ভারতেও উঠে আসছে ‘স্পেসএক্স’-এর মতো সংস্থা, খেলা বদলে দিয়েছে মোদী সরকারের মহাকাশ নীতি

Modi govt's Space Policy: মোদী সরকারের মহাকাশ নীতির ফলে দেশে মহাকাশ ক্ষেত্রের বাণিজ্যিকীকরণ এবং মহাকাশ ক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থাগুলির অংশগ্রহণ দারুণভাবে বেড়েছে।

ভারতেও উঠে আসছে 'স্পেসএক্স'-এর মতো সংস্থা, খেলা বদলে দিয়েছে মোদী সরকারের মহাকাশ নীতি
প্রতীকী চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 26, 2022 | 7:15 AM

নয়াদিল্লি: ইলন মাস্কের ‘স্পেসএক্স’ সংস্থার নাম কে না জানে। ২০০২ সালে মাস্ক যখন এই সংস্থা তৈরি করেছিলেন, তখন অনেকেই হেসেছিলেন। বেসরকারি মহাকাশ সংস্থার ধারণাই ছিল না কারোর। গত দুই দশকে চিত্রটা আমূল পাল্টে গিয়েছে। শুধু ‘স্পেসএক্স’ নয়, ‘ব্লু অরিজিন’, ‘ভার্জিন গ্যালাকটিক’, ‘আরিয়ানস্পেসে’র মতো বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা মহাকাশ অভিযানের ক্ষেত্রে বিপ্লব এনেছে। অন্যদিকে, মহাকাশ ক্ষেত্রে ভারতীয় বিজ্ঞানীদের দুর্দান্ত সব কৃতিত্ব থাকা সত্ত্বেও, এতদিন, এই দেশের বেসরকারি মহাকাশ সংস্থাগুলি শুধুমাত্র সরকারি মহাকাশ কর্মসূচির সরবরাহকারী হিসাবেই থেকে গিয়েছে। কারণ, দশকের পর দশক ধরে ভারতে মহাকাশ কর্মসূচি এবং মহাকাশ নীতি সরকারের কাছে অগ্রাধিকার ছিল না। তবে, মোদী সরকার ২০৩০ সালের মধ্যেই বৈশ্বিক মহাকাশ খাতে ১০ শতাংশের বেশি বাজার ধরার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। আর এই লক্ষ্যপূরণে সরকারের বাজি হল বেসরকারী উদ্যোগের অংশগ্রহণ।

২০১৪ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পরই, মোদী সরকার মহাকাশ ক্ষেত্রে বেসরকারী উদ্যোগকে যুক্ত করার গুরুত্ব উপলব্ধি করেছিল। সরকার বুঝেছিল, এর ফলে মহাকাশ প্রযুক্তির বাণিজ্যিকীকরণ করা যাবে এবং মহাকাশ ক্ষেত্রে বেসরকারি বিনিয়োগও বাড়বে। এই বাণিজ্যিকীকরণ বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০২০ সালে সরকার ভারতীয় জাতীয় মহাকাশ প্রচার ও অনুমোদন কেন্দ্র বা ইনস্পেস (IN-SPACE) নামে একটি একক নোডাল এজেন্সি চালু করেছে। এর লক্ষ্যই হল বেসরকারি সংস্থাগুলিকে শুধুমাত্র সরবরাহকারী বা বিক্রেতা থেকে স্বাধীন মহাকাশ অভিযান সংস্থায় পরিণত হতে সাহায্য করা। একই বছরে মোদী সরকার মহাকাশ অভিযানের প্রতিটি পর্যায়ে বেসরকারি সংস্থাগুলির অংশগ্রহণের অনুমতি দিয়েছে। এছাড়া, ২০২১ সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্ডিয়ান স্পেস অ্যাসোসিয়েশন বা ইসপা (ISpA) চালু করেছেন। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা বা ইসরো (ISRO) এবং বেসরকারি মহকাশ সংস্থাগুলির মধ্যে প্রযুক্তির হস্তান্তর সহজতর করাটাই এই সংস্থার মূল লক্ষ্য।

ফলে, ক্রমে ভারতে মহাকাশ ক্ষেত্রে বেসরকারি উদ্যোগের অংশগ্রহণ বাড়ছে। বর্তমানে দেশে ৩৫০ টিরও বেশি বেসরকারি মহাকাশ সংস্থা রয়েছে। এই ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং জার্মানির পরেই রয়েছে ভারত। ২০২১ সাল থেকে ভারতের মহাকাশ ক্ষেত্রে বেসরকারি প্রস্তাবনার সংখ্যা ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ‘ইনস্পেস’ এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন এমএসএমই, স্টার্ট-আপ এবং অন্যান্য বেসরকারি সংস্থাগুলির, মহাকাশ সম্পর্কিত ৪০ টিরও বেশি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। স্টার্টআপ ইন্ডিয়া পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী, তাদের মহাকাশ প্রযুক্তি বিভাগের অধীনে প্রায় ৭৫ টি স্টার্ট-আপ নিবন্ধিত হয়েছে। এই সকল পরিবর্তনের ফল ইতিমধ্যেই দেখা যেতে শুরু করেছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নিউস্পেস ইন্ডিয়া লিমিটেড বা এনএসআইএল সংস্থা, তাদের প্রথম বাণিজ্যিক রকেট উৎক্ষেপণ করে। রকেটটি ১৯ টি উপগ্রহকে সাফল্যের সঙ্গে সুনির্দিষ্ট কক্ষপথে স্থাপন করেছে।

এখনও পর্যন্ত গোটা পৃথিবীতে ব্রডব্যান্ড পরিষেবা চলে মহাসাগরের তলে পাতা কেবল লাইন মারফত। তবে অদূর ভবিষ্যতে স্পেস ব্রডব্যান্ড পরিষেবা চালু হবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। ইলন মাস্কের সংস্থা ইতিমধ্যেই পরীক্ষামূলকভাবে এই উপগ্রহ নির্ভর ব্রডব্যান্ড পরিষেবা চালু করেছে। এই অবস্থায় ২০২০ সালেই, ভারতে একটি খসড়া স্পেসকম নীতি চালু করা হয়েছে। এই নীতিতে স্পেসকম সংস্থাগুলির জন্য একটি নির্দিষ্ট কাঠামোর কথা বলা হয়েছে। মহাকাশের দখল নিয়ে যেভাবে বিভিন্ন দেশ ও বেসরকারি সংস্থার মধ্যে প্রতিযোগিতা দেখা যাচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতে মহাকাশে যুদ্ধ হওয়াটা অসম্ভব নয় বলেই মনে করা হচ্ছে। মোদী সরকার ইতিমধ্যেই মহাকাশে ব্যবহারের উপযোগী অস্ত্র তৈরি করার জন্য ডিফেন্স স্পেস এজেন্সি বা ডিএসএ, স্থাপন করেছে।