আলাদা ট্র্যাকে মিলে গিয়েছিলেন মিলখা আর আব্দুল খালেক

মিলখা আর খালেক, ট্র্যাকে চিরকালীন লড়াইয়ের বাইরেও একে অপরের প্রতি ছিলেন শ্রদ্ধাশীল। পরম বন্ধু।

আলাদা ট্র্যাকে মিলে গিয়েছিলেন মিলখা আর আব্দুল খালেক
আলাদা ট্র্যাকে মিলে গিয়েছিলেন মিলখা আর আব্দুল খালেক (সৌজন্যে-টুইটার)
Follow Us:
| Updated on: Jun 21, 2021 | 4:00 PM

লাহোর: মিলখা সিংয়ের প্রয়াণ নতুন করে ফিরিয়ে দিয়েছে পুরনো গল্প। ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা অ্যাথলিটের রোম অলিম্পিকে ৪০০ মিটারে চতুর্থ হওয়া। সব কিছু ছাপিয়ে গিয়ে পাকিস্তানের অ্যাথলিট আব্দুল খালেকের সঙ্গে তাঁর দ্বৈরথ।

ভারত আর পাকিস্তান, দুই আলাদা ট্র্যাকে জীবনভর দৌড়েছেন দু’জন। কিন্তু জীবনের অলিগলি যেন একই রকম ছিল মিলখা আর খালেকের। ফ্লাইং শিখকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে খালেকের ছেলে মহম্মদ ইজাজ় তুলে ধরেছেন অনেক অজানা গল্প। ওয়াঘার এপার ওপারে জন্মালেও যা আসলে মিলখা আর খালেককে মিলিয়ে দিয়েছিল।

মিলখার মতো অনটন ঠেলে শীর্ষে উঠে আসা খালিকের। মিলখা চাকরি করতেন সেনাবাহিনীতে। সেখান থেকেই দৌড়বিদ হয়ে ওঠা তাঁর। খালেকও তাই। পাক সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন খালেক। সেখান থেকেই স্পিডস্টার হয়ে ওঠা। সেই সময় খালেককে বলা হত এশিয়ার দ্রুততম মানব। ১৯৫৬ সালে মেলবোর্ন, ১৯৬০ সালে রোম অলিম্পিকে মিলখার মতোই অংশ নিয়েছিলেন খালেকও।

ইজাজ় বলেছেন, ‘মিলখাজির মতো আমার বাবাকেও একই রকম হতাশার শিকার হতে হয়েছিল। মেলবোর্ন আর রোম অলিম্পিকের সেমিফাইনালে চতুর্থ হয়েছিল বাবা। মিলখা স্যারের মতোই একই প্যাশন ছিল ওঁরও। যে কারণে বোধহয় দু’জন বিশ্ব ক্রীড়ায় একটা স্বতন্ত্র জায়গা তৈরি করে ফেলেছিলেন।’

২০০৯ সালে ইজাজ়কে ফোন করেছিলেন মিলখা। তখন ‘ভাগ মিলখা ভাগ’ সিনেমা তৈরি হচ্ছে। দরকার ছিল খেলেকের একটা ছবির। ইজাজ় সেই স্মৃতি এখনও ভোলেননি। ‘২০০৯ সালে মিলখা স্যার আমাকে ফোন করেন। ওঁকে নিয়ে বায়োপিক তৈরি হচ্ছে। খালেকের সঙ্গে লড়াইটাও রাখতে চাইছিলেন সিনেমায়। সেই কারণে অনুমতি নিতে চেয়েছিলেন। উনি বলেছিলেন, তোমার বাবা গ্রেট অ্যাথলিট ছিলেন। খালেককে হারিয়েই আমি ফ্লাইং শিখ হতে পেরেছিলাম। ওঁর জন্যই আজ আমার এই সম্মান।’

১৯৫৮ সালে টোকিওতে, ১৯৬০ সালে জাকার্তায় ২০০ মিটার ফাইনালে পাকিস্তানের খালেককে হারিয়ে সোনা জিতেছিলেন মিলখা। এশিয়ান ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে দু’জনের লড়াই তখন লোকগাথায় পরিণত হয়েছিল। ১৯৬০ সালে ভারত-পাকিস্তান অ্যাথলেটিক্স মিট হয়েছিল লাহোরে। সেখানে ২০০ মিটারে আবার হারিয়েছিলেন খালেককে।

মিলখা নিয়ে যখন আলোচনা হয়, তখন লাহারোর ওই ২০০ মিটার রেসের পরও ১০০ মিটার রিলেতে নেমেছিলেন দু’জন। তাতে জিতেছিল পাকিস্তান। রিলের শেষ ১০০ মিটার রেসটা আবার হয়েছিল মিলখা আর খালেকের।

আরও পড়ুন: রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য সম্পন্ন মিলখা সিংয়ের

ইজাজ় বলেছেন, ‘বাবা ব্যাটনটা যখন নেয়, তখন মিলখাজি পিছিয়ে ছিলেন। কিন্তু আমার বাবা তখন অপেক্ষা করেছিলেন ওঁর জন্য। মিলখাজি কাছে আসতে বলেছিলেন, মিলখা সাব, অব জ়োর লাগানা হ্যায়।’

২০০ মিটার হারের পর ১০০ মিটার রিলেতে জয় খালেককে আবার ফিরিয়ে দিয়েছিল সম্মান। বাংলাদেশ যুদ্ধে পাক সেনাবাহিনীর হয়ে ভারতের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন খালেক। ধরাও পড়েছিলেন ভারতীয় সেনার হাতে। মিরাটের জেলে বন্দি ছিলেন কিছু দিন। ইজাজ় বলেছেন, ‘তখন মিলখাজি জেলে দেখা করতে গিয়েছিলেন বাবার সঙ্গে। জেলারকে বলে এসেছিলেন, যেন বাবার প্রতি বাড়তি যত্ন নেওয়া হয়।’

মিলখা আর খালেক, ট্র্যাকে চিরকালীন লড়াইয়ের বাইরেও একে অপরের প্রতি ছিলেন শ্রদ্ধাশীল। পরম বন্ধু।

আরও পড়ুন: প্রয়াত মিলখা সিং : একনজরে তাঁর কীর্তি