কোচি: চোখে জল এনে দিতে পারে এই কাহিনি। মানুষে মানুষে যতই প্রেম থাক, সেই সম্পর্কও কখনও ভেঙে যেতে পারে। কিন্তু বলা হয়, পশু-পাখিদের সঙ্গে একবার ভালবাসার সম্পর্ক হলে, তা স্থায়ী হয় সারা জীবন। এই কথাটা কতটা সত্যি, বারে বারে তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। এবার, আরও একবার এই কথা প্রমাণ করে ছাড়ল কেরলের কান্নুর জেলার এক কুকুর। কান্নুর জেলা হাসপাতালের মর্গের সামনে সে অপেক্ষা করছে, কখন তার মালিক বের হবে। আসলে, তার মালিকের যে মৃত্যু হয়েছে, তা সে বুঝতে পারেনি। তাই, গত চার মাস ধরে মৃত মালিকের জন্য মর্গের দরজায় অপেক্ষা করছে সে।
হাসপাতালের কর্মীরা জানিয়েছেন, এক রোগীর সঙ্গে হাসপাতালে এসেছিল কুকুরটি। বিকাশ কুমার নামে কান্নুর জেলা হাসপাতালের এক কর্মী বলেছেন, “চার মাস আগে হাসপাতালে এক রোগী এসেছিলেন। কুকুরটি তাঁর সঙ্গেই এসেছিল। দিন কয়েক পর, ওই রোগীর মৃত্যু হয়েছিল। কুকুরটি দেখেছে, হাসপাতালের সদর দরজা দিয়ে ওর মালিককে হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মৃতদেহগুলি মর্গের অন্য এক দরজা দিয়ে বের করা হয়। ওর মালিককেও যে সেই দরজা দিয়ে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তা বুঝতে পারেনি ও। কুকুরটির ধারণা, ওর মালিক এখনও এখানেই রয়েছে। যে দরজা দিয়ে তাঁকে ঢোকানো হয়েছিল মর্গে, সেই দরজা দিয়েই আবার বেরিয়ে আসবেন। তাই, কুকুরটি মর্গের দরজার সামনে থেকে নড়েনি। গত চার মাস ধরে ও এখানেই রয়েছে। মালিক কখন বেরিয়ে আসবে, তার অপেক্ষা করছে।”।
#WATCH | Kerala: “A patient came to the hospital four months ago and the dog had come along with the patient. The patient died and the dog saw the owner being taken to the mortuary…The dog feels that the owner is still here. The dog does not leave this place & has been here for… pic.twitter.com/ltaObviLn3
— ANI (@ANI) November 5, 2023
হাসপাতালের এক মহিলা কর্মী জানিয়েছেন, রামু হাসপাতালের অন্যান্য কুকুরদের সঙ্গে মেশে না। খিদে পেলে তারা যেরকম লাফালাফি করতে থাকে, রামু সেই রকম কিছু করে না। তার আচার-আচরণও অত্যন্ত ভাল। আর ভাল স্বভাবের জন্য, হাসপাতালের সমস্ত কর্মীদের সে বন্ধু হয়ে গিয়েছে। সকলেই তাকে ভালবাসে। মালিকের প্রতি তার আনুগত্য এবং বিশ্বস্ততা সকলকে মুগ্ধ করেছে। এমনকি কেরলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীনা জর্জের কানেও পৌঁছেছে রামুর কাহিনি। বীনা জর্জ যখন হাসপাতালে এসেছিলেন, সেই সময়ও রামু তার মালিকের অপেক্ষায় মর্গের বাইরে বসে ছিল। কান্নুর হাসপতাল চত্বরে যে কুকুরগুলি থাকে, তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছে সরকার। সেই খাবার থেকেই রামুকে খেতে দেন হাসপাতালের কর্মীরা।
মৃত মালিকের জন্য রামুর এই অপেক্ষার কাহিনি, মনে করিয়ে দিয়েছে জাপানের হাচিকোর গল্প। টোকিয়োর শিবুয়া স্টেশনের বাইরে সে প্রতিদিন তার মালিকের জন্য অপেক্ষা করত। ১৯২৫ সালে নিজের কার্যালয়েই আচমকা মৃত্যু হয়েছিল তার মালিকের। তারপরও, রোজ শিবুয়া স্টেশনের বাইরে এসে মালিকের জন্য অপেক্ষা করত হাচিকো। ১৯৩৫ সালে তার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত রোজ স্টেশনে আসত সে, যদি কোনও দিন ট্রেন থামলে নেমে আসে তার মালিক। হাচিকোর এই কাহিনি, গোটা বিশ্বের মানুষের হৃদয়ে মোচড় দেয়। শিবুয়া স্টেশনের বাইরে হাচিকোর একটি মূর্তিও স্থাপন করা হয়েছে।