Nitish Kumar’s Politics: দু’দশকে সাত বার মুখ্যমন্ত্রী! ফের ‘পাল্টি’ দিয়ে প্রমাণ করলেন নীতীশ আছেন নীতীশেই

Nitish Kumar: ২০১৭ সালে ইস্তফার কারণ হিসাবে নীতীশের ব্যাখ্যা ছিল, যে সরকারে দুর্নীতি জড়িয়ে পড়ে, সেখানে তিনি থাকতে চান না।

Nitish Kumar's Politics: দু'দশকে সাত বার মুখ্যমন্ত্রী! ফের 'পাল্টি' দিয়ে প্রমাণ করলেন নীতীশ আছেন নীতীশেই
নীতীশ কুমার
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 09, 2022 | 7:04 PM

কলকাতা: নীতীশকে গদি থেকে সরানো ‘মুশকিল নেহি, না-মুমকিন হ্যায়’। মঙ্গলের দুপুরে বিহারের রাজনীতির যে পট-পরিবর্তন দেখা গেল, তাতে নীতীশের সঙ্গে এই ডায়লগ অত্যন্ত মানানসই বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। আজই রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপাল ফাগু চৌহানের কাছে তাঁর ইস্তফাপত্র দিয়ে আসেন নীতীশ কুমার। সেই সঙ্গে বিজেপির সঙ্গে জোটে থাকা ৬৩১ দিনের সম্পর্কে ফের ইতি টানলেন বিহারের ‘সংখ্যালঘু’ মুখ্যমন্ত্রী। তবে, তাঁর এই পদক্ষেপে বিচলিত নন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। এটা অবশ্যম্ভাবীই ছিল মনে করছেন তাঁরা।

সাত বারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ। তার মধ্যে একবার হ্যাটট্রিক। কোনও বারই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাননি। তারপরও কখন লালু প্রসাদের আরজেডি, কখনও বিজেপির হাত ধরে বিহারের মসনদে বসেছেন নীতীশ। আবার নিজের ইচ্ছামতো জোটসঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে নতুন সরকার গড়েছেন। কেউ তাঁকে রুখতে পারেননি। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মজা করে বলেন, এটাই তাঁর ক্যারিশ্মা। ক্ষমতার অলিন্দে থাকতে যে কোনও সময় কারোর হাত ছেড়ে দিতে পারেন অনায়াসে। তেমনই শত্রুর হাত ধরতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না। রাজনৈতিক আঙিনায় তাঁর সহজ চরাচর আলাদা সিগনেচার তৈরি করেছে নীতীশকে। 

সাত দিনের মুখ্যমন্ত্রী:

২০০০ সালে প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হন নীতীশ কুমার। তবে মুখ্যমন্ত্রিত্বের মেয়াদ ছিল মাত্র ৭ দিনের। জনতা দল থেকে বেরিয়ে আসা জর্জ ফার্নান্ডেজ ও নীতীশ কুমারের সমতা পার্টি এনডিএ-র জোটসঙ্গী হয়ে ভোটে লড়ে। সে সময় লালু প্রসাদের আরজেডি এবং বিজেপি-সমতা পার্টি ও জেডিইউ-র এনডিএ জোট কেউ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। এনডিএর হাতে ছিল ১৫১টি বিধায়ক, লালুর কাছে ১৫৯ বিধায়ক। বাজপেয়ী সরকারের রেলমন্ত্রী নীতীশ কুমার মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েও সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে পারেননি। বাধ্য হয়ে সাত দিনের মাথায় ইস্তফা দেন নীতীশ। এরপর মুখ্যমন্ত্রী হন লালু-জায়া রাবড়ি দেবী।

নীতীশের প্রথম পূর্ণ মেয়াদের মুখ্যমন্ত্রী:

২০০৫ সালে দু’বার বিধানসভা নির্বাচন হয়। প্রথম বার কোনও দলই সরকার গড়ার মতো সংখ্যা পায়নি।   গতবারের থেকে ২৮টি আসন খুইয়ে ৭৫টি আসন পায় রাবড়ি দেবী নেতৃত্বাধীন আরজেডি। নীতীশের দল ৫৫, বিজেপি ৩৭ এবং এলজেপি পায় ২৮টি আসন। সরকার গড়ার দাবিদার কেউ ছিল না।

ফের ওই বছর অক্টোবরে নির্বাচন হয়। ব্যাপক ফল করেন নীতীশ কুমার। ৫৫ থেকে ৮৮ আসনে পৌঁছে যায় জেডিইউ। বিজেপিও ১৮টি আসন বাড়াতে সক্ষম হয়। এর ফলে বিজেপির সমর্থনে অনায়াসে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন নীতীশ। সম্পূর্ণ পাঁচ বছর সরকার চালাতেও সক্ষম হন তিনি। 

