Na Bollei Noy: লগ্নি গন্তব্য হিসেবে বাংলা পছন্দের তালিকায় নেই? তাই কি চপমুড়ি বিক্রির পরামর্শ? যে কথা ‘না বললেই নয়’

Na Bollei Noy: কত বিশ্বকর্মা প্রতিমা বিক্রি হয়েছে, তা দিয়ে না কি রাজ্যের শিল্প সম্ভাবনা মাপছে তৃণমূল?

Na Bollei Noy: লগ্নি গন্তব্য হিসেবে বাংলা পছন্দের তালিকায় নেই? তাই কি চপমুড়ি বিক্রির পরামর্শ? যে কথা ‘না বললেই নয়’
না বললেই নয়
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 18, 2022 | 1:32 PM

কলকাতা: সত্যিই কি তলানিতে পৌঁছেছে রাজনীতি (Politics)? যে ব্যবস্থায় দেশ চলে, রাজ্য চলে, সেখানে নৈতিকতার এই পরিণতি? গত কয়েক মাসে রাজ্যবাসী কী কী দেখলেন? পর্যায়ক্রমে সাজাই। মন্ত্রীর বান্ধবীর বাড়িতে টাকার পাহাড়। শাসকদলের (Trinamool Congress) দাপুটে নেতার চোখ কপালে তোলা সম্পত্তি। ভুয়ো চাকরি। রাস্তায় পড়ে বেকারের হাহাকার। এরপরেও হয়তো মানুষ ভরসা করে ভোটের লাইনে দাঁড়াতেন। কিন্তু রাজ্যবাসী কী শুনলেন? বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যে যেসব কথা বলতে দ্বিধা হয়। প্রকাশ্যে জোর গলায় সেই বিদ্রুপ। অশ্লীল ইঙ্গিত। একে অপরের ব্যক্তিগত জীবনে কাদা ছোড়াছুড়ি। এই কি রাজনীতি? রাস্তায় যাঁরা দিনের পর দিন সুবিচারের আশায় বসে, তাঁরা থার্ড গ্রেডেড PNPC শুনতে আগ্রহী? নাকি নতুন একটা ইস্যু খাড়া করে আসলটাকে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। জানেন কি, রাজ্যের লগ্নি তলানিতে? 

কথায় আছে বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী। কেন্দ্রীয় শিল্প বাণিজ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান বলছেন, বাণিজ্যের ভাঁড়ে মা ভবানী। জনসংখ্যার বিচারে চতুর্থ বৃহত্তম রাজ্য। একাধিক শিল্প সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গ নাকি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রবেশদ্বার। এখান থেকেই শিল্পবাণিজ্য ছড়িয়ে পড়বে গোটা দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায়। কী করে ছড়াবে? শিল্প কোথায়? লগ্নির যা হিসেব কেন্দ্র দিচ্ছে তাতে তো একেবারে লক্ষ্মীছাড়া দশা। তবে তা বোঝার জন্য কেন্দ্রের পরিসংখ্যানের প্রয়োজন রয়েছে কি? পাঁচশো দিন কবে পেরিয়ে গেছে। ছেলেমেয়েগুলো রাস্তায় বসে রয়েছে। শিক্ষক হতে চেয়েছিলেন। এখন হাইকোর্টের দিকে চাতক পাখির মতো তাকিয়ে সকলে। বিচারবিভাগের হস্তক্ষেপে যদি শিকে ছেঁড়ে, তাও সকলের ওপর লক্ষ্মী সদয় হবেন তা নয়। এদিকে কারিগরিতেও গোলমালের খবর সামনে আসছে। দুদিন আগে নেতাজি ইন্ডোরে বেসরকারি নিয়োগপত্র দেওয়া হল। তাতেও এলোমেলো অবস্থা। মোদ্দা কথা ওটাই। শিল্প নেই। বিনিয়োগ নেই। অতএব চাকরি নেই।    

