Maidul Islam: এক্সক্লুসিভ: রাজনৈতিক দল আমায় জন্ম দেয়নি, তৃণমূলে থাকলেও সরকার বিরোধী আন্দোলন চলবে: মইদুল

Maidul Islam: "সুজনদা, শুভেন্দু অধিকারীর সহযোগিতার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। শুধু ধরনা হলে, লড়াই এলে এঁরা এসে বলেন, 'আমরা আছি'। যখন বিপদে পড়ি, তখন এঁদের পাওয়া যায় না।''

Maidul Islam: এক্সক্লুসিভ: রাজনৈতিক দল আমায় জন্ম দেয়নি, তৃণমূলে থাকলেও সরকার বিরোধী আন্দোলন চলবে: মইদুল
তৃণমূলে যোগ দিয়ে যা বললেন মইদুল। অলংকরণ: অভিজিৎ বিশ্বাস
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jan 20, 2022 | 12:53 PM

সু ম ন ম হা পা ত্র

শহর কলকাতা শিক্ষক আন্দোলন কম দেখেনি। শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে বেতন সংক্রান্ত সমস্যা, সব নিয়ে বাংলায় রোজ একটা না একটা বিক্ষোভ সমাবেশ থাকেই। তবে শিক্ষক আন্দোলনের ভাষা বদলে দিয়েছে শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চ। মইদুলের কঠোর সমালোচকরাও এই একটি বিষয়ে সহমত।

এবার প্রশ্ন কে এই মইদুল? ইদানীং সামাজিক মাধ্যম তাঁকে অনেক নাম দিয়েছে। ‘সুবিধাবাদী’, ‘দালাল’, ‘মেরুদণ্ডহীন’ ইত্যাদি। তবে ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাচ্ছে মইদুলের আন্দোলনের কার্যত নজিরবিহীন। সাধারণত সরকার বিরোধী আন্দোলন হয় রাস্তায় প্ল্যাকার্ড হাতে। আর মইদুলের সংগঠন কখনও প্রতিবাদ দেখাতে নামে আদি গঙ্গার পাঁকে, কখনও পৌঁছে যায় বিধানসভার গেটে। আমিত শাহকে কালো পতাকা কিংবা বিকাশ ভবনের সামনে শিক্ষিকাদের বিষপান, এক একটা আন্দোলন শিরোনাম তৈরি করেছে।

বেতন বৃদ্ধির আন্দোলন দিয়ে পথচলা শুরু করেছিল শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের। আন্দোলনের ঝাঁঝ যত বেড়েছে, সরকার তত কঠোর হয়েছে। লাগাতার আন্দোলনের সময়ই বাড়ি থেকে অনেক দূরে বদলি হয় মইদুল ও ৫ চুক্তিভিত্তিক শিক্ষিকার। প্রতিবাদে বিকাশ ভবনের সামনে বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ৫ শিক্ষিকা। এর পরই রাতের অন্ধকারে মইদুলকে ধরতে পুলিশ পৌঁছে যায় তাঁর শ্বশুরবাড়ি। ফিল্মি স্টাইলে অধরা থাকেন শিক্ষক। বুদ্ধিজীবীরা ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের’ বিরোধিতা করে তাঁর পাশে দাঁড়ান। চরম সরকার বিরোধী সেই মইদুলই আবার শাসক দলের পতাকা তুলে নেন। অতঃপর বদলি রদ হয় সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের। কেন তৃণমূলে নাম লেখাল মইদুল? কত টাকার রফা হয়েছিল? এই অপ্রিয় প্রশ্নগুলোর উত্তর অজানা। আর সেই প্রশ্নগুলোই ছুড়ে দিল টিভি নাইন বাংলা। একান্ত আলাপচারিতায় উঠে এল চাওয়া পাওয়া, আপস সংগ্রামের কাহিনি।

তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরই বদলি বাতিল। এটাই কি রফা হয়েছিল শাসক দলের সঙ্গে?

