Mental Hospital: অন্ধকার, স্যাঁতস্যাঁতে, নোংরা ঘর; তালাবন্দি আবাসিক; ‘নরক যন্ত্রণা’র শিউরে দেওয়া ছবি পাভলভে

Pavlov: সপ্তাহ খানেক আগে স্বাস্থ্য ভবনে জমা পড়েছে দুই কর্তার সরেজমিন রিপোর্ট। আর তাতেই প্রকাশ্যে এসেছে চমকে দেওয়া তথ্য।

Mental Hospital: অন্ধকার, স্যাঁতস্যাঁতে, নোংরা ঘর; তালাবন্দি আবাসিক; 'নরক যন্ত্রণা'র শিউরে দেওয়া ছবি পাভলভে
পাভলভ হাসপাতাল
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 18, 2022 | 1:41 PM

সৌ র ভ দ ত্ত

তেরে নাম সিনেমার কথা মনে পড়ছে? মনে পড়ছে সেই লম্বা চুলের রাধে মোহনকে? জীবনের ঘাত প্রতিঘাতে, পায়ে পায়ে ঠোক্করে সমাজের মূল স্রোত থেকে ছিটকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন রাধে। হারিয়ে গিয়েছিলেন মানসিক চিকিৎসাকেন্দ্রের অন্ধকারে। জীবনের ছত্রে ছত্রে শুধুই ট্র্যাজেডি। বঞ্চনা। আর যন্ত্রণা। এবার আর সেলুলয়েডের পর্দায় নয়, খাস কলকাতাতেই সেই বঞ্চনার অভিযোগ। পর্দার ছবি আর বাস্তব যেন মিশে গেল পাভলভে। মানসিক চিকিৎসাকেন্দ্রের নজির বিহীন অমানবিকতার অভিযোগ উঠে এল TV9 বাংলায়।

কলকাতার গোবরাতেই নামী হাসপাতাল পাভলভ। রাজ্যে মনোরোগ চিকিৎসার অন্যতম বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান। কিন্তু মুখ আর মুখোশের মধ্যে কি এতটা তফাৎ? পাভলভের আবাসিকরা যে অব্যবস্থা, বেনিয়ম এবং ‘নারকীয় যন্ত্রণা’র মধ্যে দিন গুজরান করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে, তাতে সেই প্রশ্নগুলিই যেন মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। মানসিক ভারসাম্যহীনদের ভাল থাকার জন্য বরাদ্দ অর্থেও কি কেউ ভাগ বসাচ্ছে? রাজ্যের প্রথম সারির সরকারি মানসিক হাসপাতাল পরিদর্শনের পর স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট থেকেই এমন প্রশ্ন উঁকি মারতে শুরু করেছে। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, রাতারাতি হাসপাতালের সুপার গণেশ প্রসাদকে শোকজ় করেছেন ডিরেক্টর অব পাবলিক হেল্থ। গত এপ্রিল ও মে মাসে দুই দফায় পাভলভ পরিদর্শন করেন ডিডিএইচএস এবং এডিএইচএস (মেন্টাল হেল্থ)।

Pavlov Hospital

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ পাভলভে

সপ্তাহ খানেক আগে স্বাস্থ্য ভবনে জমা পড়েছে দুই কর্তার সরেজমিন রিপোর্ট। আর তাতেই প্রকাশ্যে এসেছে চমকে দেওয়া তথ্য।

এডিএইচএস (মেন্টাল হেল্থ) পরিদর্শনের পর কী কী অভিযোগ উঠে এসেছে –

  • দুটি ঘরে ১৩ জন মহিলা আবাসিককে তালাবন্দি করে রাখা হয়েছে।
  • অন্ধকার, স্যাঁতস্যাঁতে, নোংরা ঘরে যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ভাঙা লোহা, ধারাল ধাতব বস্তু।
  • অনেক আবাসিকের সারা শরীরে ঘা, ক্ষতচিহ্ন। আবাসিকদের দুরাবস্থার দিকে নজরই নেই সুপার-চিকিৎসক-নার্সদের।
  • প্রশ্ন উঠছে আবাসিকদের খাবারের পরিমাণ ও গুণমান নিয়েও। আবাসিকদের রোজই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে, অপরিষ্কার পাত্রে, দুর্গন্ধযুক্ত খাবার দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
  • কেন এই অমানবিক আচরণ, তার কোনও ব্যাখ্যা মেলেনি।

স্বাস্থ্যকর্তার ওই রিপোর্টে রয়েছে আরও প্রশ্ন। কেন তালাবন্দি আবাসিকরা? উত্তরে এক নার্সিং স্টাফ জানিয়েছেন, চিকিৎসকদের পরামর্শেই রোগীদের তালাবন্দি করে রাখা হয়েছে। তবে মুখের কথাই সার। এই নিয়ে কোনও লিখিত প্রমাণ বা প্রেসক্রিপশন মেলেনি।

ডিডিএইচএস পাভলভ পরিদর্শনের পর কী কী অভিযোগ করেছেন?