দুহাজার একুশে দফতর বণ্টনে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ভাগে পড়েছিল শিল্প দফতর। রাজনৈতিক মহলের কেউ কেউ মুচকি হেসে বলেছিলেন, এই ভাল। ঝঞ্ঝাট নেই। শিল্প আসে না। তাই শিল্পমন্ত্রীকে বিশেষ ঝামেলা পোহাতে হবে না। শিল্পমন্ত্রী অবশ্য অন্য ঝামেলায় জড়িয়ে আপাতত ইডি-সিবিআইয়ের হাতে পিংপং বলের মতো পাক খাচ্ছেন। আর তাঁকে ঘিরে সব মুখরোচক খবর, সকাল সন্ধে চায়ের সঙ্গে গোগ্রাসে গিলছে রাজ্যবাসী। নতুন শিল্পমন্ত্রী যিনি হয়েছেন, তাঁকেও যে ছুটে বেড়াতে হচ্ছে তা নয়। এই দুর্যোগের দিনে কেই বা ছোটাছুটির ঝুঁকি নেয়। কিন্তু, কথায় আছে না যে বসে থাকে, তার ভাগ্যও বসে গেছে। রাজ্যের শিল্পভাগ্য একেবারে বসে গিয়েছে। লকডাউন একেবারেই লগ্নির কোমর ভেঙে দিয়েছে। বছরের শেষে বিশ্বে মন্দা আছড়ে পড়তে পারে। পশ্চিমী গবেষকরা পূর্বাভাস দিতে শুরু করেছেন। বিশ্বব্যাঙ্কও বলছে, দেশে দেশে মুদ্রাস্ফীতি। কাকে কখন ডোবাবে, তার গ্যারান্টি নেই। তার মাঝেও সাড়ে সাত শতাংশের বৃদ্ধির স্বপ্ন দেখছে ভারত। আমাদের রাজ্য কি সেই স্বপ্নে সামিল? কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রক বলছে নয়। জানুয়ারি থেকে জুলাই মাসে দেশে যে খাঁটি লগ্নি হয়েছে, তাতে বাংলার প্রাপ্তি নগন্য। মোট লগ্নির এক শতাংশও নয়। লগ্নি গন্তব্যে প্রথম দশে প্রতিবেশী ঝাড়খণ্ডও রয়েছে। ওড়িশা রয়েছে। যে রাজ্যগুলিকে অনগ্রসর বলে অনেকেই নাক সিঁটকোয়। ভাবা যায়, একসময় যা ছিল গোটা দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড, সেখানে আজ লগ্নি নেই। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল অবশ্য ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের ধার ধারছে না। কুণাল ঘোষ সটান জানিয়ে দিয়েছেন, সব কেন্দ্রের চক্রান্ত। রাজ্যের সাফল্যকে হিংসা করেই নাকি, পরিসংখ্যানে গরমিল করা হয়েছে। আমরা সকলে জানি জনমুখী প্রকল্প এক জিনিস আর শিল্পায়ন আরেক জিনিস। জনমুখী প্রকল্পে রাজ্যে খরচ করে। আর রাজস্ব আয় করে শিল্পক্ষেত্র থেকে। ট্যাক্স বাবদ। যত বেশি শিল্প, তত বেশি ট্যাক্স। তত বেশি আয়। তৃণমূল মুখপাত্র দাবি করছেন, জনকল্যাণের তালিকায় দেশে পয়লা নম্বরে পশ্চিমবঙ্গ। তা যদি সঠিকও হয়, সেই প্রকল্পগুলি চালাতেও তো টাকা লাগবে। রাজ্যের আয় হয়তো কাগজে কলমে জাতীয় হারের থেকে বেশি। দেশে অনেক পিছিয়ে পড়া রাজ্য রয়েছে। সকলের নাফানুকসান মিলিয়েই দেশের জিডিপি। কিন্তু, বাংলার রাজস্ব আদায় এত ভাল হলে প্রতি বছর ধারের পাহাড় চড়ছে কেন? বিধানসভায় রাজ্য যে বাজেট পেশ করেছে, তাতেই তো বলা হয়েছে বছর শেষে ঋণ পৌছবে পাঁচ লক্ষ ছিয়াশি হাজার কোটি টাকায়। সুদ-আসল মিলিয়ে গুণতে হবে সত্তর হাজার কোটি টাকা। মুখ্যমন্ত্রী প্রায় প্রতি প্রশাসনিক সভায় বলছেন টাকা নেই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রাপ্য বকেয়ার দাবিও জানিয়ে এলেন দুমাস আগে। বামেরা যাকে সেটিং বলে বিদ্রুপ করতে ছাড়ল না। সোনার সংসার হলে তো এই পরিস্থিতি হত না। পরিস্থিতিটা সিপিএম অবশ্য চুটিয়ে উপভোগ করছে। সরাসরি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জমানার সঙ্গে তুলনা টানছে তারা।  

বিরোধীদের দায়িত্ব সরকারের খুঁত খুঁজে বের করা। তারা অভিযোগ করবেই। আবার শাসক দল ও সরকারের মন্ত্রী কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মনোমত না হলে তা মানবেন না। মানা সম্ভবও নয়। মেনে নিলে রাজনৈতিক ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। কিন্তু, খোদ মুখ্যমন্ত্রীর একটি বক্তব্যে ইঙ্গিত মিলেছে। লগ্নি গন্তব্য হিসেবে বাংলা এখন পছন্দের তালিকায় নেই। তাই যদি হত, তাহলে তিনি পুজোয় চপমুড়ির দোকান দেওয়ার পরামর্শ দিতেন না।  কোনও কাজ ছোট নয়। কিন্তু, যাঁরা ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর প্রশিক্ষণ নিলেন, তাঁরা চপমুড়ি বিক্রি করবেন?

বিনিয়োগ আসছে না। শেষ কবে কারখানা খুলেছে কারও মনে নেই। বিরোধীদের অভিযোগ, লগ্নিকারীরা রাজ্য ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। তবে আমাদের মানে জনতার তো পালানোর উপায় নেই। আমাদের থাকতে হবে এখানেই। তাই কিছু কথা আজ না বললেই নয়। টিভি নাইন বাংলায়, না বললেই নয় দেখবেন। সময়? রাত ৮.৫৭।