Friendship Day: সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রিয় বন্ধুর ‘এগজ়িবিশন’ গোপনে কতটা মনখারাপের জন্ম দেয়, সমাজকর্মী পিয়া চক্রবর্তী কী বললেন?

Happy Friendship Day: বন্ধুর ‘সাকসেস স্টোরি’তে কম পরিচিত বন্ধুর ঈর্ষা হতেই পারে

Friendship Day: সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রিয় বন্ধুর ‘এগজ়িবিশন’ গোপনে কতটা মনখারাপের জন্ম দেয়, সমাজকর্মী পিয়া চক্রবর্তী কী বললেন?
বন্ধুত্ব মানে কি শুধুই দেখনদারি?
Follow Us:
| Updated on: Aug 07, 2022 | 7:21 PM

‘‘দোস্ত ফেল হো জায়ে তো দুখ হোতা হ্যায়, লেকিন দোস্ত ফার্স্ট আ জায়ে তো জ়্য়ায়াদা দুখ হোতা হ্যায়।’’ ‘থ্রি ইডিয়টস’-এর এই সংলাপ অক্ষরে-অক্ষরে সত্য়ি। প্রিয় বন্ধুর সাফল্যে ‘দুখ’—আরও নির্দিষ্টভাবে বললে হিংসে—মোটেই নতুন কোনও বিষয় নয়। যেটা নতুন, সেটা হল সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রিয় বন্ধুর সাফল্য উদযাপন দেখে হিংসে এবং ‘ইনরিওরিটি কমপ্লেক্স’। কারণ সোশ্যাল মিডিয়ায় 24X7 যে প্রদর্শনী বা ‘এগজ়িবিশনিজ়ম’ চলে, তাতে সবসময়ই অবচেতনে জারিত হতে থাকে এই ‘ইনরিওরিটি কমপ্লেক্স’। ছোটবেলায় যে বন্ধুর সঙ্গে টিফিন ভাগ করে খেয়ে বেড়ে ওঠা, সেই-ই যদি হঠাৎ করে কর্মসূত্রে বিদেশবাসী হয়ে যায়, তাহলে সক্কলকে তার প্রোফাইল দেখিয়ে বলতে বেশ ভাল লাগে যে, ‘‘আমার বন্ধু এখন ওমুক শহরের বাসিন্দা। তমুক জায়গায় চাকরি করে।’’

এ দিকে মনে মনে যেন ঠিক ততটাই হতাশা আসে। এ দিকে আবার ঘটা করে বন্ধুত্ব দিবস উদযাপন করি। পছন্দের কফিশপে কফিতে চুমুক দিতে-দিতে সুখ-দুঃখের গল্প করি। যদিও সেখানে পাল্লা ভারী PNPC-রই। বন্ধু তো সে-ই, যার সঙ্গে মনের কথা খুলে বলা যায়, যাকে ভরসা করে নিজের গোপন কথা ভাগ করে কিছুটা মনের বোঝা লাঘব করা যায়। কাছের বন্ধু আমাদের মন ভাল করে বুঝতে পারে। আমরা আজকাল সকলেই উচ্চাকাঙ্খী। অনেকেই এই উচ্চাশার ক্ষেত্রে কোনও শেষ খুঁজে পান না। প্রচলিত আছে, ‘ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন’ দেখা নাকি মোটেই কাজের কথা নয়। তবে বাস্তব এই প্রবাদকে মান্যতা দেয় না—এমনটা নয়। আসলে এই ছোট-ছোট স্বপ্নকে ঘিরেই ডানা মেলে ভালবাসারা। এগিয়ে যেতে গেলে স্বপ্ন দেখতে হয়।

এগিয়ে যেতে গেলে পিছুটান ভুলেই এগোতে হয়। তবে ‘লাভ’, ‘লাইক’, ‘কমেন্ট’ আর ‘শেয়ারে’-এর কাউন্টের চক্করে ভার্চুয়াল জীবন যখন প্রতিনিয়ত নিজের অজান্তেই ধরিয়ে দেয় টার্গেট, তখন বন্ধুত্ব কি শুধুই বন্ধুত্ব নাকি অনেকটাই দেখনদারি? মনের মধ্যে অনেক প্রশ্নই ঘুরপাক খায় এমন বিশেষ দিনে। সেখান থেকেই ৩টে প্রশ্ন বেছে নিয়ে TV9 কথা বলেছে সমাজকর্মী পিয়া চক্রবর্তীর সঙ্গে। সেই কথোপকথনের অংশই রইল আপনাদের জন্য।