  • বহির্বিভাগ ও অন্তর্বিভাগে নিয়মিত রাউন্ডের অভাব রয়েছে। রাউন্ডে আসেন না সুপার, ডেপুটি সুপার (নন মেডিক্যাল), নার্সিং ইনচার্জ, ফেসিলিটি ম্যানেজার কেউই।
  • হাসপাতালের ওয়ার্ড চালাচ্ছেন কার্যত ইন্টার্নরাই।
  • রোগীদের জন্য ডায়েট কমিটি বলে কিছু নেই পাভলভে। রোগীদের ওজনের নিরিখে প্রতিদিনের ডায়েট চার্টের কোনও বালাই নেই।
  • মনরোগ বিশেষজ্ঞ, মনোবিদদের কাজের কোনও পরিবেশই নেই।

স্বাস্থ্য ভবনের আধিকারিকদের রিপোর্টই বলছে, কী মানসিক ‘নির্যাতন’, কী নারকীয় বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন সরকারি হাসপাতালের আবাসিকরা। মানসিক রোগীদের জন্য বিশেষ প্রকল্প রয়েছে। আবাসিকদের ন্যূনতম অধিকার যদি সুনিশ্চিত না হয়, তাহলে সেই প্রকল্পের অর্থ কোথায় খরচ হচ্ছে?

এই বিষয়ে চিকিৎসক মানস গুমটা জানিয়েছেন, “মেন্টাল হেল্থ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম আছে। পুরো হাসপাতাল চালানো থেকে ডায়েট, যাবতীয় খরচ তারাই বহন করে। এই অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তাহলে কেন্দ্রীয় সরকারের টাকা যাচ্ছে কোথায়? তাহলে কি সেটি অন্য কোথাও চলে যাচ্ছে?”

মানসিক হাসপাতালের মানোন্নয়নের জন্য বছর দেড়েক আগে লন্ডন সফরে গিয়েছিলেন স্বাস্থ্য ভবনের পদস্থ কর্তারা। লন্ডনে কীভাবে মানসিক রোগীদের পরিষেবা দেওয়া হয়, তা দেখে পাভলভে কর্তরত স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তারপরও কেন এই বেহাল দশা? তা নিয়ে ইতিমধ্য়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

যে প্রশ্নগুলি উঠে আসতে শুরু করেছে…

  • মানসিক ভারসাম্যহীন আবাসিকদের জন্য বরাদ্দ অর্থ কোথায় খরচ হচ্ছে?
  • কেন দু’বেলা পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছেন না আবাসিকরা?
  • কেন রোজ নিম্নমানের খাবার দেওয়ার অভিযোগ উঠছে?
  • এই অব্যবস্থা-বেনিয়ম কতদিন ধরে চলছে পাভলভে?
  • দিনের পর দিন অমানবিক আচরণের অভিযোগ, তারপরও কেন শুধু শোকজ় নোটিস?

এই বিষয়ে চিকিৎসক অর্চনা মজুমদার জানিয়েছেন, “ন্যাশনাল হেল্থ মিশনের রেকর্ড বলছে, গতবছর পাভলভ হাসপাতালে ৫০ লাখ টাকা এসেছে। সেই টাকা কখন কোথায় কীভাবে খরচ হল, তার কোনও হিসেব নথি রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য দফতরও পাচ্ছে না, কেন্দ্রীয় সরকারকেও দেওয়া হচ্ছে না।”

স্বাস্থ্য ভবনের রিপোর্ট নিয়ে পাভলভের সুপার গণেশ প্রসাদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি বলেন, “পরিদর্শনের কথা মনে পড়ছে না। শো-কজের নোটিস এসেছে কি না দেখতে হবে। এখন গাড়ি চালাচ্ছি।‌ পরে ফোন করুন।” এই বলেই ফোন কেটে দেন সুপার।