Abhishek Banerjee : ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থাকলে এত ভিড়  হত না’, কেশপুরের মঞ্চে উঠে বললেন অভিষেক

Abhishek Banerjee : “আমি এত বড় জনসভা কোনওদিন দেখিনি। সমস্ত জমসভাকে ছাপিয়ে গিয়েছে এদিনের জমায়েত।” বললেন অভিষেক।

Abhishek Banerjee : ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থাকলে এত ভিড়  হত না’, কেশপুরের মঞ্চে উঠে বললেন অভিষেক
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 04, 2023 | 4:28 PM

কলকাতা : সম্প্রতি কেশপুরে (Keshpur) বারবারই তৃণমূলের (Trinamool Congress) গোষ্ঠী কোন্দলের ছবি সামনে এসেছে। অস্বস্তি বেড়েছে শাসকদলের। এবার সেই কেশপুরেই পা রেখেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কেশপুর ব্লকের আনন্দপুর হাইস্কুলের মাঠে জনসভায় বক্তব্য রাখছেন তিনি। সেখানে যাওয়ার আগে পাশের গ্রামেও যান তিনি। শোনেন সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা। এদিকে অভিষেকের সভার জন্য বিগত কয়েকদিন থেকেই তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছিল গোটা জেলায়। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলের কর্মী সমর্থকদের নিয়ে আসার জন্য বাস ছোট গাড়ির ব্যবস্থা করেছে দলীয় নেতৃত্ব। এদিন সভা মঞ্চে উঠেই অভিষেক বলেন..

