Swastha Sathi: স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় রোগীদের ভেলোর-যাত্রায় রাশ টানতে চাইছে রাজ্য, কেন জানেন?
Swastha Sathi: চিকিৎসা খাতে রাজ্যের টাকা ভিন রাজ্যে চলে যাওয়ায় যে লোকসান হচ্ছে মমতার সরকারের, তা ঠেকাতে চাইছে রাজ্য। রাজ্যে স্বাস্থ্যসাথী পরিষেবা মজবুত হলেই রোগীদের ভিন রাজ্যে পাড়ি দেওয়া আটকানো যায়।
কলকাতা : রাজ্যের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই নাঁক সিটকাতে দেখা গিয়েছে বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলিকে। ভুড়ি ভুড়ি অভিযোগ উঠেছে। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে গেলেও অনেক বেসরকারি হাসপাতালেই ভর্তি করানো যাচ্ছে না রোগীদের। তা নিয়ে অতীতেও কড়া হতে দেখা গিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। রাজ্যবাসীকে এই হয়রানি থেকে পরিত্রাণ দিতে মঙ্গলবার ফের একবার কড়া দাওয়াই দিতে দেখা গেল মমতাকে। পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রশাসনিক বৈঠক মমতা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, এবার থেকে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড ফেরালে এফআইআর হবে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি হাসপাতালের লাইসেন্সও বাতিল করে দেওয়া হতে পারে।
এর আগে ১১ মে মুখ্যমন্ত্রী নবান্ন থেকে বলেছিলেন,”গতবারে আমাদের ৩৬ কোটি রাজ্য থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। একে তো ৫ লাখ টাকা করে আমরা নিজেদের থেকে দিই। তারপর যদি আমাদের ঘরের টাকা ঘরেই রোল হয়, তাহলে আমাদের আয় থাকে। কিন্তু সমস্যা হল আমাদের টাকা চলে যাচ্ছে বাইরে। বাংলায় সব সুযোগ সুবিধা আছে স্বাস্থ্য সাথীর জন্য। অনেক হাসপাতাল তৈরি হয়েছে। খুব জটিল কিছু না হলে টাকা বাইরে না যাওয়াই দরকার।” অর্থাৎ, চিকিৎসা খাতে রাজ্যের টাকা ভিন রাজ্যে চলে যাওয়ায় যে লোকসান হচ্ছে মমতার সরকারের, তা ঠেকাতে চাইছে রাজ্য। রাজ্যে স্বাস্থ্যসাথী পরিষেবা মজবুত হলেই রোগীদের ভিন রাজ্যে পাড়ি দেওয়া আটকানো যায়। তাই যে রোগীদের স্বাস্থ্য সাথীর কার্ড রয়েছে, তাঁদের কোনও হাসপাতাল বা নার্সিংহোম যদি ফিরিয়ে দেয়, তাহলে আইনি ব্যবস্থার নিদান দেওয়া হয়েছে।
চিকিৎসার জন্য ভিন রাজ্য বলতে রাজ্যের যেটি মূল চিন্তার, তা হল রাজ্যের রোগীদের ভেলোর যাত্রা। চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী এই বিষয়ে বলেন, “স্বাস্থ্যসাথীর মতো প্রকল্প, মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা দেওয়ার জন্য তৈরি। সেটি দক্ষিণের কোনও একটি কেন্দ্রে, যেহেতু সেখানে ব্র্যান্ড ভ্যালু ভাল, সেখানে গেলে চিকিৎসা পাওয়া যাবে – এই ধারনা যত তাড়াতাড়ি যাবে তত মঙ্গল।” রাজ্য স্বাস্থ্যভবন সূত্রে খবর, মাসে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের আওতায় চিকিৎসার জন্য ভেলোর যাওয়া রোগীর সংখ্যা প্রায় ৭০০। শুধুমাত্র ১৩ মে থেকেই স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের হাতে ভেলোর গিয়েছেন ১,০৪৭ জন রোগী। ফলে রাজ্যের খরচ হয়েছে ৮৯ কোটি টাকা। স্বাস্থ্যভবন সূত্রে খবর, এখনই এতে রাশ না টানলে, শুধু ভেলোরের বিল মেটাতেই রাজ্যের নাভিশ্বাস উঠতে পারে। এক্ষেত্রে কোন কোন রোগের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড নিয়ে ভেলোরে যাওয়া যাবে, তা নির্দিষ্ট করে দিতে চাইছে স্বাস্থ্য দফতর।
চিকিৎসকদের একাংশের ব্যাখ্যা, শুধুমাত্র ভেলোর যাত্রায় প্রচুর টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে – এটাই একমাত্র কারণ নয়। সবার জন্য স্বাস্থ্যসাথী চালাতে গিয়ে টান পড়ছে রাজকোষে। তাই নানাবিধ পন্থার মাধ্যমে ব্যয় সঙ্কোচের নীতিতে এগোতে চায় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। চিকিৎসক কুণাল বসু এই বিষয়ে জানিয়েছেন, “হয় আমি বেশি টাকা আনব, নাহলে আমি উপভোক্তা কমাব, নাহলে আমি যেটুকু দিতে পারছি, সেটি একটি আংশিক পেমেন্ট বলে মেনে নেব। শুধু রাগ করে রাগ করে, হুমকি দিয়ে আর মেজাজ হারিয়ে হাতের লক্ষ্মীকে পায়ে ফেলাটাও ঠিক হবে না।” চিকিৎসক মানস গুমটা এই বিষয়ে জানিয়েছেন, “শুধু হুমকি দিলেই কাজ হয় না। তাদের সমস্যাটাও যেমন শোনা দরকার, তেমনই প্রকল্পের যে দুর্বলতাগুলি রয়েছে, সেগুলিও ঠিকঠাক করে নেওয়া দরকার। একইভাবে নার্সিংহোমগুলি যদি কোথাও অন্যায় করে, তাহলে প্রশাসন অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।”