2006 WB Assembly Rampage: ‘আমাকে মেরেছে…রোজ মারে’, সংবিধান হাতে বেরিয়ে এলেন মমতা, তারপরই… বিধানসভায় কী ঘটেছিল সে দিন?

2006 WB Assembly Rampage: বুধবার আদালতে শুভেন্দু অধিকারীর করা একটি মামলায় উঠে আসে ২০০৬-এর বিধানসভায় ভাঙচুরের প্রসঙ্গ।

2006 WB Assembly Rampage: 'আমাকে মেরেছে...রোজ মারে', সংবিধান হাতে বেরিয়ে এলেন মমতা, তারপরই... বিধানসভায় কী ঘটেছিল সে দিন?
বিধানসভায় ভাঙচুর চালিয়েছিল তৃণমূল
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 14, 2022 | 10:56 AM

কলকাতা: সংবিধান হাতে বিধানসভা থেকে বেরিয়ে আসছেন মমতা। বলছেন, ‘আমাকে ওরা মেরেছে।’ তার কিছুক্ষণের মধ্যে প্রবল শব্দ বিধানসভা কক্ষে। কেউ ছুড়ে ফেলছেন চেয়ার, কেউ উল্টে দিচ্ছেন টেবিল। বিধানসভার সেই বেনজির দৃশ্য বাংলার রাজনীতি মনে রাখবে অনেক দিন। পরের দিন বহু মানুষ দেখতে গিয়েছিলেন তছনছ হওয়া বিধানসভার সেই ছবি।

২০০৬… মনে করালেন বিচারপতি

তখন বিরোধী নেত্রী হিসেবে বাংলার রাজনীতি কাঁপাচ্ছেন মমতা। বিক্ষোভে, মিছিলে সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান তুলছেন প্রতিনিয়ত। একটু একটু করে দানা বাঁধছে সিঙ্গুর আন্দোলন। সেরকম একটি সময়েই নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী হয় বিধানসভা। প্রায় ১৬ বছর আগের ঘটনা হলেও, আজও শাসক-বিরোধী তরজায় উঠে আসে সেই প্রসঙ্গ। বুধবার সেই ঘটনার কথা উঠে এল হাইকোর্টের এজলাসেও। বিরোধী আসনে থাকা তৃণমূল তখন কী করেছিল, সে কথা মনে করিয়ে দিলেন বিচারপতি।

২০০৬ সালের ৩০ নভেম্বর বিধানসভায় আসবাবপত্র ভাঙচুর করেছিলেন তৃণমূল বিধায়করা। আজ সেই তৃণমূল শাসন ক্ষমতায়, সেই বিধায়কদের কেউ কেউ আজ রাজ্যের মন্ত্রী। আর এখন বিরোধীরা সেই ঘটনার কথা মনে করিয়ে কটাক্ষ করে থাকে শাসক দলকে। বুধবার খোদ বিচারপতিও সেই প্রসঙ্গ টেনে কার্যত ভর্ৎসনা করলেন রাজ্যকে।

প্রেক্ষাপট সিঙ্গুর

সিঙ্গুরে টাটাদের জমি দেওয়ার প্রক্রিয়া তখন ত্বরান্বিত হচ্ছে। আর তার বিরোধিতা করে আন্দোলন সংগঠিত করছেন বিরোধী দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে দিনও সিঙ্গুরেই যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু, যাওয়ার আগে মাঝপথেই আটকে দেওয়া হয় তাঁকে। মমতা অভিযোগ করেছিলেন, মাত্র দু’জন যেতে চেয়েছিলেন সিঙ্গুরে। কিন্তু ডানকুনির কাছেই তাঁদের আটকে দেওয়া হয়। সেখান থেকে তিনি সোজা ফিরে আসেন বিধানসভায়। সেখানেও বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছিলেন মমতা। এরপরই রণমূর্তিতে শাসক দলের দিকে আঙুল তুলতে শুরু করেন তিনি।

‘পেটাতে পেটাতে নিয়ে এসেছে…প্রতিদিন কত মার খাব?’

হাতে সংবিধান। পরিচিত সাদা শাড়ি গায়ে জড়ানো। আঁট করে বাঁধা খোঁপা। হাতে সংবিধান নিয়ে মমতা বলে চলেছেন, ‘আমাকে রাস্তায় বেরতে দিচ্ছে না… মারছে। পুলিশ পেটাতে পেটাতে নিয়ে এসেছে। আমাকে বলছে অ্যাসেম্বলিতে ঢুকতে দেবে না… পেটে লাথি মারছে। আমি গণতন্ত্রের দরবারে দাঁড়িয়ে আছি… এটা কারও বাপের জমিদারি নয়। আমায় রোজ ওরা মারে। বুদ্ধবাবুর বুদ্ধি বিভ্রাট হয়েছে। প্রতিদিন কত মার খাব?’

তারপরই বিকট শব্দ

মমতাকে তখন ঘিরে ফেলেছে সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা। আর কয়েক মিনিটের মধ্যে বিধানসভা কক্ষ থেকে বেরিয়ে এলেন তৃণমূল বিধায়করা। একে একে নেত্রীর কাছে এলেন সৌগত রায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকরা। চুলের মুঠি ধরে কী ভাবে মেরেছে পুলিশ, তা বিধায়কদের জানালেন মমতা। মুহূর্তে বদলে গেল বিধানসভার চেহারা।

আচমকা প্রচণ্ড শব্দ। চেয়ার, টেবিল, কাগজ পত্র সব তছনছ করে ফেলা হল। সে দিন যাঁদের অগ্রণী ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল, তাঁদের কেউ কেউ আজ রাজ্যের মন্ত্রী। আবার তাঁদের মধ্যে অনেককে তৃণমূল ছাড়তেও দেখে গিয়েছিল পরবর্তীতে। ক্য়ামেরার সামনেই লাইটার চাইছেন সোনালি গুহ, টেবিল-চেয়ার গুঁড়িয়ে দিতে এগিয়ে আসছেন অর্জুন সিং। সেই ছবি বঙ্গ রাজনীতিতে কার্যত বেনজির।

ওই ঘটনার পর তিনদিন সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল বিধানসভা কক্ষ। কী তাণ্ডব চলেছে, তা দেখতে গিয়েছিলেন বহু সাধারণ মানুষ।

বুধবার সেই ঘটনার কথাই উল্লেখ করলেন বিচারপতি। বিধানসভায় হুমকির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। সেই মামলার  সওয়াল-জবাব চলাকালীন বিচারপতি বিবেক চৌধুরী উল্লেখ করেছেন ২০০৬ সালে বিরোধী আসনে থাকাকালীন কী করেছিল তৃণমূল। সেই ঘটনার স্টেটাস কী, সেটাও জানতে চেয়েছেন বিচারপতি। বলে রাখা প্রয়োজন, ঘটনার সময় তৃণমূলেরই অন্যতম বিধায়ক ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী।