KK Shailaja: সিপিএমের ‘দ্বিতীয় ঐতিহাসিক ভুল’, কেন শৈলজাকে ম্যাগসেসে পুরস্কার নিতে দিল না দল?

KK Shailaja Magsaysay award: সিপিআই(এম) বলেছে যে কেরালার প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে কে শৈলজা ফিলিপাইনের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি র্যামন ম্যাগসেসেয়ের নামে প্রবর্তিত পুরস্কারটি গ্রহণ করবেন না। কিন্তু কেন?

KK Shailaja: সিপিএমের 'দ্বিতীয় ঐতিহাসিক ভুল', কেন শৈলজাকে ম্যাগসেসে পুরস্কার নিতে দিল না দল?
অনেকেই বলছেন এটা সিপিআইএমের 'দ্বিতীয় ঐতিহাসিক ভুল'
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 04, 2022 | 9:30 PM

তিরুঅনন্তপুরম: কোভিড-১৯ মহামারির প্রথম তরঙ্গের সময়, মহামারি প্রতিরোধে কেরলের সাফল্য সারা বিশ্বে আলোচিত হয়েছিল। আর এই বিষয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কেরলের তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে কে শৈলজা। সেই শৈলজাকে বর্তমান মন্ত্রিসভায় স্থান দেয়নি সিপিআইএম। এবার দলের পক্ষ থেকে ব়ামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার গ্রহণ করতেও তাঁকে বাধা দেওয়া হল। দলের নির্দেশে এই মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক পুরষ্কার নিতে অস্বীকার করলেন কে কে শৈলজা। আর এই নিয়ে কেরলে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক।

রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর) দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সংবাদপত্রের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সুষ্ঠু জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, কার্যকরভাবে নিপা মহামারির মোকাবিলা করা এবং রাজ্যে কোভিড -১৯ প্রাদুর্ভাবের মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য, ৬৪তম ম্যাগসেসে পুরস্কারের জন্য কে কে শৈলজাকে মনোনীত করেছিল ‘ব়ামোন ম্যাগসেসে অ্যাওয়ার্ড ফাউন্ডেশন’। কিন্তু, দলের জাতীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার পর, এই পুরস্কার গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছেন শৈলজা। পরে শৈলজা নিজে এবং দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি – দুজনেই পুরস্কার প্রত্যাখ্যানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তাঁরা জানিয়েছেন, ফিলিপাইন্সের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট রামোন ম্যাগসেসের নামে রকফেলার ব্রাদার্স ফান্ড এই পুরস্কারটি দিয়ে থাকে। প্রেসিডেন্ট ম্যাগসেসে একজন কট্টর কমিউনিস্ট বিরোধী ছিলেন। সেই কারণেই শৈলজার পুরস্কারটি গ্রহণ করা উচিত নয় বলে মনে করছে দল। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শৈলজাকে পার্টি বলেছে, ১৯৫০-এর দশকে কমিউনিস্ট গেরিলাদের বিরুদ্ধে কঠোর দমন-পিড়নের পথ নিয়েছিলেন ম্যাগসেসে। এই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কের সূত্রপাত হওয়ায়, শৈলজা বলেছেন, যে সাফল্যের জন্য তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে পুরস্কৃত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তা আসলে দলের সম্মিলিত নেতৃত্বের সাফল্য, তাঁর ব্যক্তিগত সাফল্য নয়। প্রসঙ্গত, র‌ামোন ম্যাগসেসে পুরস্কারকে, এশিয়ার নোবেল পুরস্কার বলা হয়। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিঃস্বার্থ সেবার জন্য কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।

শৈলজা বলেছেন, “পুরস্কার কমিটিকে আমি এই সম্মাননা গ্রহণ করার বিষয়ে আমার অক্ষমতার কথা জানিয়েছি। স্বাস্থ্য খাতে দ্রুত অগ্রগতির পিছনে সম্মিলিত নেতৃত্বের অবদান ছিল, এটা কোনও ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার ফসল নয়। এই বিষয়ে দলের সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ একমত। আমার মতো একজন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যের জন্য পার্টিই সবকিছু। একজন কমিউনিস্টের জন্য পার্টি সর্বোচ্চ এবং আমি তার নির্দেশে চলছি। আমি একজন রাজনৈতিক নেতা, কোনও সমাজকর্মী নই।” তিনি বিতর্ককে চাপা দিতে চাইলেও, অনেকেই তা মানছেন না। এমনকি, অনেকে ঘটনাটিকে দুই দশক আগে জ্যোতি বসুর জন্য প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার মতো “ঐতিহাসিক ভুল”-এর সঙ্গে তুলনা করছেন। যদিও কেরলের প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মতে, দুটি ঘটনার কোনও তুলনাই হয় না।

দলের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে এই বিষয়ে এখনও কোনও মন্তব্য না করা হলেও, সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, “রামোন ম্যাগসেসে কমিউনিস্ট বিরোধী ছিলেন, তাই তাঁর নামে সম্মান পাওয়ার বিষয়ে আমাদের আপত্তি আছে। এছাড়া, তাঁকে (শৈলজা) তাঁর ব্যক্তিগত যোগ্যতায় নির্বাচিত করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দল সবসময়ই সম্মিলিত নেতৃত্বে চলে। তাই আমরা এটা গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” সূত্রের খবর, দলের অধিকাংশই এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন। তাঁদের মতে, ২০১৮ সালে নিপা মহামারি এবং পরে কোভিড-১৯ মহামারি নিয়ন্ত্রণে রাজ্য সরকারের প্রচেষ্টা ছিল একটি সম্মিলিত আন্দোলনের অংশ। তাই,শৈলজার ব্যক্তিগত ক্ষমতায় পুরস্কার গ্রহণ করা উচিত নয়।

তবে, দলের একাংশ এবং দলের বাইরে অনেকেই দাবি করেছেন, পিনারাই বিজয়নই পিছন থেকে কলকাঠি নেড়ে, শৈলজাকে এই সম্মান প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করলেন। প্রসঙ্গত, এর আগে সিপিআই(এম) নয়া মন্ত্রিসভা গঠনের সময় শৈলজা-সহ সকল মন্ত্রীর মুখ বদলে দিয়েছিল সিপিআইএম। শুধু মুখ্যমন্ত্রী পদে থেকে গিয়েছিলেন এর আগেও যেমন সব মন্ত্রীদের বদলে দিলেও, মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নকে তাঁর পদেই থেকে গিয়েছিলেন বিজয়ন।

লেখক এবং রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক এম এন কারাসেরি বলেছেন, “একজন ভারতীয় এবং কেরলাবাসী হিসাবে আমি হতাশ। আমরা একটি সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করলাম। এই ধরনের সম্মান রাষ্ট্রকে আরও গৌরব এনে দিত। এর মধ্যে তুচ্ছ রাজনীতি আসটা দুঃখজনক।” আইনজীবী তথা রাজনৈতিক বিশ্লেষক এ জয়শঙ্কর বলেছেন, “যদি পিনারাই বিজয়নকে পুরস্কার দেওয়া হয় তবে তিনি ইতিমধ্যেই সেটা নিতে উড়ে যেতেন। সকলেই জানে পার্টির হুকুম বড়দের জন্য প্রযোজ্য নয়। অতীতের ভুল থেকে এখনও শিক্ষা নিতে পারেনি সিপিআই(এম)।”