সন্ত রামানুজের ১০০০ তম জন্মবর্ষ উপলক্ষে সাজো সাজো রব, বিশ্বে তাক লাগাবে ‘স্ট্যাচু অব ইকুয়্যালিটি’

Statue Of Equality: হায়দরাবাদের মুচিন্তালেকে গোটা বিশ্বের সামনে বিস্ময়করভাবে তুলে ধরার প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। 

সন্ত রামানুজের ১০০০ তম জন্মবর্ষ উপলক্ষে সাজো সাজো রব, বিশ্বে তাক লাগাবে 'স্ট্যাচু অব ইকুয়্যালিটি'
'স্ট্যাচু অব ইকুয়্যালিটি'
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 16, 2021 | 3:55 PM

সন্ত রামানুচার্যের ১০০০ তম জন্মবর্ষ উদযাপন ঘিরে সাজো সাজো রব হায়দরাবাদের নিকটস্থ সামশাবাদের আশ্রমে। সন্ত রামানুজ ছিলেন এক ভিগ্নান গুরু যিনি বিষ্ণুর আরাধনা করতেন এবং অষ্টাক্ষরী মন্ত্র ‘ওম নমো নারায়ণ’ সর্ব ধর্ম ও সমস্ত শ্রেণির মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন। এই সেই ভূমি যেখানে ভগবদ রামানুজ হাজার বছর আগে হেঁটেছিলেন এবং সেই ভূমি সহস্রাব্দী অনুষ্ঠান উদযাপনের মাধ্যমে আবারও পূণ্যলাভ করতে চলেছে। হায়দরাবাদের মুচিন্তালেকে গোটা বিশ্বের সামনে বিস্ময়করভাবে তুলে ধরার প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে।

আগামী বছর ফেব্রুয়ারি মাসে উদ্বোধন হবে বহুল প্রতীক্ষিত শ্রীমদ ভগবান রামানুজের ২১৬ ফুটের উচ্চতা বিশিষ্ট মূর্তি। তিনি সেই ধর্মগুরু, যিনি সাম্যের কথা বলেছিলেন। এই মুহূর্তের জন্য গোটা বিশ্ব অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল, এবং সেই অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে। সন্ত অন্নমাচার্য যাঁকে শ্রেষ্ঠ গুরু বলে সম্বোধন করেছিলেন, সেই গুরু শ্রী রামানুজের দর্শন পাওয়ার সময় হতে চলেছে।

হায়দরাবাদের নিকটবর্তী সামশাবাদের আশ্রম এলাকায় এখন থেকেই উৎসবের মেজাজ বর্তমান। শ্রী রামানুজের ১০০০ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের জন্য প্রতিষ্ঠানের বর্তমান প্রধান ত্রিদান্ডি চিন্না জিয়ার স্বামীর মস্তিষ্কপ্রসূত ‘স্ট্যাচু অব ইউনিটি’ তৈরির কাজও শেষ হয়েছে।

বহুদিনের অপেক্ষার মধ্যেই শ্রীমদ ভগবান রামানুজের মূর্তি উদ্বোধনের অনুষ্ঠান ২০২২ সালের ২ থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। এই উপলক্ষে শ্রী ত্রিদান্ডি চিন্না জিয়ার স্বামী ব্যক্তিগতভাবে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ এবং উপরাষ্ট্রপতি ভেঙ্কাইয়া নাইডুকে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানান। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ প্রধান বিচারপতি রামানাকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

সমতা…মমতা…আধ্যমিকা। ‘স্ট্যাচু অব ইকুয়্যালিটির’ এই বিস্ময়প্রকল্প অনেক বিস্ময় উন্মোচন করে। পদ্মফুলের উপর উপবিষ্ট অবস্থায় রামানুজের ২১৬ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট পঞ্চধাতুর মূর্তি বিশ্বের বিরলতম সৃষ্টি। মূর্তির চারপাশে নির্মিত ১০৮ টি মন্দির কালো পাথরে খোদাই করা হয়েছে এবং রাজস্থানে তৈরি হওয়া এর স্তম্ভগুলি একটি ইঞ্জিনিয়ারিং বিস্ময়।

অনুষ্ঠানের দিন হাজারের অধীক কুণ্ডে লোককল্যাণের জন্য লক্ষ্মী নারায়ণ যজ্ঞের আয়োজন করা হবে। মোট ১ হাজার ৩৫ টি হোমকুণ্ড তৈরি করা হবে এবং প্রায় ২ লক্ষ কেজি গরুর ঘি ব্যবহার করা হবে যজ্ঞের কাজে। মুচিন্তালের এই আশ্রম দিব্য সাকেতাম শীঘ্রই বিশ্ববিখ্যাত আধ্যাত্মিক স্থান হিসেবে জনপ্রিয় হবে হবে মনে করা হচ্ছে।

রামানুজ তাঁর ১২০ বছরের জীবনকালের বেশিরভাগ সময়টাই বিশিষ্টদ্বৈতের হিন্দু দর্শন প্রচারের জন্য ব্যয় করেছিলেন। রামানুজাচার্যই জাতি, বর্ণ এবং ধর্মের নামে বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেন এবং প্রস্তাব করেন যে সবার মধ্যেই সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বিরাজমান। এ জন্যই এই বিশালাকার নামকরণ করা হয়েছে ‘স্ট্যাচু অফ ইকুয়্যালিটি।’

রামানুজ ১০১৭ সালে তামিলনাড়ুর শ্রীপেরামবুদুরে জন্মগ্রহণ করেন। ২০১৭ সালে তাঁর জন্মের এক হাজার বছর পূর্ণ হয়। সেই সময়ই সংগঠনের বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান চিন্না জিয়ার স্বামী এই উৎসব উদযাপনের এবং ২০১৬ ফুট দীর্ঘ এই মূর্তি এবং ১০৮ টি দিব্য দেশম মন্দির নির্মাণের একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ৭০ তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপনেও রামানুজের সহস্রাব্দী উদযাপনের কথা পেয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে।

ভক্তরা বিশ্বাস করেন যে ভগবান আদিষা নিজেই রামানুজের অবতার গ্রহণ করেছেন। তিনি কাঞ্চি অদ্বৈত পণ্ডিতদের অধীনে বেদান্তে শিক্ষিত। তিনি বিশিষ্টদ্বৈত চিন্তাধারার প্রসার ঘটান এবং মন্দিরগুলিকে ধর্মীয় কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলেন। সাম্য, স্নেহ এবং ভক্তির মার্গই হল ঈশ্বরপ্রাপ্তির শ্রেষ্ঠ পন্থা। চিন্না জিয়ার স্বামী রামানুজের এই আদর্শের উপর ভর করেই এই বিরাট কাজে হাত দেন।

স্ট্যাচু অব ইকুয়্যালিটি গোটা বিশ্বে আধ্যাত্মিকতা, সমতা এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব নিয়ে একটি বিশেষ বার্তা দেয়। ২১৬ ফুট লম্বা রামানুজের মূর্তি, এবং ১০৮ টি মন্দির, দুই ক্ষেত্রেই সংখ্যাগুলির যোগফল হয় ৯। এমনকি, এই মূর্তি তৈরির কাজে ১৮০০ টন পঞ্চধাতু ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রেও সংখ্যাগুলির যোগফল ৯। যেহেতু ৯ সংখ্যাটিকে নানাভাবে শুভ বলে মনে করা হয়। সেই কারণেই এই সংখ্যা নানাভাবে মেলানো হয়েছে প্রতিটি ক্ষেত্রে।