মইদুল: না, সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বা শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে এরকম কোনও চাওয়া পাওয়ার বিষয় ছিল না। কোনও ডিল হয়নি। শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চ পেশাগত কারণে গণতান্ত্রিক লড়াই লড়ছিল। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেসকে আপডেট করছেন। তাই সরকারের জনমুখী প্রকল্পে সহযোগিতা করার জন্যই তৃণমূলের পতাকা ধরেছে শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চ।

আপনার বিরুদ্ধে এতগুলো মামলা, তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পিছনে কি শিক্ষক স্বার্থের উর্ধ্বে আপনার স্বার্থ ছিল না?

মইদুল: না, আমার স্বার্থের বিষয় নয়। বিচারাধীন মামলা আদালতে চলবে। পার্শ্বশিক্ষকদের বদলি সহ শিক্ষাবন্ধুদের বেতন বৈষম্য, ইনক্রিমেন্ট চালু ইত্যাদি বিষয়ে সরকারপক্ষ আশ্বাস দিয়েছে আলাপ আলোচনার। তাই তৃণমূলে যোগ দিয়েছি। শুধু লড়াইয়ের জন্য লড়াই বা বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা নয়, পেশাগত দাবি ছাড়াও যে সরকার সার্বিক স্বার্থ দেখছে তার পাশে থাকার প্রয়োজন বোধ করেছি।

সরকারের তো আগেও এই জনমুখী প্রকল্প ছিল, তাহলে তখন কেন বিরোধিতা করেছেন?

মইদুল: তৃণমূলে যোগ দিয়েছি বলে যে সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামব না এটা কে বলল? বিরোধীরা প্রচার করছে শাসক দলে নাম লিখিয়েছি বলে আন্দোলন করতে পারব না, এটা ঠিক নয়। পেশাগত দাবি মিটিং মিছিলের মাধ্যমে সরকারের কাছে তুলে ধরব। আলাপ-আলোচনা করব। সরকার শিক্ষা স্বার্থ, শিক্ষক স্বার্থ রক্ষা করবে। সরকারের ভাল কাজ তুলে ধরা, আর খারাপ কাজের সমালোচনা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

Maidul islam

শুধু লড়াইয়ের জন্য লড়াই বা বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা নয়, পেশাগত দাবি ছাড়াও যে সরকার সার্বিক স্বার্থ দেখছে তার পাশে থাকার প্রয়োজন বোধ করেছি।

‘ব্রাত্য বসু নিখোঁজ’, এই পোস্টার আপনারা প্রচার করেছিলেন। সেই ব্রাত্য বসুর হাত ধরেই তৃণমূলে! বিকিয়ে গেলেন?

মইদুল: বিক্রির কোনও প্রশ্ন নেই। শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর কমিউনিকেশন গ্যাপ ছিল। দল তাঁকে ত্রিপুরায় দায়িত্ব দিয়েছিল, তিনি ত্রিপুরায় গিয়েছিলেন, আমাদের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। কিন্তু তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর আমাদের সঙ্গে তাঁর ৪ বার দেখা হয়েছে। কথা বলে আমরা সন্তুষ্ট। তিনি কথা রেখেছেন। ব্রাত্য বাবু নতুন দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তিনি বুঝতে একটু সময় নিয়েছেন। এইরকম গুণী মানুষকে বোঝানোর দায়িত্ব আমাদের। সরকার স্কুলছুটদের ফেরাতে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে। সবটা ব্রাত্য বাবুর তত্ত্বাবধানে হচ্ছে। তিনি শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন।

আদি গঙ্গা, মুখ্যমন্ত্রীকে কালো পতাকা, শেষে বিষপান, সবটা শেষ করতেই কি তৃণমূলে?

মইদুল: শেষ কেন হবে? সবটাই দৃষ্টি আকর্ষণের আন্দোলন ছিল। গণতান্ত্রিক ভাবে কখনও বিধানসভার গেটে বিক্ষোভ করেছি, কখনও আদি গঙ্গায় কখনও মুখ্যমন্ত্রীর কসবা সভায়। আবার সামাজিক ভাবে এনআরসি, সিএএর বিরোধিতা করে অমিত শাহকেও কালো পতাকা দেখিয়েছি। দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সফল হয়েছি। তাই মুখ্যমন্ত্রী ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ব্রাত্য বসু আমাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। আলোচনা করেছেন। দাবি আদায় করতে অনেকাংশে সফল হয়েছি। সময় দিতে হবে তাঁকে। গণতান্ত্রিক ভাবে লড়াই চলছে। যদি দেখি শিক্ষক স্বার্থ রক্ষিত হচ্ছে না, তাহলে বৃহত্তর আন্দোলন করব।

Maidul Islam

হন্যে হয়ে যখন পুলিশ খুঁজছে, ফ্লিমি কায়দায় অধরা তখন মইদুল

সারা রাত মইদুলের বাড়িতে পুলিশ, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরোধিতা করে আপনার পাশে বুদ্ধিজীবীরা। তাঁদের পিঠে ছুরি মেরে তৃণমূলে চলে গেলেন?

মইদুল: তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা আগেও ছিল, এখনও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। আমার বাড়িতে পুলিশ গিয়েছিল, মিথ্যে মামলা দিয়েছিল। সে বিষয় কখনওই সমর্থন করছি না। এই বিষয়ের সঙ্গে আমাদের সংগঠনের সিদ্ধান্ত আলাদা। তৃণমূলে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত সংগঠনের। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিন্তাভাবনা সব মহল অভিনন্দন জানাচ্ছে। আমাদের সমস্যা আছে, কিন্তু বৃহত্তর স্বার্থের কথা ভেবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেছি।

আপনি সুজন চক্রবর্তীর ঘনিষ্ঠ, আইএসএফের হয়ে ভোটে লড়েছেন, আবার শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ ছিল। এখন তৃণমূলে চলে এলেন। লোকে তো আপনাকে সুবিধাবাদী বলছে?

মইদুল: লোক সুবিধাবাদী বলছে। প্রশংসা, সমালোচনা থাকবে। সুজনদা, শুভেন্দু অধিকারীর সহযোগিতার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। শুধু ধরনা হলে, লড়াই এলে এঁরা এসে বলেন, ‘আমরা আছি’। যখন বিপদে পড়ি, তখন এঁদের পাওয়া যায় না। আমরা যখন রাস্তায় নেমে লড়াই করতে পারছি, বিজেপি বা সিপিএম কেন পারছে না! শুধু টিভিতে ভাষণ দেবেন আর আমাদের সুবিধাবাদী বলবেন, এটা হয় না। তাঁদের আমি বলব, আপনারা লড়াই করুন, আপত্তি নেই। মানুষের স্বার্থে রাস্তায় নেমে লড়াই করুন।

Maidul islam 3

যদি অরাজকতা হয়, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি হয়, সরকারকে বোঝাব।

বিজেপি, সিপিএম সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষা স্বার্থে লড়াই করলে পাশে গিয়ে দাঁড়াবেন?

মইদুল: আমি কেন, গোটা সংগঠন পাশে দাঁড়াবে। যদি অরাজকতা হয়, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি হয়, সরকারকে বোঝাব। নাহলে দায়িত্ব পালনে রাস্তায় নামব।

সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে রাস্তায় নামলে দল তো বহিষ্কার করবে!

মইদুল: সরকার যদি শিক্ষায় উন্নয়ন করে, তাহলে তো রাস্তায় নামার প্রয়োজন নেই। সুজন, শুভেন্দুবাবুরা রাজনৈতিক স্বার্থে রাস্তায় নামলে ২-৪ জন রাস্তায় নামবে, সেই রাস্তায় তো মানুষ নামবে না। শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চ তখন তাঁদের সঙ্গে কেন রাস্তায় নামবে? শুভেন্দুবাবুরা মন্দির উদ্বোধন করছেন। বামপন্থীরা রাস্তায় নামছে না। সেটা কি সরকারের দোষ? ‘৭২-‘৭৭ সালে মানুষ রাস্তায় নামতে পারলে, এখন কেন সিপিএম, বিজেপি রাস্তার লড়াইয়ে নেই? এর একটাই কারণ, কাচের ঘরে বসে এঁরা শুধু ভাষণ দেন, রুজিরুটির লড়াইয়ের ইচ্ছে এঁদের নেই। বরং সরকার প্রান্তিক মানুষকে সুবিধা দিচ্ছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখালেখি হচ্ছে, বড় অঙ্কের টাকা আর মামলা থেকে বাঁচতেই আপনি তৃণমূলে।

