কেন প্রার্থী বাছা হল দ্রৌপদী মুর্মুকে? নেপথ্যে রয়েছে গেরুয়া শিবিরের জটিল অঙ্ক

Presidential elections 2022: আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কেন দ্রৌপদী মুর্মুকে প্রার্থী করল বিজেপি? একাংশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্তের পিছনে জটিল রাজনৈতিক অঙ্ক রয়েছে।

কেন প্রার্থী বাছা হল দ্রৌপদী মুর্মুকে? নেপথ্যে রয়েছে গেরুয়া শিবিরের জটিল অঙ্ক
দ্রৌপদী মুর্মু
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 22, 2022 | 8:15 AM

নয়া দিল্লি: মঙ্গলবার আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে শাসক জোট এনডিএ-র প্রার্থী হিসাবে দ্রৌপদী মুর্মুর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। বিজেপির জাতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা জানিয়েছেন, বিজেপির সংসদীয় বোর্ড রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসাবে ২০ জনের নাম নিয়ে আলোচনা করেছে। বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, রাষ্ট্রপতি বাছাই করা হবে পূর্ব ভারত থেকে। তিনি আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হবেন এবং একজন মহিলা হবেন। দ্রৌপদী মুর্মু সাঁওতাল সম্প্রদায়ের। নিঃসন্দেহে তিনি বিজেপির সংসদীয় বোর্ডের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একেবারে মানানসই প্রার্থী। কিন্তু শুধু কি এই কারণেই তাঁকে বেছে নিল গেরুয়া শিবির? একাংশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্তের পিছনে জটিল রাজনৈতিক অঙ্ক রয়েছে।

সামনে বেশ কয়টি রাজ্যের নির্বাচন রয়েছে। চলতি বছরেই রয়েছে গুজরাটের বিধানসভা নির্বাচন। গুজরাটে কয়েক দশক ধরে বিজেপি রাজ করলেও, গ্রামীন এলাকায় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মন এখনও পায়নি তারা। ১৮২ বিধানসভা আসনের মধ্যে ২৭টি আসন সংরক্ষিত আদিবাসীদের জন্য। সব মিলিয়ে অন্তত ৬০টি আসনে জয়-পরাজয় নির্ভর করে আদিবাসী ভোটের উপর। ২০০৭ সালে এর মধ্যে পদ্ম শিবিরে এসেছিল ১৩টি আসন। ২০১২-তে ১১টি, আর ২০১৭-তে মাত্র ৯টি আসন।

এরপর ২০২৩-এ মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, ২০২৪-এ ওড়িশা, মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খণ্ড – প্রতিটি রাজ্যেই একটা বড় সংখ্যক ভোটার হলেন আদিবাসীরা। এরপর আসবে, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন। ৫৪৩ আসনের লোকসভায় ৪৭টি আসন তফসিলি উপজাতির জন্য সংরক্ষিত। আরও অন্তত ৬২টি আসনে ফলাফল নির্ভর করে আদিবাসী ভোটের উপর। এবার সেই আদিবাসী মন জয় করতেই দেশকে প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতি উপহার দিতে চাইছে বিজেপি তথা এনডিএ, এমনটাই মনে করা হচ্ছে।

বস্তুত, বিজেপি এই প্রক্রিয়া গত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেই সফলভাবে পরীক্ষা করে দেখেছ। ২০১৭ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে যখন দলিত নেতা রামনাথ কোবিন্দকে প্রার্থী করা হয়েছিল, সেই সময় বিজেপি এবং আরএসএস দলিত সম্প্রদায়ের মধ্যে নিজেদের প্রভাব বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়েছিল। কে.আর. নায়ায়ণণের পর, ভারতের দ্বিতীয় দলিত রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন কোবিন্দ। ফল মিলেছিল ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন এবং একের পর এক রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন দলিত সম্প্রদায়ের ভোট সফলভাবে নিজেদের পক্ষে আনতে পেরেছিল বিজেপি।

জেপি নাড্ডা ২০টি নামের কথা বললেও, সূত্রের খবর এনডিএ-র রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হওয়ার দৌড়ে সবার ছিল মূলত চারটি নাম। চারজনই আদিবাসী সম্প্রদায়ের – উপজাতি বিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা, ওড়িশার বিজেপি সাংসদ জুয়েল ওরাওঁ, ছত্তিশগড়ের রাজ্যপাল অনসূয়া উইকে এবং ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন রাজ্যপাল দ্রৌপদী মুর্মু। চারজনের মধ্যে আবার দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন অনসূয়া উইকে এবং দ্রৌপদী মুর্মু। তাঁরা দুজনেই আদিবাসী মুখ হওয়ার পাশাপাশি ছিলেন মহিলা। এর আগে ভারত একজনই মহিলা রাষ্ট্রপতি পেয়েছে, প্রতিভা পাতিল। অনসূয়া উইকে বর্তমানে ছত্তীসগঢ়ের রাজ্যপালের দায়িত্বে রয়েছেন। এই কারণেই সম্ভবত দ্রৌপদী মুর্মুকেই মনোনীত করা হল। তিনি জিতলে দেশ পাবে প্রথম আদিবাসী মহিলা রাষ্ট্রপতি।