Delhi High Court: সম্মতিক্রমে যৌনতার ক্ষেত্রে আধার কার্ড দেখে বয়স যাচাইয়ের দরকার নেই: দিল্লি হাইকোর্ট
Delhi High Court: সম্মতিক্রমে কোনও মেয়ের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে, সে যে নাবালিকা নয় তা নিশ্চিত করতে তাঁর জন্ম তারিখ বিচার বিভাগীয়ভাবে যাচাই করার প্রয়োজন নেই। সম্প্রতি এক নাবালিকা ধর্ষণে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জামিন দেওয়ার সময়, এই গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ করেছে দিল্লি হাইকোর্ট।
নয়া দিল্লি: সম্মতিক্রমে কোনও মেয়ের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে, সে যে নাবালিকা নয় তা নিশ্চিত করতে তাঁর জন্ম তারিখ বিচার বিভাগীয়ভাবে যাচাই করার প্রয়োজন নেই। প্যানকার্ড, আধার কার্ড বা স্কুলের রেকর্ড যাচাই করার প্রয়োজন নেই। সম্প্রতি এক নাবালিকা ধর্ষণে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জামিন দেওয়ার সময়, এই গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ করেছে দিল্লি হাইকোর্ট। পকসো আইনের অধীনে অভিযুক্ত ওই ব্যক্তিকে জামিন দেওয়ার সময়, বিচারপতি জসমিত সিংয়ের একক বিচারকের বেঞ্চ বলেছে, “যে ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির সঙ্গে সম্মতিক্রমে শারীরিক সম্পর্কে রয়েছে, তাঁর অন্য ব্যক্তির জন্ম তারিখ যাচাই করার প্রয়োজন নেই। তাঁকে আধার কার্ড, প্যান কার্ড দেখতে হবে না এবং শারীরিক সম্পর্ক করার আগে স্কুলের রেকর্ড থেকে জন্ম তারিখ যাচাই করতে হবে না।”
জামিনের আবেদনকারীর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির অধীনে ধর্ষণ এবং পকসো আইনের অধীনে নাবালিকা ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। ঘটনার সূত্রপাত ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। মেয়েটির অভিযোগ, অভিযুক্তের একটি পুরোনো ওয়াশিং মেশিন ছিল। সেটি কিনতে গিয়েই তাঁর সঙ্গে ওই অভিযুক্তের পরিচয় হয়েছিল। এরপর তারা ফোন নম্বর বিনিময় করে এবং ক্রমে তাদের মধ্যে ভাল বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। কিন্তু, এরপরই তাঁকে একটি হোটেলে ডেকে নিয়ে গিয়ে অভিযুক্ত তাঁর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে এবং সেই ঘটনার ভিডিয়ো রেকর্ড করে বলে অভিযোগ। এরপর থেকে অভিযুক্ত ওই ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ভিডিয়ো ব্যবহার করে তাঁকে ব্ল্যাকমেইল করে এবং একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করে। ২০২১ সালের অভিযুক্ত তাকে কিছু সময় তার বাড়িতে আটকেও রেখেছিল বলে দাবি করেছেন মেয়েটি। ওই বছর অগস্ট মাসে তিনি অভিযুক্তের বাড়ি থেকে পালিয়ে এক মহিলা আইনজীবীর শরণাপন্ন হয়েছিলেন। তাঁর সহায়তাতেই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে একটি এফআইআর দায়ের করেছিলেন।
অন্যদিকে, অভিযুক্তের আইনজীবী আদালতে জানান, মেয়েটি নিজের সুবিধামতো তাঁর জন্মতারিখ দেখিয়েছেন। এর একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পকসো আইনের ধারায় অভিযোগ দায়ের করা। তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ঘটনাটি ঘটলেও ২০২২ সালের ৩০ এপ্রিল এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়েছিল। কেন এত দেরি করা হয়েছে, সেই সম্পর্কে মেয়েটি কোনও ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। মেয়েটির ৪টি ভিন্ন জন্ম তারিখ রয়েছে। আধার কার্ডে বলা হয়েছে জন্ম হয়েছিল ১৯৯৮ সালের ১ জানুয়ারি, আবার প্যান কার্ডে বলা হয়েছে ২০০৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। অভিযুক্তের আইনজীবী আরও বলেন, এই এফআইআর দায়ের করার একমাত্র কারণ হল, অভিযুক্তের কাছ থেকে চাপ দিয়ে অর্থ আদায় করা। অভিযুক্ত সেই অবৈধ দাবি মানতে অস্বীকার করাতেই এই ধর্ষণের মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশের তদন্ত নিয়েও অভিযুক্তের আইনজীবী অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। মেয়েটির অ্যাকাউন্টে অভিযুক্ত যে অর্থ জমা দিয়েছে, সেই আর্থিক লেনদেনের তদন্ত করা হয়নি। অভিযোগকারীর আধারও যাচাই করা হয়নি।
এরপরই বিচারপতি জসমিত সিংয়ের বেঞ্চ বলে, মামলাটিতে চোখে যা দেখা যাচ্ছে, তার থেকে অনেক বেশি কিছু ঘটেছে। আদালত বলে অভিযোগকারী নিজেই জানিয়েছেন, ২০১৯ সাল থেকে অভিযুক্তের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল। যদি অভিযুক্ত তাঁকে ব্ল্যাকমেল করেছে বলে ধরে নেওযা হয়, তাহলেও প্রাথমিক পর্যায়ে তার পুলিশের কাছে যেতে বাধা ছিল না। আধার কার্ডে অভিযোগকারীর জন্ম তারিখ যা রয়েছে, তা অনুযায়ী ঘটনার সময়ে তিনি নাবালিকা ছিলেন না। তাই পকসো আইনের অধীনে কোনও মামলা তিনি করতে পারেন না। অভিযুক্ত জোর করে ওই আধার কার্ড তৈরি করিয়েছিল কি না, সেটা অবশ্য বিচারের মাধ্যমে প্রমাণের বিষয় বলে জানিয়েছে আদালত। তবে, অভিযোগকারীকে বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়েছে অভিযুক্ত। তাই, এটি একটি হানিট্র্যাপের ঘটনা হয়ে থাকতে পারে। এই প্রসঙ্গে ২০২০ সালের একটি মামলার কথাও উল্লেখ করেন বিচারপতি। এই বিষয়টি দিল্লির পুলিশ কমিশনারকে ব্যক্তিগতভাবে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।