রাঁচী ও মুম্বই: মহারাষ্ট্রে বিজেপি নেতৃত্বাধীন মহাযুতি জোটের বিপুল সাফল্য। ঝাড়খণ্ডে ফের ক্ষমতায় জেএমএম নেতৃত্বাধীন জোট। দুই রাজ্যে এই ফলের পিছনে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে মহিলাদের ভোট। রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, মহারাষ্ট্রে লড়কি বহিন যোজনার ফল পেয়েছে মহাযুতি। আর ঝাড়খণ্ডে মাইয়া সম্মান ফের জেএমএম নেতৃত্বাধীন জোট মসনদের দিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে।
২০১৯ সালে বিধানসভা নির্বাচনে মহারাষ্ট্রে ভোট পড়েছিল ৫৯.২৫ শতাংশ। পাঁচ বছর পর ভোটদানের হার ৬৫.২১ শতাংশ। আর ভোটদানের হার বাড়ার পিছনে রয়েছে মহিলাদের ভোটদানের হার। নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, ২০১৯ সালের চেয়ে মহারাষ্ট্রে মহিলাদের ভোটদানের হার বেড়েছে ৫.৯৫ শতাংশ। মুম্বই মেট্রোপলিটন এলাকায় ভোটদানের হার বেড়েছে ৭ শতাংশ। ২৮৮ বিধানসভার মহারাষ্ট্রে ৬০ বিধায়ক নির্বাচিত হন এই এলাকা থেকে। ২০১৯ সালের চেয়ে এবার এই এলাকায় ১৩ লক্ষ বেশি মহিলা ভোটার ভোট দিয়েছেন। থানে জেলায় মহিলা ভোটারের ভোটদানের হার ১১ শতাংশ বেড়েছে। আদিবাসী অধ্যুষিত পালঘর জেলায় মহিলা ভোটারের ভোটদানের হার বেড়েছে ৯ শতাংশ।
লড়কি বহিন যোজনা-
২০২৪ সালের জুনে একনাথ শিন্ডের সরকার লড়কি বহিন যোজনা শুরু করেন। এই প্রকল্পে ২১ থেকে ৬৫ সাল পর্যন্ত মহিলাদের মাসে ১৫০০ টাকা দেওয়া হয়। এবার নির্বাচনের ইস্তাহারে লড়কি বহিন যোজনায় মহিলাদের মাসে ২১০০ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট মহাবিকাশ আঘাড়িও মহিলাদের আর্থিক সাহায্যে প্রতিশ্রুতি দেয় ইস্তাহারে। বলা হয়, ক্ষমতায় এলে মাসে ৩০০০ টাকা দেওয়া হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহিলাদের হাতে নগদ টাকা দেওয়ার প্রকল্প প্রভাব ফেলেছে ভোটে। মহিলা ভোটারদের লম্বা লাইন পড়েছিল ভোটকেন্দ্রে। মহাবিকাশ আঘাড়ি প্রতিশ্রুতি দিলেও যেহেতু শিন্ডের সরকার ইতিমধ্যে টাকা দেওয়া শুরু করেছে, তাই ভোটে তার সুবিধা পেয়েছে তারা। মহাযুতি জোটের অন্য়তম নেতা তথা উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ার এদিন ফলাফল ঘোষণার পর বলেন, “এই নির্বাচনে গেম চেঞ্চার হয়ে দেখা দিয়েছে লড়কি বহিন যোজনা। এটাই আমাদের প্রত্যেক প্রতিপক্ষকে পরাজিত করেছে। এত বড় জয় আগে কখনও দেখিনি।”
ঝাড়খণ্ডে মাইয়া সম্মানের প্রভাব-
মহিলা ভোটের প্রভাব দেখা গিয়েছে ঝাড়খণ্ডেও। জেএমএম সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার আক্রমণ শানিয়েছিল বিজেপি। অনুপ্রবেশ ইস্যু, দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহরা। কিন্তু, ভোটের ফল বলছে, ৮১ বিধানসভার এই রাজ্যে ফের মসনদে বসছে জেএমএম নেতৃত্বাধীন জোট। রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, এই পিছনে রয়েছে মহিলাদের জন্য হেমন্ত সোরেন সরকারের মাইয়া সম্মান প্রকল্প। এই প্রকল্পে মহিলাদের মাসে ১০০০ টাকা দেওয়া হয়। আদিবাসী অধ্যুষিত এই রাজ্যের ৮১ আসনের মধ্যে ৮৫ শতাংশ কেন্দ্রে মহিলা ভোটারদের ভোটদানের হার পুরুষদের চেয়ে বেশি।
১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী মহিলাদের এই প্রকল্পে মাসে ১০০০ টাকা দেওয়া হয়। এই বছরের অগস্টের প্রথমে এই প্রকল্প চালু করেন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, মাত্র কয়েকমাস আগে এই প্রকল্প চালু করলেও মহিলারা হেমন্ত সোরেনকে সমর্থন জানিয়েছেন।
দুই রাজ্যের ফলের পর ফের আলোচনায় বাংলার লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একুশের নির্বাচনে তৃণমূলের বিপুল জয়ের পিছনে মহিলা ভোটারদের সমর্থনের কথা একবাক্যে স্বীকার করেন তৃণমূলের নেতারা। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের সময় দুর্নীতি ইস্যুতে বিরোধীরা তৃণমূলকে লাগাতার আক্রমণ করে। ভোটের ফলে দেখা যায়, বাংলায় ৪২টি আসনের মধ্যে ২৯টি পেয়েছে তৃণমূল। লোকসভা ভোটের প্রচারে লক্ষ্মীর ভান্ডারকে হাতিয়ার করেছিল রাজ্যের শাসকদল। এদিন বাংলার ৬ বিধানসভা আসনে উপনির্বাচনের ফল বেরিয়েছে। ৬টি আসনই পেয়েছে তৃণমূল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনও মহিলার হাতে টাকা তুলে দেওয়ার অর্থ সেই পরিবারের উপর শাসকদলের একটা ভাবমূর্তি তৈরি হওয়া। কারণ, একজন মহিলা ওই টাকা সংসারের প্রয়োজনে খরচ করেন।
শুধু বাংলা নয়। মধ্যপ্রদেশে মহিলাদের জন্য লাডলি বেহনা প্রকল্পের ফল নির্বাচনে পেয়েছে বিজেপি। ২০২৩ সালের মার্চে মধ্যপ্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান এই প্রকল্পের সূচনা করেন। নির্বাচনে বিজেপির ভাল ফলের পিছনে লাডলি বেহনার প্রভাবের কথা স্বীকার করেন তিনি। সম্প্রতি দিল্লির আপ সরকারও মহিলাদের মাসে ১০০০ টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, এবার মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ডেও সরকার গঠনে বড় ভূমিকা নিয়েছে মহিলাদের জন্য প্রকল্প।