Lesbian-Gay: ‘প্রাইড মান্থ’-এ শরীরে পুরুষ, মননে নারী বিনন্দনের ‘আর একটি প্রেমের গল্প’

Pride Month 2022 Exclusive: জুন মাস ‘প্রাইড মান্থ’, এলজিবিটিকিউআই+ সম্প্রদায়ের অধিকার উদযাপনের জন্য যা বিশেষভাবে স্বীকৃত। এই ‘প্রাইড মান্থ’-এ TV9 জানল বিনন্দনের জীবনকাহিনি।

Lesbian-Gay: ‘প্রাইড মান্থ’-এ শরীরে পুরুষ, মননে নারী বিনন্দনের ‘আর একটি প্রেমের গল্প’
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 29, 2022 | 3:56 PM

‘অ্যাক্সেপট্যান্স’ বা গ্রহণযোগ্যতা শুরু হয় বাড়ি থেকে। ‘কামিং আউট’-এর কথা প্রথম শেয়ার করা হয় বাবা-মায়ের সঙ্গে। কারণ ওটা আমাদের সবচেয়ে সুরক্ষিত জায়গা। পৃথিবীতে যত বড়ই ঝড়-জল আসুক না কেন, এই দু’জন মানুষ সবসময় চাইবে তাঁদের সন্তান যেন ভাল থাকে। কিন্তু ‘আমার ছেলে বা মেয়ে সমকামী’—এটা জানতে পেরে প্রথমে মেনে নিতে পারেন না অধিকাংশ মা-বাবা। কখনও ধর্মের দোহাই, কখনও সামাজিক লজ্জা… সব মিলিয়ে মানতে সমস্যা হয় যে, আমার সন্তান পুরুষ হয়েও মননে নারী অথবা নারী হয়েও মননে পুরুষ। কিন্তু তা বলে কি সে ‘সন্তান’ নয়? এমন ঘটনা আমাদের সমাজে নেহাত কম নেই। বিনন্দনের গল্পটাও কিছুটা এরকমই।

দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটের ছেলে বিনন্দন সরকার। কিশোর বয়স থেকেই বিনন্দন জানত পুরুষ হয়েও সে আগ্রহী নয় মহিলাদের প্রতি। তাঁর মনে কোনও মহিলার প্রতি ‘বিশেষ’ কোনও অনুভূতি নেই। কিন্তু সেই কথা সে কোনওদিন মুখ ফুটে বলতে পারেনি মা-বাবাকে। কিন্তু যে দিন তার ‘কামিং আউট’ হল, বদলে গেল চিত্রটা। জুন মাস ‘প্রাইড মান্থ’, এলজিবিটিকিউআই+ সম্প্রদায়ের অধিকার উদযাপনের জন্য যা বিশেষভাবে স্বীকৃত। এই ‘প্রাইড মান্থ’-এ TV9 জানল বিনন্দনের জীবনকাহিনি।

সালটা ২০১৮। প্রথম চাকরি পেয়েছে বিনন্দন। প্রথম চাকরির অনুভূতিটা সবার কাছেই একটু অন্যরকম হয়। কিন্তু বিনন্দন ভাবেনি যে এরপরই পাল্টে যাবে জীবনের ছবিটা। একদিন সকালে মা-বাবার সঙ্গে খেতে বসে বিনন্দন জানাল, তাঁর মনের কথা। সে মহিলাদের প্রতি আগ্রহী নয়। ততদিনে তাঁর মনে জায়গা করে নিয়েছে রোহিণী। রোহিণী একজন রুপান্তরকামী মহিলা। খুব স্বাভাবিকভাবেই এই বিষয়টা প্রথমে মেনে নিতে পারেননি বিনন্দনের মা-বাবা।

কিন্তু এর আগে থেকেই বিনন্দন তাঁর মাকে ‘ফায়ার’-এর মতো সিনেমা দেখায়। ‘এমনও হয়’, এটাই প্রথমে মেনে নিতে পারেননি বিনন্দনের মা। নিজের সন্তান যে কোনওদিন গে হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে, এটাও তিনি ভাবেননি। সুতরাং বিনন্দনের ‘কামিং আউট’টা বেশ শকিং ছিল তাঁর মায়ের কাছে।

বাবার সঙ্গেও যে সম্পর্কটা ঠিক ছিল, তা নয়। তাই ‘কামিং আউট’-এর পর শুরু হয় বাড়িতে অশান্তি। নিজের পরিবারের লোকজনের থেকেই নানা কুরুচিকর কথা শুনতে হয়েছে বিনন্দনকে। শেষে ছাড়তে হল সেই বাড়ি। কলকাতায় প্রথম চাকরি নিয়ে বিনন্দন ওঠে তাঁর বর্তমান জীবনসঙ্গী রোহিণীর বাড়িতে।

এখানেই যে তাঁর যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়, তা কিন্তু নয়। সেখানেও পুলিশ-কাছারির সম্মুখীন হতে হয় বিনন্দনকে। বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের বিবাদ। কারণ সন্তানের সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন। এরপর কাজ, পড়াশোনা, পরিচয়… সব নিয়েই সমাজ, পরিবারের সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করতে যেতে হয় বিনন্দনকে।

এটা ২০২২ সাল। বিগত ৫ বছরে পুরো চিত্রটাই বদলে গিয়েছে বিনন্দনের জীবনে। এখন বিনন্দন ‘প্রান্তকথা’ নামক সংস্থার অ্যাকাউন্ট্যান্ট  এগ্জিকিউটিভ। বাবা-মায়ের সঙ্গে এখন তাঁর সম্পর্ক বেশ ভাল। দমদমের তিন কামরার ফ্ল্যাটে এখন রোহিণী আর বিনন্দনের সুখের সংসার। মাঝে-মাঝে বালুরঘাট থেকে মা-বাবা গিয়ে থাকেন বিনন্দনের কাছে। কিন্তু এই ‘হ্যাপি বিগিনিং’টা একদিনে হয়নি। তবে তাঁরা বুঝেছেন তাঁদের সন্তানকে। কারণ দিনের শেষে তাঁর সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন বা লিঙ্গ যাই-ই হোক না কেন, সে আপনার সন্তানই থাকবে।