প্রশ্ন: সোশ্যাল মিডিয়ার এই ‘এগজ়িবিশনিজ়ম’ দুই প্রিয় বন্ধুর মনস্তত্ত্বে কতটা গভীর প্রভাব ফেলে আজকের দেখনদারি-সর্বস্ব দুনিয়ায়? বন্ধু তো সে-ই, যার সঙ্গে মনের কথা খুলে বলা যায়, যার সঙ্গে একাত্ম হওয়া যায়। বন্ধুত্বের মধ্যে থাকে গভীর ভালবাসা। এই রকম একটা বন্ধুত্বের ‘সম্পর্ক’-এর মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়াকে আমি Important Factor হিসেবে দেখি না। ‘এগজ়িবিশনিজ়ম’-এর কথাই যদি ওঠে, যদি দেখনদারির কথা ওঠে, তাহলে আমি বলব তা বন্ধুত্বের উপর প্রভাব ফেলে না। কারণ সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা কিছুটামাত্র সত্য— আংশিক সত্য-মিথ্যে এইসব কিছু মিলিয়েই আমাদের অস্তিত্ব। আমাদের কাছের যে বন্ধু, সে কিন্তু আমার পুরোটাই জানে। আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার যেটুকু অংশ তুলে ধরি না কেন, তা আমার বন্ধুর জানা। আমার বন্ধু জানে আমার জীবনের সত্যিটা কি। সেটাই আমার কাছে বন্ধুত্ব। আর তার সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ার খুব একটা গভীর স্তরে কোনও যোগাযোগ নেই।

প্রশ্ন: ‘লাইক’, ‘লাভ’-এর কাউন্ট বাড়াতে গিয়ে ভাল, আরও ভাল, আরও-আরও ভাল-র যে দৌড় সারাক্ষণ চলে সোশ্যাল মিডিয়ায়, তা একে-অপরের কাছের দু’টি মানুষকেই কি প্রকারান্তরে প্রয়োজনের তুলনায় অনেকটা বেশি ‘অ্যাশপিরেশনাল’ বা উচ্চাকাঙ্ক্ষী করে তুলছে? যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা নিজেদের তুলে ধরি, তখন আমাদের মনের মধ্যে এটাই কাজ করে যে, আমাদের জীবনটা যেন দেখতে ভাল লাগে। এটা পুরোটাই একটা ‘Optics’-এর গল্প। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব যে একেবারেই নেতিবাচক, তা নয়। কারণ মনের কথা কিছুক্ষেত্রে তুলে ধরা যায় এখানে। এই দৃষ্টিনান্দিকতার চক্করে আমরা নিজস্বতা থেকে দূরে সরে যাই।

প্রশ্ন: যে পৃথিবীতে ‘তোমার বাড়ি কোথায়’-এর পরিবর্তে আমরা সদ্য-পরিচিতকে জিগ্য়েস করি ‘আর ইউ অন হোয়াটসঅ্যাপ/ফেসবুক’, সেই ভার্চুয়াল পৃথিবীতে ‘দোস্ত’-এর সাফল্য বা চকমকে আপডেট দেখেও ‘জ়্য়ায়াদা দুখ’ না-পাওয়ার উপায় আদৌ কিছু আছে কি? আমার ফেসবুকে ৫০০ জন বন্ধু থাকতেই পারেন। তাঁরা সকলেই যে আমার ব্যক্তিগত জীবনেও খুব কাছের বন্ধু এমনটা তো নয়। সেটা আমার মনে হয় কারও ক্ষেত্রেই হয় না। কাজেই আমার যাঁরা বন্ধু, তাদের সাফল্য দেখলে আমার কোনও সমস্যা তৈরি হয় না। আমার বন্ধু যদি কোনও ক্ষেত্রে সাফল্য পায়, আমি তার গল্প আমার ফিডে শেয়ার করব। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ব্যবহারও দেখা যায়। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার তালিকায় অনেক বন্ধু থাকেন। তাঁদের ‘সাকসেস স্টোরি’ দেখলে যে কম পরিচিত কোনও বন্ধুর ঈর্ষা হবে না, তা তো নয়। ঈর্ষা আমাদের জীবনের খুব স্বাভাবিক একটা আবেগ। মানুষের মধ্যে ঈর্ষা কোনও অস্বাভাবিক ঘটনাও নয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় যে কোনও মানুষ তাঁর নিজের জীবনের ভাল অংশটিই খুব বড় করে দেখান, ফলে সেখানে হীনমন্যতা আসতেই পারে। তবে প্রিয় বন্ধু বা কাছের কোনও বন্ধুর ক্ষেত্রে তা সত্যি নয়।