কলকাতা: মানবসেবা ছিল যাঁর একমাত্র ধর্ম, সেই ডাক্তারকেই (Doctor) চিকিৎসার জন্য পড়তে হল জালিয়াতদের খপ্পরে। এক টাকার ডাক্তার। এই নামেই বোলপুর (Bolpur) শহরে মানুষ চিনতেন পদ্মশ্রী ডাঃ সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়কে। দরিদ্র রোগীদের সেবায় নিজের জীবন উজাড় করে দিয়েছিলেন সুশোভনবাবু। তবে রোগী দেখতেন মাত্র ১ টাকায়। তিনিই শেষ বয়সে ভুগেছিলেন কিডনি সমস্যায়। এমনকী কিডনি অকেজো হয়ে গিয়েই ৮৪ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন কলকাতায়। কিন্তু, শেষ বয়েসেও তিনি হয়েছিলেন জালিয়াতির শিকার। তবে বর্তমানে কলকাতা পুলিশের (Kolkata Police) তৎপরতায় জালিয়াতদের ঠাঁই হয়েছে গারদে। কিন্তু, লক্ষাধিক টাকার জালিয়াতির পরে কীভাবে দুষ্কৃতিদের ধরল কলকাতা পুলিশ? এই কাহিনী হার মানাবে যে কোনও সিনেমার চিত্রনাট্যকে।
সম্প্রতি কলকাতা পুলিশের ফেসবুকে পেজ থেকে গোটা ঘটনার কথা জানিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। তাতেই দেখা যাচ্ছে কীভাবে বুদ্ধি ও প্রযুক্তির সহায়তায় অভিযোগ পাওয়ার মাত্র ১০ দিনের মাথায় জালিয়াতদের ধরতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। এই কাহিনী শোনার পর কলকাতা পুলিশের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছে সমাজের একটা বড় অংশের মানুষ। সূত্রের খবর, জুলাই মাসে বাবার অবস্থার অবনতি বুঝে তাঁর জন্য একটি হিমো-ডায়ালিসিস মেশিন কেনার চেষ্টা করছিলেন ডাক্তারবাবুর কন্যা ডাঃ মন্দিরা ব্যানার্জি। অনলাইন সার্চ করে ‘রাধে কিডনি ইকুইপমেন্ট’ নামক এক সরবরাহকারীকে খুঁজে বের করেন তিনি। যাঁর ঠিকানা গুজরাতের আহমেদাবাদ। বেশ কয়েক দফা কথোপকথনের পর ১৩ জুলাই থেকে শুরু করে তাঁর নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে বিক্রেতার অ্যাকাউন্টে মোট ৪ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা কয়েক কিস্তিতে জমা করেন মন্দিরা দেবী।
এদিকে মেশিন ডেলিভারি হওয়ার কথা ছিল ২২ জুলাই। কিন্তু সেদিন ফোনে আর কিছুতেই বিক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি মন্দিরা দেবী। এমনকী মেশিন কেনার পর যে চালান তাঁকে দেওযা হয়েছিল তাতে যে ফোন নম্বরটি ছিল তাতে ফোন করেও চোখ কপালে ওঠে তাঁর। দেখা যায় নম্বরটি এক সম্পূর্ণ অপরিচিত ভদ্রমহিলার, যা অবৈধভাবে ব্যবহার করছে বিক্রেতা। এরপরই তিনি দ্বারস্থ হন পুলিশের। মানিকতলা থানায় দায়ের হয় অভিযোগ।
জোরদার তদন্ত শুরু করে পুলিশ। যেসব ব্যাঙ্কে টাকা জমা পড়েছিল সেই অ্যাকাউন্টগুলির মালিকানা নির্ধারণ করে সেগুলি ‘ফ্রিজ’ অর্থাৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তদন্তে উঠে আসে তিনটি নাম, মিলন মানসুখভাই ভদোদরিয়া, কৃত্তিকা রবীন্দ্র কুমার, এবং রবীন্দ্র কুমার সুতার। তিনজনেই আহমেদাবাদের বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে। তিন অভিযুক্তের অবস্থান নিশ্চিত করার পর আহমেদাবাদের উদ্দেশ্যে রওনা হয় মানিকতলা থানার একটি দল। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় পুলিশ ও অন্যান্য সূত্রের সহায়তায় ১ অগাস্ট ভদোদরিয়া ও সুতারকে গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্তদের। সাইবার শাখার সাহায্যে উদ্ধার করা হয় পুরো টাকাটাই।