তৃতীয় বার মুখ্যমন্ত্রী:

ক্ষমতার আসনে বসে নীতীশের উত্থান রকেট গতিতে বাড়তে থাকে। একাধিক জনমুখী কাজ করে লালুর জনপ্রিয়তাকে ছাপিয়ে যায় নীতীশের সরকার। তার ফল সরাসরি পাওয়া যায় ২০১০ সালে বিহার নির্বাচনে। ১১৫টি আসন মেলে জেডিইউ-র। নিজের মাটি শক্ত করে বিজেপিও। ৯১টি আসন যায় গেরুয়া শিবিরে। কিন্তু লালু প্রসাদের দল কার্যত তলানিতে নেমে যায়। মাত্র ২২টি আসন পায় আরজেডি ও এলজেপি জোট। 

নীতীশের প্রথম পাল্টি এবং ইস্তফা:

২০১৪ লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে তৎকালীন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী দাবি যতই জোরালো হয়েছে, ততই এনডিএ-র সঙ্গে মতবিরোধ বেড়েছিল নীতীশের। নিজের মন্ত্রিসভা থেকে ১১ বিজেপি মন্ত্রীকে সরিয়ে দেন নীতীশ। ২০১৩ সালে ১৭ বছরের সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন তিনি। ২০১৪-র নির্বাচনে একা লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নেন এবং শোচনীয় ফল করে জেডিইউ। ৪০টি আসনে মাত্র ২ আসন পায় নীতীশের দল।   

লোকসভা নির্বাচনে খারাপ ফল করায় মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন নীতীশ। তাঁর ছায়াসঙ্গী জিতন রাম মাঝিকে নয় মাসের জন্য মুখ্যমন্ত্রী পদে বসান তিনি। 

লালুর হাত ধরে নির্বাচন:

এবার নির্বাচনে আর বিজেপির সঙ্গে জোট না বেঁধে লালু প্রসাদ যাদবের আরজেডি ও কংগ্রেসের সঙ্গে ‘মহাগঠবন্ধন’ তৈরি করেন নীতীশ। এই নির্বাচনে আরজেডি দুর্দান্ত ফল করে। তারপরও নীতীশকে মুখ্যমন্ত্রী পদ ছেড়ে দেন লালু। উপমুখ্যমন্ত্রী হন লালু পুত্র তেজস্বী যাদব। কিন্তু এ যাত্রাও মসৃণ হয়নি নীতীশের কাছে। মাত্র এক বছর ২৪৮ দিনের মাথায় ফের ইস্তফা দেন নীতীশ।

ফের বিজেপির হাত ধরে ক্ষমতায়:

২০১৭ সালে ইস্তফার কারণ হিসাবে নীতীশের ব্যাখ্যা ছিল, যে সরকারে দুর্নীতি জড়িয়ে পড়ে, সেখানে তিনি থাকতে চান না। তেজস্বী যাদবের নাম দুর্নীতিতে জড়ানোয় সরকার থেকে বেরিয়ে আসেন নীতীশ। এবং অপ্রত্যাশিতভাবে ফের বিজেপি হাত ধরে সরকার তৈরি করে নীতীশ কুমার। এই সময় উপমুখ্যমন্ত্রী হন বিজেপির সুশীল মোদী। নীতীশের এই পদক্ষেপে লালুর কটাক্ষ ছিল, নীতীশ আবার প্রমাণ করলেন পাল্টু রাম অব বিহার পলিটিক্স। ক্ষমতার জন্য তিনি যা খুশি করতে পারেন।

২০২০ সালে শোচনীয় ফল তবুও মুখ্যমন্ত্রী:

এই বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ভাল ফল করলেও নীতীশকেই মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মনোনীত করে। কিন্তু নীতীশ এই নির্বাচনে শোচনীয় ফল করে। বিজেপি যেখানে ৭৪টি আসন পায় নীতীশের জেডিইউ পেয়েছিল মাত্র ৪৩। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এবারের মুখ্যমন্ত্রী পদ ছিল নীতীশের কাছে গলার কাঁটা। বকলমে সরকার চালাবে বিজেপিই। 

কিন্তু মঙ্গলবার ফের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অনুমান ভুল প্রমাণ করলেন নীতীশ কুমার। আরও একবার আরজেডি-কংগ্রেস-বামের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার গড়তে চলেছেন নীতীশ। এবারও মুখ্যমন্ত্রী হওয়া তাঁর সময়ের অপেক্ষা।