Mamata Banerjee : রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ‘অতি সক্রিয়’ মমতা উপরাষ্ট্রপতি ভোট নিয়ে ‘চুপ’, কালক্রম তুলে ধরে খোঁচা সুজনের

Mamata Banerjee : উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে তৃণমূল নেত্রীকে খোঁচা দিলেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। মমতা কেন বিরোধীদের ডাকা আজকের বৈঠকে গেলেন না, সেই প্রশ্ন তুললেন।

Mamata Banerjee : রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে 'অতি সক্রিয়' মমতা উপরাষ্ট্রপতি ভোট নিয়ে 'চুপ', কালক্রম তুলে ধরে খোঁচা সুজনের
উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খোঁচা দিলেন সুজন চক্রবর্তী
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 17, 2022 | 11:43 PM

কলকাতা : রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ঘিরে বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ করতে তাঁকে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা গিয়েছে। এমনকী, দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে বিরোধীদের নিয়ে বৈঠকের আয়োজনও করেছিলেন। কিন্তু, উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন ঘিরে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ‘নীরবতা’ নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। এই নিয়ে তাঁকে খোঁচা দিলেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী (Sujan Chakraborty)। উপরাষ্ট্রপতি প্রার্থী ঠিক করতে বিরোধীদের আজকের বৈঠকে তৃণমূল কেন যোগ দিল না, সেই প্রশ্নও উঠেছে।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিন ঘোষণার পরই বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ করতে উদ্যোগী হন মমতা। ১১ জুন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী, সিপিএমের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি-সহ বিরোধী দলগুলির ২২ জন নেতাকে চিঠি দেন তিনি। বিরোধীদের সর্বসম্মতিক্রমে প্রার্থী ঠিক করতে ১৫ জুন দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে বৈঠকের ডাক দেন। মমতার ডাকা সেই বৈঠকে অংশ নিয়েছিল বিরোধী দলগুলি।

গত ২১ জুন বিরোধী দলগুলি দ্বিতীয়বার বৈঠকে বসে। সেখানে মমতা উপস্থিত থাকতে পারেননি। তবে তৃণমূলের প্রতিনিধি হিসেবে বৈঠকে যোগ দেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

ওইদিন বিরোধীরা তাদের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর নাম ঘোষণা করে। সেখানেও তৃণমূলের সংযোগ। বিরোধীদের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী যশবন্ত সিনহা বিজেপি ছেড়ে ২০২১ সালের ১৩ মার্চ তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। তবে তাঁর নাম ঘোষণার কয়েকঘণ্টা আগে তৃণমূল ছাড়েন তিনি। ওইদিন রাতেই বিজেপি এনডিএ-র রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে দ্রৌপদী মুর্মুর নাম ঘোষণা করে।

দ্রৌপদী মুর্মুর সমর্থনের কথা জানায় এনডিএ জোটে না থাকা একাধিক দল। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক জানিয়ে দেন, তাঁদের রাজ্যের ভূমিকন্যা দ্রৌপদীকে সমর্থন করবে তাঁর দল বিজেডি। মহারাষ্ট্রে শিবসেনার টালমাটালের পর তারাও দ্রৌপদীকে সমর্থন করছে। এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে নরম সুর শোনা যায় মমতার গলায়। তিনি বলেন, দ্রৌপদীকে প্রার্থী করা হচ্ছে আগে জানালে তাঁরা অন্য কিছু ভাবতেন। তাঁর কথায়, “মহিলা প্রার্থী হলে আমি সবসময় রাজি। বিজেপি যদি আগে থেকে জানাত একজন আদিবাসী মহিলাকে প্রার্থী করছে, তাহলে আমরাও বিরোধী ১৬-১৭ টি দল মিলে চেষ্টা করতাম। বৃহত্তর স্বার্থে একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম।”