  1. আমি সকাল ১১টা থেকে ছবি পাচ্ছি। তখন থেকেই মানুষ সভাস্থলে আসতে শুরু করেছে। সাড়ে ১২টা ১টা নাগাদ আমি যে ছবি পেয়েছি তাতে দেখা যাচ্ছে মাঠ কানায় কানায় ভর্তি। আমি অনেক জায়গায় অনেক জনসভা করেছি। বারেবারে প্রশ্ন উঠত পশ্চিম মেদিনীপুরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে। বলা হত গোষ্ঠী দ্বন্দ্বে জেরপার কেশপুর। যাঁরা এই সমস্ত প্রশ্ন তুলত আজকের জনসভা তাঁদের জন্য উত্তর বলে আমি মনে করি। তাঁদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া গিয়েছে কেশপুরের মাটি মা-মাটি-সরকারের দুর্জয় ঘাঁটি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্জয় ঘাঁটি।
  2. আমি অনেক জায়গায় অনেক জনসভা করেছি। কোচবিহার থেকে শুরু করে কাকদ্বীপ, নির্বাচন ছাড়াও বিভিন্ন সময় মানুষের কাছে গিয়েছি। কিন্তু, আমি মনে করি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ জনসভা এটি। আমি এত বড় জনসভা কোনওদিন দেখিনি। সমস্ত জমসভাকে ছাপিয়ে গিয়েছে এদিনের জমায়েত। পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত আমি দেখেছি রাস্তায় লোক রয়েছে। মাঠে যা লোক রয়েছে তার তার থেকে পাঁচ গুণ বেশি লোক রাস্তায় রয়েছে। তাঁরা মাঠে ঢুকতে পারেননি। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থাকলে এত ভিড়  হত না।   
  3. কেশপুরে যাঁরা রাজনীতি করেন তাঁরা জানেন কে সিপিএমের, কে তৃণমূলের, কে বিজেপির। সবাই জানেন কে মানুষের পাশে ছিল কে ছিল না। যাঁরা ভাবছেন তৃণমূলকে ভুল বুঝিয়ে নির্বাচনের সময় এক কাজ করব, আর নির্বাচনের পরে আবার জামা পাল্টে তৃণমূল হয়ে তৃণমূলের চোখে ধুলো দিয়ে, মানুষকে বিভ্রান্ত করে স্বার্থ চরিতার্থ করতে যা ইচ্ছে তাই করে বেরাব। তাঁদের বলব সবার উপরে একটা অদৃশ্য চোখ আছে। নজর কিন্তু আমি রাখছি। কে কোথায় কী কাজ করছেন কী করছেন সব আমি খবর রাখছি। কোন প্রধান, কোন অঞ্চল সভাপতি কী কাজ করছেন সেই খবর আমার কাছে আছে।   
  4. নেতাদের রেষারেষিতে যদি দলের মাথানত হয় তাহলে আমি কিন্তু ছেড়ে কথা বলব না। আমি আজ হুঁশিয়ারি দিয়ে যাচ্ছি। আমি সময় দিচ্ছি এখনই শোধরান। নাহলে এমন ওষুধ প্রয়োগ করব সেই ওষুধে যখন কাজ হবে তখন আপনি আর শোধরানোর সময় পাবেন না। পঞ্চায়েতের প্রার্থী জেলা সভাপতি দেবে না, ব্লক সভাপতি দেবে না, প্রাক্তন সভাপতি দেবে না। পঞ্চায়েতের প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেবে। আমি কথা দিয়ে যাচ্ছি আপনাদের
  5. যাকে মানুষ সার্টিফিকেট দেবে সেই তৃণমূলের প্রার্থী হবে। কোনও দাদার তল্পিবাহক হয়ে টিকিট পাওয়া যাবে না। আগামী পাঁচ বছর যাঁরা মাথানত করে মানুষের জন্য কাজ করবে তাঁরাই পঞ্চায়েত ভোটে দাঁড়াবে। আর যাঁরা ভেবেছেন প্রার্থী হয়ে মানুষের কাজ করব না, যা ইচ্ছা তাই করে বেরাব, তাঁদের বিরুদ্ধে যা পদক্ষেপ গ্রহণ করার তা পার্টি ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে। ঘাটাল লোকসভা এবং মেদিনীপুর লোকসভা দুটোতেই তিন লক্ষের ব্যবধানে তৃণমূল প্রার্থীদের জিতিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্তিশালী করতে হবে। 
  6. ২০১৪ থেকে ২০১৯, বিজেপি বাংলার মানুষকে শোষিত, নিপীড়িত, অত্যাচারিত করে রাখতে পারেননি। কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত আপনারা শক্তিশালী করেছিলেন। তৃণমূল কংগ্রেসকে ৩৪টা আসনে জিতিয়েছিলেন। উনিশের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ৩৪টা সাংসদ নেমে হল ২২। বিজেপির সাংসদ সংখ্যা বাড়ল। বিজেপি যত ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়েছে বাংলার মানুষের পেটে আঘাত লেগেছে। বাংলা আবাস যোজনার টাকা বন্ধ, একশো দিনের টাকা বন্ধ। ১৭ লক্ষ পরিবার কাজ করে বসে রয়েছে। বাংলায় জিততে পারেনি বলে প্রতিশোধ নিতে এরা ১৭ লক্ষ পরিবারের টাকা এরা ইচ্ছাকৃত ভাবে আটকে রেখেছে। 
  7. দিল্লি থেকে চারদিন অন্তর অন্তর টিম পাঠাচ্ছে ভুল ধরার জন্য। একটাও ভুল ধরতে পারেনি। আমি বুক ঢুকে বলে যাচ্ছি ১১ লক্ষ মানুষ যাঁদের বাড়ি নেই, মাথার উপর ছাদ নেই, বাড়ি করার জন্য ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা দরকার যাঁর মধ্যে চল্লিশ হাজার টাকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার দিয়েছে। সেই টাকা ইচ্ছাকৃতভাবে গায়ের জোরে ওরা আটকে রেখেছে। এর জবাব পঞ্চায়েতে দেবেন কি দেবেন না?
  8. প্রতিটা পঞ্চায়েতে শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক অবাধ নির্বাচন হবে, মানুষ ভোট দেবে। আমি বিরোধীদের উদ্দেশে বলব, সিপিএম-বিজেপিকে বলব দলাদলি না করে একা লড়ুন। সমবায়ে দেখেছেন রাম-বাম মডেল। তাও তৃণমূলকে হারাতে পারেনি। সিপিএমের হার্মাদ, বিজেপির জল্লাদ আর কংগ্রেসের উন্মাদদের আমি বলছি যদি পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়ন না দিতে পারেন সরাসরি আমাকে জানাবেন আমি মনোনয়ন জমা করিয়ে যাব। মনোনয়ন করানোর দায়িত্ব আমার। আমি নম্বর দিয়ে যাচ্ছি। ৭৮৮৭৭৭৮৮৭৭ এই নম্বর। সিপিএমের, বিজেপি, কংগ্রেস, আর নির্দল বন্ধুদের বলছি এই নম্বরে ফোন করে সরাসরি আমাকে জানান। আমি নিজে দাঁড়িয়ে মনোননয়ন করাব।