Partha Chatterjee:পার্থর রবিবারের মেনু: যখন কর্পোরেট পার্সন, রাজনীতিবিদ ও কয়েদি

Partha Chatterjee: বেহালা পার্টি অফিসেই দুপুরের খাবার সারতেন বিকেলে৷ সেখানে রুটি-মটন কখনও আবার রুটি-চিলি চিকেন৷ কখনও আবার রুটি আর মাছের মুড়োর ঝোল খেয়ে কাটাতেন।

Partha Chatterjee:পার্থর রবিবারের মেনু: যখন কর্পোরেট পার্সন, রাজনীতিবিদ ও কয়েদি
গ্রাফিক্স - টিভি নাইন বাংলা
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 07, 2022 | 1:32 PM

সৌরভ গুহ: একটা সময় ছিল, যখন ভারী চেহারার, কর্পোরেট সংস্থার বসের জীবনে রবিবার ছিল। নিয়ম করে রবিবারের মেনুতে থাকত বাহারি খাবারের আয়োজন। অ্যান্ড্রু ইয়ুলের মতো সংস্থার কর্পোরেট চাকরি জীবন ছেড়ে পুরোদমে রাজনীতির ময়দানে পা রাখতেই বদলাতে শুরু করে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের খাবারের রবিবাসরীয় মেনু।

সূত্রের খবর, যখন তিনি কর্পোরেট সংস্থায় চাকরি করতেন তখন ব্রেকফাস্ট ছিল মাস্ট। তবে সেই ব্রেকফাস্ট পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মা প্রয়াত হওয়ার আগে পর্যন্ত প্রতিদিনই মাস্ট ছিল। রবিবাসরীয় ব্রেকফাস্টে থাকত পরোটা, তরকারি৷ কখনও সখনও লুচি, সাদা আলুর তরকারি। তবে ভাজাটা মাস্ট। কারণ পার্থ চট্টোপাধ্যায় যে কোনও ধরণের ভাজা খেতে পছন্দ করতেন।

ম্যানেজমেন্ট বস পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের রবিবারের মেনুতে থাকত ভাত, ডাল, একাধিক ভাজা, তরকারি ও নেতাজিনগরের এক হোটেলের মাছের মুড়ো৷ ভাজা ও ঝোলে দেওয়া সেই মুড়ো ছিল পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের রবিবারের স্পেশ্যাল মেনু৷ তবে মাঝেমধ্যে রবিবাসরীয় দুপুরে মটন হত বাড়ির হেঁসেলেও।

রবিবার বদলেছে পেশাগত অবস্থান বদলানোর সঙ্গে সঙ্গেই। দলের গুরুদায়িত্ব কাঁধে আসার পরেই, রবিবার বদলেছে। ব্রেকফাস্ট মাস্ট থাকলেও বাকি আহারে এল বদল। কারণ তখন সকাল থেকেই নাকতলার বাড়িতে দলের বিভিন্ন নেতা-কর্মীদের ভিড় লেগেই থাকত। অনেকেই আসতেন মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, হুগলি বা নদিয়া থেকে। তাদের পেট ভরানোর জন্য সেই নেতাজিনগরের ভাতের হোটেল ছিল ভরসা৷ ভাত-ডাল-মাছ ভাজা। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ম্যানেজাররা সেই ব্যবস্থা করতেন। আর দুপুরের খাবারে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জন্য চলে আসত সেই মাছের মুড়ো, ভাজা ও ঝোলে দেওয়া৷ সূত্রের খবর, এই সময় অনেক রবিবার ভাত খেতেন না তিনি৷ আর লাঞ্চ ব্রেক চলে যেত বিকেলের দিকে। অর্থাৎ বিকেল ৩ সময় রুটি, মাছের মুড়ো বা মটন থাকত পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্লেটে।

রবিবারে আরও বদল আসল বিধায়ক হওয়ার পরে৷ কারণ সকালে বাড়িতে লোক, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই নিজের বিধানসভা এলাকায় একাধিক অনুষ্ঠান৷ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকতে হত পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। তাই রবিবারের মেনু হয়ে যেত অনিয়মিত। তাই ব্রেকফাস্ট পরোটা-তরকারি-চা খেয়ে বেরিয়ে পড়তেন বেহালার উদ্দেশ্যে।

বেহালা পার্টি অফিসেই দুপুরের খাবার সারতেন বিকেলে৷ সেখানে রুটি-মটন কখনও আবার রুটি-চিলি চিকেন৷ কখনও আবার রুটি আর মাছের মুড়োর ঝোল খেয়ে কাটাতেন। সন্ধ্যা হলেই তেলে ভাজা, সিঙ্গারা। কোনও কোনও রবিবার একটা অন্তত জিলিপি মুখে উঠত তাঁর। স্ত্রীয়ের মৃত্যু, মায়ের প্রয়াণ অনেক অভ্যেসে বদল এনেছিল পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। তাই রবিবারের দুপুরে ভাত-ডাল সাধারণত থাকত না। রুটি, মটন, মাছের মুড়ো, ভাজা মাছ এসবই থাকত৷ সন্ধ্যায় কখনও ঘুগনি, কখনও রোল, কখনও চিলি চিকেন থাকত। ভাজা ভালোবাসতেন বরাবর৷ আর মটনও প্রিয়৷ একবার তাঁকে দলের এক শীর্ষ নেতা মটন খাইয়েছিলেন, শোনা যায় টানা সাত দিন সেই মটনের গল্প করেছিলেন সব সতীর্থদের কাছে।  পেশাগত দায়বদ্ধতায় বদলেছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের রবিবার। বদলায়নি মটন-মাছের মুড়ো আর বাহারি স্বাদের ভাজা-পোড়া খাবারের প্রতি ভালোবাসা৷

আজও রবিবার। এখন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঠিকানা প্রেসিডেন্সি জেল। কয়েদি নম্বর ৯৪৩৭৯৯। রুটি, ডাল, তরকারিতে সেরেছেন শনিবারের ডিনার। রবিবার লাঞ্চে খাবেন জেলের দেওয়া খাবারই।