মইদুল: লোকে বলবে, তাঁদের বাকস্বাধীনতা আছে। কিন্তু তাঁরা আমায় চিনতে ভুল করছেন। মইদুল ইসলামকে তৃণমূল, সিপিএম বা বিজেপি পোর্টফোলিও দেয়নি। সাধারণ মানুষের দাবিদাওয়া নিয়ে লড়াই করেছি। রাজনৈতিক নেতার মতো আমায় ভাববেন না। আমায় কোনও রাজনৈতিক দল জন্ম দেয়নি। লড়াই করে মইদুল মইদুল হয়েছে। আজ বেশি মানুষকে পরিষেবা দিতে তৃণমূলে এসেছি। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেছি।

আপনাদের বদলি বাতিল হল, কিন্তু যাঁরা আপনাদের ব্যানারে লড়াই করছিলেন, তাঁরা তো সেই তিমিরেই, তাঁদের কী বলবেন?

মইদুল: ৯-১০ বছর ধরে তাঁরা বঞ্চিত। আলোচনা সাপেক্ষে তাঁদের দাবি মিটবে। সাংগঠনিক ভাবে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে তাঁদের স্বার্থ রক্ষিত হবে। সেই কারণেই ২৩টি জেলায় আমাদের সংগঠন সর্বসম্মতিক্রমে তৃণমূলে এসেছে। এটা ব্যক্তি মইদুল বা ব্যক্তি ছবি চাকীর বিষয় নয়।

Maidul islam 4

মুখ্যমন্ত্রী ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে কাজ করছেন, তাতে দাবি মিটে যাবে বলেই আশা করছি।

তৃণমূলে যোগ দিলেই কি সব দাবি মিটে যায়? বদলি রদ হওয়ার পর তো লোকে আপনাকে ‘অনুপ্রেরণা’ হিসেবে দেখছে?

মইদুল: দাবি মেটাতে হলে সেই দাবি ন্যায্য হতে হয়। সরকারের কাছে তা তুলে ধরতে হবে। এমন কোনও কথা নেই তৃণমূলে এলে সব দাবি মিটে যাবে। তবে মুখ্যমন্ত্রী ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে কাজ করছেন, তাতে দাবি মিটে যাবে বলেই আশা করছি।

শিক্ষা ক্ষেত্রে এখন কোন কোন বিষয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন হওয়া দরকার?

মইদুল: যাতে প্রতি বছর স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ হয়, তার জন্য সব মানুষকে রাস্তায় নামতে হবে। সরকারকে বোঝাতে হবে। শিক্ষা যেন পণ্য না হয়ে যায়, তা দেখতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে সর্বাধিক প্রাধান্য দিতে হবে, বাজেটে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। নিয়োগের দাবিতে আন্দোলন হোক না, মিটিং মিছিল হোক। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে আন্দোলন করে লাভ নেই। চাকরিপ্রার্থী সমস্যা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি। গণতান্ত্রিক ভাবে আন্দোলন হতেই পারে, কিন্তু শুধু বিরোধিতা করার জন্য আন্দোলন করে লাভ নেই। বিজেপি, সিপিএম এই আন্দোলনের রাজনৈতিক ফায়দা নেয়, মিডিয়া এলে মুখ দেখিয়ে চলে যায়, পরে আর ফোন ধরে না।

আরও পড়ুন: Jagdeep Dhankhar : কয়েক হাজার কোটি টাকার নয়-ছয়, মা ক্যান্টিন ও ক্লাবের অনুদানে রাজ্যপালের কাছে নালিশ শুভেন্দুর