মমতার ওই মন্তব্যের পর তাঁর বিরুদ্ধে সরব হয় বামেরা। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থী নিয়ে দলের নীচুতলার সমালোচনা সত্ত্বেও যশবন্তকে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিএম। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে রাজ্যে সিপিএমের একমাত্র ভোটার বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য জানিয়ে দেন, তেতো গেলার মতো হলেও যশবন্তকে ভোট দেবেন তিনি। বামেদের যখন এই মনোভাব তখন মমতার সুর নরম করা নিয়ে তোপ দাগেন সুজন চক্রবর্তী।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে এই টানাপোড়েনের মধ্যেই গতকাল উপরাষ্ট্রপতি পদে এনডিএ প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। বাংলার রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় উপরাষ্ট্রপতি পদে এনডিএ প্রার্থী।

ধনখড়ের নাম ঘোষণার পরই রাজনৈতিক চাপান-উতর তৈরি হয়েছে। তৃণমূলের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে এই নিয়ে এখনও কিছু বলা হয়নি। মমতা কোনও মন্তব্য করেননি। তৃণমূলের নেতারা বলছেন, ২১ জুলাই দলের নেত্রী বৈঠক ডেকেছেন। তার পর তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী, এই নিয়ে তৃণমূল বক্তব্য জানাবে।

আজ আবার বিরোধী দলগুলি উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থী ঠিক করতে বৈঠকে বসেছিল। ১৭টি বিরোধী দল সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিল। ছিলেন না তৃণমূলের কোনও প্রতিনিধি। ওই বৈঠকের শেষে মার্গারেট আলভার নাম বিরোধীদের উপরাষ্ট্রপতি প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন শরদ পওয়ার। মার্গারেট আলভাকে নিয়েও তৃণমূলের তরফে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি।

বিরোধীদের আজকের বৈঠকে তৃণমূলের অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠলে শরদ পওয়ার বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁরা যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, কোনও কনফারেন্সে তিনি ব্যস্ত ছিলেন। আর দিল্লিতে তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, কেন তৃণমূল বৈঠকে নেই, এটা তিনি বলতে পারবেন না। তবে তৃণমূলের অন্য একটি সূত্র বলছে, এই বৈঠক নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কোনও ফোন করা হয়নি। এত বড় একটা ইস্যুতে অন্য কাউকে নয়, দলনেত্রীকে ফোন করা উচিত। তারপর তিনি প্রতিনিধি পাঠানো নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

তবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে মমতার উদ্যোগ থেকে আজকের ঘটনাক্রম তুলে ধরে তৃণমূল নেত্রীকে খোঁচা দিলেন সুজন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে অতি সক্রিয় ছিলেন। কেউ মিটিং ডাকার আগেই মিটিং ডাকলেন। তারপর দ্রৌপদী মুর্মুকে নিয়ে সুর নরম করে মোদীকে বার্তা দিলেন। আর আজ বিরোধীদের মিটিংয়ে গেলেন না। তিনি মিটিংয়ে গেলেন না কেন?”

গত ১৩ জুলাই দার্জিলিঙের রাজভবনে জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার বৈঠকের প্রসঙ্গ তোলেন সুজন। ওইদিন প্রায় আড়াই ঘণ্টা বৈঠক হয়েছিল দার্জিলিঙের রাজভবনে। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হঠাৎ জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে দেখা করতে এলেন কেন, সেই প্রশ্ন উঠছে। যদিও রাজ্যপাল পরে জানান, তাঁর আমন্ত্রণেই দার্জিলিঙে আসেন হিমন্ত বিশ্বশর্মা। ওই বৈঠক নিয়ে তৃণমূলের তরফে বলা হয়, সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আর কিছুটা হেঁয়ালি রেখে বিজেপি নেতা রথীন্দ্র বসুর বক্তব্য, “রাজনীতিতে সবই সম্ভব। তিন নেতা এক টেবিলে নানা বিষয়ে কথা হয়। কী কথা হয়েছে তা তাঁরাই বলতে পারবেন।”

তবে ওই বৈঠক নিয়ে মমতাকে কটাক্ষ করলেন সুজন। তিনি বলেন, “উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী কি দার্জিলিঙের বৈঠকেই ঠিক হয়ে গিয়েছিল? রাজ্যের পরবর্তী রাজ্যপালও কি ওই বৈঠকে স্থির হয়েছে? মানুষ সব বুঝতে পারছে। ভবিষ্যতে স্পষ্ট হয়ে যাবে।”