, এই আইনটি এমন একটি চিন্তাধারার উপর তৈরি হয়েছিল, যে ক্ষেত্রে একজন পুরুষ ও একজন মহিলা বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে থাকার অর্থ তাদের মধ্যে সম্মতি থাকবে। সেই সময় বিয়েকে একটি নাগরিক চুক্তি হিসেবে দেখা হত। এই নাগরিক চুক্তির সংজ্ঞায় যৌনতার সম্মতিকেও ধরে নেওয়া হত। দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা এই আইনে পুরুষদেরও একটি বড় অংশ মনে করতেন, বিবাহের ফলে তারা সঙ্গীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের ‘লাইসেন্স’ পেয়ে যান, এমনকী তাতে যদি স্ত্রীর সম্মতি না থাকে তাহলেও।
কয়েক শতাব্দী ধরে চলে আসা এই ধারনার ক্ষেত্রে কিন্তু বিশ্বব্যাপী অনেক দ্রুত বদল আসতে শুরু করেছে। অনেক দেশেই, বর্তমানে বিবাহের পর স্ত্রীর সম্মতি ছাড়া যৌনতাকে ধর্ষণের অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। যত দিন এগোচ্ছে, ততই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বলপূর্বক যৌনতাকে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করার দাবি জোরালো হচ্ছে। মহিলাদের একটি বড় অংশ এই ধরনের সম্মতিহীন যৌন মিলনকে হিংসতা হিসেবেই দেখছেন।
জোরালো প্রতিবাদ উঠছে বৈবাহিক ধর্ষণের বিরুদ্ধে
বৈবাহিক ধর্ষণের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ থাকা সত্ত্বেও, মহিলাদের উপর এই অত্যাচার তুলনামূলকভাবে কম নজর কেড়েছে সমাজ বিজ্ঞানী, ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সামগ্রিক সমাজের কাছে। কিন্তু বর্তমানে এই সবের বিরুদ্ধে এখন আরও বেশি চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে। দিল্লি হাইকোর্টে বর্তমানে একটি মামলার শুনানি চলছে। মামলাটিতে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসাবে গণ্য করার দাবি জানানো হয়েছে। পিটিশনে বলা হয়েছে, ধর্ষণ আইনে মহিলারা যে যৌন নির্যাতনের শিকার হন, সেই অভিজ্ঞতার বাস্তব প্রতিফলন থাকা দরকার এবং সেই সঙ্গে বৈবাহিক ধর্ষণের ব্যতিক্রমটিকেও ধর্ষণ আইনের থেকে সরানো দরকার।
এই আবেদন করার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলি তুলে ধরা হয়েছে তা হল – বৈবাহিক ধর্ষণ কোনও যৌনতা নয়। এটি হিংস্রতা এবং বলপ্রয়োগ। যা একজন অনিচ্ছুক মহিলাকে যৌনতায় বাধ্য করে। এর পাশাপাশি বৈবাহিক ধর্ষণ সংবিধানের ২১ ধারা অনুযায়ী সম্মানের সঙ্গে বাঁচার মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। সেই সঙ্গে যৌনতা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে গোপনীয়তার অধিকারকেও লঙ্ঘন করে। এই পিটিশনে আইনের অসঙ্গতিগুলিও প্রতিকারের চেষ্টার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে, বিষয়টি যখন এতটাই স্পষ্ট, তাহলে বৈবাহিক সম্পর্কে বলপূর্বক যৌনতাকে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করতে সমস্যা কী হচ্ছে? আসলে সমস্যাটা যতটা সহজ দেখাচ্ছে, তত সহজ নন। বিগত কয়েক শতাব্দী ধরে বিবাহ ব্যবস্থার মধ্যে এমন একটি ধারণা চলে এসেছে, যাতে একজন মহিলা তার স্বামীর যৌন চাহিদা মেনে নেয়। এক্ষেত্রে স্ত্রীর সঙ্গে বলপূর্বক যৌন সম্পর্ক স্থাপনের জন্য স্বামীকে শাস্তি দেওয়ার কোনও ধারণা ছিল না।
প্রথাগতভাবে বৈবাহিক সম্পর্কে ক্ষমতার ভারসাম্য ছিল স্বামীর পক্ষে। এক্ষেত্রে সেখানে কোনও বদল করা স্বামী-স্ত্রীর জন্য নয় বরং বিবাহের প্রতিষ্ঠানের জন্যও বেশ অস্বস্তিকর। সুতরাং, যখন বৈবাহিক ধর্ষণের বিষয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে, তখন বিবাহের প্রতিষ্ঠান এবং সমাজে এর যে ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে, সেটির দিকেও দৃষ্টি রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে বৈবাহিক ধর্ষণের বিষয়টি আরও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা দরকার। আর এই ইস্যুটি বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারকেও বেশ কঠিন পরিস্থিতিতে এনে ফেলেছে। তবে স্ত্রীর সঙ্গে বলপূর্বক যৌন মিলন বৈবাহিক ধর্ষণ হিসেবে গণ্য হলে এটি কেন্দ্রীয় সরকারে লিঙ্গ-সমতার ধারণাকে প্রতিফলিত করবে।
আরও পড়ুন : Goa Polls : গোয়ার চতুর্মুখী লড়াইয়ে নয়া সমীকরণ, কংগ্রেসের ছায়া ছেড়ে জোট বাঁধল এনসিপি-সেনা