Suvendu Adhikari: জ্যোতি বসু, সিদ্ধার্থশঙ্কর কেউ পদমর্যাদার সঙ্গে সমঝোতা করেননি, আমিও করব না: শুভেন্দু

Suvendu Adhikari: শুভেন্দু বলেন, "রাজ্যের বিরোধী দলনেতাকে, বিজেপি সাংসদকে নিকৃষ্ট পদ্ধতিতে অপমান করার যে ব্যবস্থা করা হয়েছিল, আমরা তার প্রতিবাদ করেছি। আশা করব, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ আমাদের এই অবস্থানকে সমর্থন করবেন।"

Suvendu Adhikari: জ্যোতি বসু, সিদ্ধার্থশঙ্কর কেউ পদমর্যাদার সঙ্গে সমঝোতা করেননি, আমিও করব না: শুভেন্দু
সাংবাদিক বৈঠকে শুভেন্দু অধিকারী।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 23, 2022 | 12:36 PM

কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের নতুন রাজ্যপাল হিসেবে শপথ নিয়েছেন সিভি আনন্দ বোস (CV Ananda Bose)। কিন্তু সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। রাজভবনের বসার ব্যবস্থাপনা নিয়ে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তিনি। এবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অনুপস্থিত থাকার ব্যাখ্যা দিলেন শুভেন্দু অধিকারী। বললেন, ” আজ রাজভবনে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের জন্য আমাকে এবং বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে কার্যত রাজভবনের গেট থেকে ফিরে আসতে হয়েছে। আমরা সাড়ে দশটার মধ্য়েই কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলাম। আমি টুইটও করেছি সবিস্তারে, যাতে কোনও ভুল বার্তা না পৌঁছায়। আমি তড়িৎ গতিতে একটি টুইট করেছি।” তাঁর বক্তব্য, “তৃণমূলের প্রচারের ফাঁদে পা দেবেন না। রাজ্যের বিরোধী দলনেতাকে, বিজেপি সাংসদকে নিকৃষ্ট পদ্ধতিতে অপমান করার যে ব্যবস্থা করা হয়েছিল, আমরা তার প্রতিবাদ করেছি। আশা করব, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ আমাদের এই অবস্থানকে সমর্থন করবেন।”

নতুন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আজ পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী রাজ্যপাল হিসেবে ১০ টা ৪৫ মিনিটে শপথ গ্রহণ করেছেন সিভি আনন্দ বোস। আমরা অনেক ধরেই স্থায়ী রাজ্যপালের আগমনের অপেক্ষায় ছিলাম। তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন। রাজ্যের স্বার্থে, রাজ্যের উন্নয়নে, সংবিধান যাতে রক্ষিত হয়, অত্যাচারিতদের উপর অত্যাচার যাতে বন্ধ হয়, তার জন্য তিনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। ” এরপরই রাজ্য সরকারকে কার্যত তুলোধনা করলেন শুভেন্দু।

বিরোধী দলনেতা বললেন, “আজ রাজভবনের এই অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় ছিল রাজ্য সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর। যার মন্ত্রী হলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। বর্তমানে আমরা সবাই জানি, একটি পোস্টকার্ড ছাপাতে গেলেও নবান্নের চোদ্দ তলায় মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদন নিতে হয়। সবারই সব দায়িত্ব আছে, কিন্তু কারও কোনও দায়িত্ব নেই। কার্যত একজন এই রাজ্যের সাতটি দফতর চালান। কিছু মন্ত্রী রাখতে হয়, কিছু আমলা রাখতে হয়, তাই রাখেন। আমাদের তো সাধারণ নাগরিক হিসেবে তাঁরা আমন্ত্রণ করেননি। কারণ, লিমিটেড আমন্ত্রণ ছিল। ভিন্ন ভিন্ন স্বীকৃত রাজনৈতিক দলের আমন্ত্রণ ছিল। কিছু মন্ত্রী, আমলা, সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি, মেয়র, বাছাই করা সাংসদ ছিলেন আমন্ত্রিত। আমন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে, আমাদের মনে হয়েছে নবনিযুক্ত রাজ্যপাল হস্তক্ষেপ করেননি। তালিকা তৈরি থেকে শুরু করে, আমন্ত্রণ, বসার ব্যবস্থাপনা সবটাই কোম্পানির মালিক করেছেন।”

রাজ্যের বিরুদ্ধে আক্রমণের সুর চড়িয়ে শুভেন্দু বলেন, “আমি আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি, একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক অনুষ্ঠান, এখানে কোনও রাজনৈতিক লাভক্ষতি নেই। এখানে প্রোটোকলের মধ্যে আমরা বাঁধা থাকি। সেখানে ২৯৬ জন বিধায়কের মধ্যে তিন-চারজন মন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা, বিধানসভার অধ্যক্ষ আমন্ত্রিত হয়েছেন। তার বাইরে গিয়ে দুইজন বিধায়ককে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ করা হয়েছে। তাদের নাম বলে আমি হিরো করতে চাই না। আমি টুইটে উল্লেখ করেছি, ছবিও দিয়েছি। তারা বিজেপির প্রতীকে নির্বাচিত। তাঁরা বিধানসভার মধ্যে বিজেপি, আর বাইরে তৃণমূল। তাঁদের মধ্য়ে লজ্জা ছেড়ে একজন বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার তৃণমূলের সভাপতিও বটে। এই দুইজনকে ডাকা হয়েছে কোন প্রোটোকল, কোন নিয়মের মধ্যে? যদি ধরে নিতাম ২৯৪ জন বিধায়ককে ডাকতেন, এই প্রশ্ন করার সুযোগ ছিল না।”

বিরোধী দলনেতার বক্তব্য, “সাংবিধানিক যে কোনও অনুষ্ঠানে কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তি, তাঁর পদের জন্য আমন্ত্রিত হন এবং যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়ে তাঁদের স্থান দেওয়া হয়। সেটা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি, বিধানসভার অধ্যক্ষ, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান হতে পারেন। বিরোধী দলনেতাও এর মধ্যে পড়েন। রীতি নীতি ভেঙে, ইচ্ছা করে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য আমাকে রাজ্যসভার মনোনীত দুই একজন তৃণমূল সাংসদের পিছনে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটা নিয়ে আমার ব্যক্তিগত কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু আমি আমার পদমর্যাদার সঙ্গে আপোষ করব না। আগের বিরোধী দলনেতারা কেউ কেউ করেছেন। কিন্তু ১৯৫৭ সাল থেকে যাঁরা বিরোধী দলনেতা হয়েছেন, জ্যোতি বাবু থেকে শুরু করে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়… তাঁরা কখনোই এই চেয়ারের পদমর্যাদার সঙ্গে কখনও সমঝোতা করেননি।”

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে আক্রমণের সুর চড়িয়ে শুভেন্দুর দাবি, “প্রতিহিংসার রাজনীতি, সহ্য করতে পারছে না, পুলিশ দিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে জব্দ করতে পারছে না, রাজনৈতিকভাবে আটকাতে পারছে না, হারের জ্বালা ভুলতে পারছেন না। যেখানে কলকাতার একাধিক লোকসভা ও রাজ্যসভা সাংসদকে সামনে বসানো হয়েছে, সেখানে বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদারকে পিছনের সারিতে বসতে দেওয়া হয়েছে। যদি সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, মালা রায়, ডেরেক ও’ব্রায়েন সাংসদ হন, তাহলে সুকান্ত মজুমদারও সাংসদ। বসার ব্যবস্থাপনা দেখুন! এই নিকৃষ্ট রাজনীতির সাক্ষী থাকল পশ্চিমবঙ্গ।”