Tripura: ৭৭ বছর পর অবস্থান বদলালো সিপিআইএম, বিজেপিকে ঠেকাতে মুখে এখন ‘রাজা’দের প্রশংসা

Tripura CPIM praise Tripra Motha: আগরতলায় একদিনের রাজ্য সম্মেলনের পর, ত্রিপুরা সিপিআইএম-এর রাজ্য সম্পাদক জীতেন্দ্র চৌধুরি প্রদ্যোৎ কিশোর মাণিক্য দেববর্মার নেতৃত্বাধীন 'তিপ্রা মোথা পার্টির' প্রশংসা করেছেন।

Tripura: ৭৭ বছর পর অবস্থান বদলালো সিপিআইএম, বিজেপিকে ঠেকাতে মুখে এখন 'রাজা'দের প্রশংসা
ত্রিপুরা সিপিআইএম-এর রাজ্য সম্পাদক জীতেন্দ্র চৌধুরি (ছবি সৌজন্য - টুইটার)
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 25, 2022 | 3:04 PM

আগরতলা: রাজতন্ত্র বিরোধী সংগ্রামের মধ্য দিয়েই ত্রিপুরায় সূচনা হয়েছিল বাম রাজনীতির। বিজেপিকে ঠেকাতে কি সেই রাজ পরিবারের হাতই ধরতে চলেছে সিপিআইএম? আগরতলায় একদিনের রাজ্য সম্মেলনের পর, দলের রাজ্য সম্পাদক জীতেন্দ্র চৌধুরির বক্তব্যে সেরকমই ইঙ্গিত মিলেছে। মঙ্গলবার (২৪ মে) তিনি জানিয়েছেন, রাজ পরিবারের বর্তমান সদস্য প্রদ্যোৎ কিশোর মাণিক্য দেববর্মার নেতৃত্বাধীন ‘তিপ্রা মোথা পার্টির’ ‘থানসা’, অর্থাৎ ঐক্যের স্লোগান বিরোধী নয় সিপিআইএম। শুধু তাই নয়, আদিবাসী যুবদের ঐক্যবদ্ধ করতে ‘তিপ্রা মোথা’র ভূমিকারও প্রশংসা করেন জীতেন্দ্র চৌধুরি। সেই সঙ্গে মোথার উদ্যোগেই আজ আদিবাসী যুবরা নিজেদের পরিচয় ও সংস্কৃতি নিয়ে গর্ববোধ করে বলে জানিয়েছে সিপিআইএম।

ত্রিপ্রা মোথা পার্টির প্রধান প্রদ্যোৎ কিশোর মাণিক্য দেববর্মা রাজ্যে ‘থানসা’ স্লোগান তুলেছেন। মূল বক্তব্য হল, জাতিগত ভেদাভেদ ভুলে ত্রিপুরায় ঐক্য স্থাপন। এই স্লোগানের বিরোধিতা করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে সিপিআইএম। দল ত্রিপুরার আদিবাসীদের সমস্যাবলীর সাংবিধানিক সমাধান চায় বলে জানিয়েছেন জীতেন্দ্র চৌধুরি। তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, জাতিগত ভিত্তিতে রাজ্যভাগের পক্ষে নয় কমিউনিস্টরা। জীতেন্দ্র চৌধুরি বলেন, ‘আমরা সাংবিধানিক সমাধান চাই। আমরা এর বিরোধিতা করব না। জনগণের সমস্যার সাংবিধানিকভাবেই সমাধান হওয়া উচিত। আমরা থানসার বিরোধী নই। আমরাও শান্তি চাই।’

ত্রিপ্রাল্যান্ড বা গ্রেটার ত্রিপ্রাল্যান্ড গঠনের দাবি গণতান্ত্রিক দাবি মেনে নিয়েও, সিপিআইএম জানিয়েছে, উত্তর পূর্বের এই রাজ্যের ক্ষেত্রে রাজ্যভাগ সম্ভব নয়। জীতেন্দ্র চৌধুরি বলেন, ‘আমরা বলছি না এটা (রাজ্যভাগের দাবি) গণতান্ত্রিক নয়। এর আগে রাজ্যভাগের ফলে ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়, উত্তরাখণ্ড এবং তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠিত হয়েছে। কিন্তু ভৌগোলিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক গঠনের কারণে ত্রিপুরায় তা সম্ভব নয়’। এই অবস্থায় আদিবাসী সমস্যার সমাধানে সিপিআইএম-এর অবস্থান হল, সাংবিধানিক সংশোধনী এনে ‘ত্রিপুরা আদিবাসী এলাকা স্বায়ত্তশাসিত জেলা পরিষদ’এর হাতে আরও ক্ষমতা দেওয়া।

সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক জানিয়েছেন, ১২৫ তম সাংবিধানিক সংশোধনী প্রস্তাবের অনুমোদনের জন্য চাপ দেবে সিপিআইএম। এই দাবিতে ১১ জুন গণ মুক্তি পরিষদ এবং আদিবাসী যুব ফেডারেশন রাজ ভবন অভিযান করবে। এই সংশোধনী বিলে অসম, মেঘালয়, ত্রিপুরা এবং মিজোরামের আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলির প্রশাসনে এই আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষিত করার কথা বলা হয়েছ। ২০১৮ সালেই বিলটি সংসদে পেশ করা হলেও, এখনও অবধি এটি অনুমোদন পায়নি। এই বিলটি পাস হলে, ‘ত্রিপুরা আদিবাসী এলাকা স্বায়ত্তশাসিত জেলা পরিষদ’এর হাতে আরও বেশি প্রশাসনিক ক্ষমতার পাশাপাশি আরও বেশি তহবিলও আসবে। প্রসঙ্গত, বর্তমানে এই পরিষদের শাসন ক্ষমতায় রয়েছে ত্রিপ্রা মোথা পার্টি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সিপিআইএম-এর পক্ষ থেকে ত্রিপ্রা মোথা পার্টির সঙ্গে জোট বাঁধার স্পষ্ট ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। জীবেন্দ্র চৌধুরি বলেছেন, ত্রিপুরার উন্নয়নে কাজ করবে, এরকম যে কোনও দলের সঙ্গে জোট বাঁধতেই সমস্যা নেই সিপিআইএম-এর। তবে, ত্রিপ্রা মোথার প্রতি সিপিআইএম-এর এই বার্তা যথেষ্ট বিস্ময়কর। কারণ, ১৯৪০-এর দশকে গণ মুক্তি পরিষদের রাজতন্ত্র-বিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়েই উত্তর পূর্বের এই রাজ্যে বাম রাজনীতির জন্ম হয়েছিল। সেই সময় ত্রিপুরার সিংহাসনে ছিলেন শেষ রাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুর। তাঁরই নাতির প্রশংসায় এখন পঞ্চমুখ সিপিআইএম। রাজ্য-রাজনীতির প্রেক্ষিতে কমিউনিস্ট পার্টির এই অবস্থান বদল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।