Shashi Tharoor: কংগ্রেসের ডুবন্ত তরীতে ‘খোলা পাল’ শশী থারুর, খাড়্গের অভিজ্ঞতাকে মাত দিতে পারেন এই কারণেই…

Congress President Election: একের পর এক নির্বাচনে ভরাডুবি, একাধিক বিষয়ে দলের অবস্থান নিয়ে বছরের পর বছর ধরে ক্ষোভ জমতে শুরু করে দলীয় কর্মীদের মনে। দলের একাংশের তরফে দাবি করা হয়, বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে এবং কেন্দ্রে প্রধান বিরোধী দল হিসাবে টিকে থাকতে দলের রাশ থাকা উচিত অ-গান্ধী কোনও সদস্যদের হাতে।

Shashi Tharoor: কংগ্রেসের ডুবন্ত তরীতে 'খোলা পাল' শশী থারুর, খাড়্গের অভিজ্ঞতাকে মাত দিতে পারেন এই কারণেই...
কংগ্রেস সভাপতি হতে পারবেন শশী থারুর?
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Oct 17, 2022 | 10:10 AM

নয়া দিল্লি: দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান। আজই হতে চলেছে কংগ্রেসের জাতীয় সভাপতি নির্বাচন। লড়াই হবে কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা তথা সাংসদ মল্লিকার্জুন খাড়গের সঙ্গে আরেক সাংসদ শশী থারুরের। ইতিমধ্যেই একাধিক রাজ্য ঘুরে প্রচার সেরে ফেলেছেন দুই প্রার্থী। ভোট এখনও শুরু না হলেও, প্রার্থী হিসাবে নাম ঘোষণার পর থেকেই পাল্লা ভারী রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গের। তিনি কংগ্রেসের ‘অফিশিয়াল’ প্রার্থী। এমনই হেভিওয়েট নেতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছেন তিরুবনন্তপুরমের সাংসদ শশী থারুর। লড়াইয়ের ময়দান যে এত সহজে তিনি ছাড়বেন না, তা আগেই সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচনে শশী থারুর এত গুরুত্বপূর্ণই বা কেন?

মল্লিকার্জুন খাড়গের মতো পোড় খাওয়া রাজনৈতিক নেতা না হলেও, রাজনীতিতে অভিজ্ঞতা কম নয় শশী থারুরের। কেরলের তিরুবনন্তপুরমের সাংসদ অত্যন্ত জনপ্রিয়। তাঁর থেকেও বেশি জনপ্রিয় হয়তো তাঁর চোস্ত ইংরেজি ও মজাদার জবাব। বড় বড় ইস্যুতেও সরকারের বিরুদ্ধে হাসিমুখেই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর যে জ্ঞান রয়েছে, তাতেও জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু এইসবকিছুর উপরে গিয়েও কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচনে শশী থারুরের প্রার্থী হওয়া অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। তার অন্যতম কারণগুলি হল-

কেন গুরুত্বপূর্ণ শশী থারুরের পাওয়া ভোট?

নির্বাচন এখনও শুরু না হলেও, ফল প্রায় সকলেরই জানা। সকলেরই অনুমান, গান্ধী পরিবারের সমর্থন থাকায় সভাপতি নির্বাচনে জয়ী হতে পারেন মল্লিকার্জুন খাড়্গে। তবে শশী থারুরের ভোটের খাতা যে একেবারেই শূন্য থাকবে, এমনটাও নয়। সেক্ষেত্রে তিনি যে সংখ্যক ভোট পাবেন, তা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। কারণ শশী থারুরকে যারা সমর্থন জানিয়ে ভোট দেবেন, তারা পরোক্ষে গান্ধী পরিবারের একনায়কতন্ত্র ও কংগ্রেসের পুরনো রীতির বিরুদ্ধেই মত প্রকাশ করবেন। যদি মল্লিকার্জুন খাড়্গেও সভাপতি হিসাবে নির্বাচিত হন, সেক্ষেত্রেও দলের অন্দরেই বিরোধীদের এই কন্ঠকে তিনি উপেক্ষা করতে পারবেন না। সম্প্রতিকালে কংগ্রেসে যেভাবে ভাঙন ধরেছে এবং একের পর এক পুরনো ও শীর্ষ নেতারা ইস্তফা দিয়েছেন, সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই শশী থারুরের পাওয়া ভোট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গোপন ব্যালট কি বদলে দেবে নির্বাচনের ফল?

কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ গোপন ব্যালটে হওয়ায়, ফল বদলে যাওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। বিগত কয়েক বছরে গান্ধী পরিবারের জনপ্রিয়তা অনেকটাই কমেছে। দলীয় কর্মীদের মনেও ক্ষোভ, অসন্তোষ জমে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন এবং তাতে মত প্রকাশের গোপনীয়তা থাকায় জি-২৩ সদস্য ছাড়াও সাধারণ কংগ্রেস কর্মীরা শশী থারুরকেই ভোট দিতে পারেন দলের প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার জন্য।

কংগ্রেসে গান্ধী পরিবারের একাধিপত্য শেষ করতে পারেন থারুর-

স্বাধীনতার পর থেকেই দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের রাশ  ছিল গান্ধী পরিবারের হাতেই। কিন্তু একের পর এক নির্বাচনে ভরাডুবি, একাধিক বিষয়ে দলের অবস্থান নিয়ে বছরের পর বছর ধরে ক্ষোভ জমতে শুরু করে দলীয় কর্মীদের মনে। দলের একাংশের তরফে দাবিও করা হয়, বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে এবং কেন্দ্রে প্রধান বিরোধী দল হিসাবে টিকে থাকতে দলের রাশ থাকা উচিত অ-গান্ধী কোনও সদস্যদের হাতে। শশী থারুর হলেন অ-গান্ধী মুখের অন্যতম উদাহরণ। একদিকে মল্লিকার্জুন খাড়গে যেমন গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ, সেখানেই শশী থারুর কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী জি-২৩ শিবিরের সদস্য। এই জি-২৩ শিবিরই ২০১৯ সালে দলনেত্রী সনিয়া গান্ধীর কাছে চিঠি লিখে কংগ্রেসের অন্দরে একাধিক পরিবর্তন আনার দাবি জানিয়েছিল।

নিজের চিন্তাধারায় কংগ্রেস পরিচালন করতে পারেন শশী-

এবারের কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না গান্ধী পরিবারের কোনও সদস্য। তবে তাদের পছন্দের প্রার্থী রয়েছে। নির্বাচনের প্রার্থী হিসাবে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের নাম যখন উঠে এসেছিল, তখনই এই তত্ত্ব সামনে এসেছিল যে গেহলট যদি সভাপতি হিসাবে নির্বাচিত হন, তবে তিনি গান্ধী পরিবারের হাতের পুতুল হয়েই থেকে যাবেন। দলের যাবতীয় সিদ্ধান্ত পিছন থেকে গান্ধী পরিবারই নেবে। গেহলটের বিকল্প হিসাবে শেষদিনে যখন কংগ্রেসের ‘অফিশিয়াল’ প্রার্থী হিসাবে মল্লিকার্জুন খাড়্গের নাম ঘোষণা হতেই সেই তত্ত্বই ফের উঠে আসে। সেখানেই খাড়্গের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা শশী থারুর। নির্বাচনী ইস্তেহারে মল্লিকার্জুন খাড়্গে যেখানে উদয়পুর শিবির থেকে শুরু করে কংগ্রেসের কার্যপদ্ধতি নিয়ে কথা বলেছিলেন, সেখানেই শশী থারুর তাঁর ইস্তেহারে তৃণমূলস্তরের দলীয় কর্মীদের শীর্ষ নেতাদের কাছে পৌঁছে যাওয়ার সুযোগ থেকে শুরু করে দলীয় শাখাগুলির হাতে ক্ষমতা দেওয়ার মতো একাধিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কংগ্রেসের বদ্ধ পরিবেশে এক প্রকার খোলা হাওয়াই এনেছেন শশী থারুর।