জ্ঞানেশ্বরী কেলেঙ্কারির নায়ক অমৃতাভকে ঘিরে জটিল ধাঁধা! ১১ বছর পর সঠিক বয়স জানতে এবার হাড়ের পরীক্ষা
অমৃতাভ চৌধুরীর বয়স সম্পর্কে নিশ্চিত হতে 'ওসিফিকেশন টেস্ট' করাবে সিবিআই। এই পরীক্ষার মাধ্যমে তার হাড়ের গঠন দেখে বয়সের আন্দাজ পাওয়া সম্ভব। দুর্ঘটনার সময় সরকারি খাতায় মৃত অমৃতাভ চৌধুরীর যা বয়স ছিল, তা ১১ বছর পর এই অমৃতাভর বয়সের সঙ্গে মিলছে কিনা জানতেই ওই পরীক্ষা হবে।
কলকাতা: ২০১০ সালে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের ভয়াবহ দুর্ঘটনার (Jnaneswari Express Accident) পর নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন অমৃতাভ। সেসময় তাঁর দেহ সংগ্রহের সময়ে যে ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছিল, তাতে অমৃতাভর জন্ম সাল উল্লেখ ছিল ১৯৮২। কিন্তু সে অনুযায়ী দেখতে গেলে তাঁর বর্তমান বয়স কম। তদন্তকারীরা বলছেন, অমৃতাভর মৃত্যুর শংসাপত্রে বয়সেরও গরমিল রয়েছে। এখন অমৃতাভর বয়স কত? তা জানতে চান তদন্তকারীরা। পাশাপাশি ১১ বছর আগের ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট ঘিরেও তৈরি হয়েছে বিস্তর ধোঁয়াশা।
অমৃতাভ চৌধুরীর বয়স সম্পর্কে নিশ্চিত হতে ‘ওসিফিকেশন টেস্ট’ করাবে সিবিআই। এই পরীক্ষার মাধ্যমে তার হাড়ের গঠন দেখে বয়সের আন্দাজ পাওয়া সম্ভব। দুর্ঘটনার সময় সরকারি খাতায় মৃত অমৃতাভ চৌধুরীর যা বয়স ছিল, তা ১১ বছর পর এই অমৃতাভর বয়সের সঙ্গে মিলছে কিনা জানতেই ওই পরীক্ষা হবে। ইতিমধ্যেই মৃতের জীবিতাবস্থার ছবি এবং মৃতদেহের ছবি প্রামাণ্য নথি হিসেবে ব্যবহার করছে সিবিআই। ফের ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে বলেও জানা গিয়েছে।
জ্ঞানেশ্বরী কেলেঙ্কারির তদন্তে নেমে দুঁদে তদন্তকারীরা বলছেন, এই মামলার পরতে পরতে রয়েছে ধাঁধা। রেলের সঙ্গে এত বড় প্রতারণা কীভাবে করলেন ‘সাধারণ’ অমৃতাভ ও তাঁর পরিবার? এর পিছনে কি কোনও বড় মাথা রয়েছে? প্রতারণা কাণ্ডের সেই ধাঁধার সমাধানে নেমে একেবারে শূন্য থেকে তদন্ত শুরু করেছেন তদন্তকারীরা। এরই মধ্যেই আরও একটি বিষয় ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের ২০১০-২০১৭ সাল পর্যন্ত কোথায় ছিলেন অমৃতাভ? তাঁর গ্রামের বাড়ির প্রতিবেশীরা বলছেন, অজ্ঞাতবাস পর্বে নাকি মাওবাদীদের ডেরায় ছিলেন অমৃতাভ। অন্তত তাঁদের এমনটাই বলা হয়েছিল। যখন ফেরেন তখন নাকি অমৃতাভ মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। তার চিকিৎসা চলছিল। কারোর সঙ্গেই অমৃতাভকে কথা বলতে দিতেন না পরিবারের সদস্যরা। গ্রামবাসীদের বক্তব্যও খতিয়ে দেখছে সিবিআই।
রবিবারই অমৃতাভর জোড়াবাগানে পুরনো বাড়িতে যান সিবিআই গোয়েন্দারা। পারিবারিক পুরনো অ্যালবাম থেকে বেশ কিছু ছবি বাজেয়াপ্ত করেন। সেগুলি থেকে অমৃতাভর পুরনো চেহারা সঙ্গে বর্তমান চেহারার মিল খতিয়ে দেখেন। তন্তকারীরা নিশ্চিত হন, এই ব্যক্তিই অমৃতাভ। তাঁর হাতের লেখার নমুনাও সংগ্রহ করা হয়েছে। তা যাচাই করতে বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠানো হয়েছে। খতিয়ে দেখা হবে অমৃতাভর স্কুল-কলেজের নথিও। অমৃতাভর সহপাঠীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানা গিয়েছে।
তবে এসবের মধ্যে তদন্তকারীরা এই বিষয়টি জানতে মরিয়া, ঠিক কার বুদ্ধিতে রেলের সঙ্গে এত বড় প্রতারণা করতে পারলেন অমৃতাভ? তদন্তকারীরা মনে করছেন, এর পিছনে কোনও বড় মাথা থাকতেই পারে। এরই মধ্যে রেলেরই কয়েক জন উচ্চ পদস্থ আধিকারিকদের সামনে তদন্তকারীদের হাতে এসেছে।
জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত বিষয়ে রেলের কোন অফিসারেরা যুক্ত ছিলেন তাদের তালিকা চাওয়া হবে রেলের থেকে। সিবিআই মনে করছে গলদ সেখানেই। রেলের থেকে সেই অফিসারদের তালিকা পেলে তাদের তলব করা হবে নিজাম প্যালেসে।
আরও পড়ুন: ধৃত ব্যক্তিই জ্ঞানেশ্বরী-কাণ্ডে ‘মৃত’ অমৃতাভ? ডিএনএ টেস্ট করবে সিবিআই
রেলের কাছে জমা দেওয়া ডিএনএ রিপোর্টের কপি সংগ্রহ করা হয়েছে। কোথা থেকে পেয়েছিল সেই রিপোর্ট, সে ব্যাপারে তদন্ত চলছে। অমৃতাভই যে নথিপত্রের মাধ্যমে নিজেকে ‘মৃত’ ঘোষণা করে চাকরি এবং ক্ষতিপূরণ আদায় করেছিল সেই সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে।