কৃষ্ণা যখন রয়, রবির অস্ত হয়!

কৃষ্ণা যদি নায়ক হন, তবে এই ডার্বিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেন প্রীতম কোটাল। উত্তরপাড়ার ছেলের উপর ছিল ব্রাইটকে আটকানোর ভার। ম্যাচের আগেই নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকারের ভিডিও ক্লাস সেরে রেখেছিলেন প্রীতম। সেই মতো তাঁকে নড়তেই দিলেন না বাঙালি ডিফেন্ডার। সারা মাঠে যেখানে বল ধরার চেষ্টা করেছেন ব্রাইট, পৌঁছে গিয়েছেন প্রীতম। তাঁকে দেখে শিখতে পারেন ফক্সরা। এমনকি, কোচ ফাউলারও। তিনিও যদি কৃষ্ণার জন্য এমন 'পুলিশম্যান' রাখতেন, ম্যাচটা একপেশে হত না।

কৃষ্ণা যখন রয়, রবির অস্ত হয়!
ডার্বি জয়ের তিন নায়ক-রয় কৃষ্ণা, ডেভিড উইলিয়ামস ও জাভি হার্নান্ডেজ
Follow Us:
| Updated on: Feb 19, 2021 | 11:09 PM

এটিকে মোহনবাগান-৩ : এসসি ইস্টবেঙ্গল-১ (কৃষ্ণা ১৫, উইলিয়ামস ৭২, জাভি ৮৯) (তিরি-আত্মঘাতী ৪১)

অভিষেক সেনগুপ্ত

যদি করোনা নামক বিষফল না থাকত, শুক্র-রাতে কী হতে পারত মারগাওয়ে? ফতোরদা(Fatorda Stadium) চত্ত্বর ছয়লাপ হয়ে যেত সবুজ-মেরুন জার্সিতে। অসংখ্য পতাকায় দেখা যেত না রাতের আকাশ। ফতোরদার নিঃস্তব্ধতা ভেঙেচুরে দিত উত্তপ্ত স্লোগান। আর, শুক্র-রাতে টিম বাসে করে ফেরা হত না ফিজির ফুটবলারের। সমর্থকরা অগুনতি কাঁধ তাঁকে পৌঁছে দিত টিম হোটেল। সাতের দশকে কোনও বড় ম্যাচ জেতার পর ঠিক যে ভাবে সমর্থকদের কাঁধে চড়ে ক্লাব তাঁবুতে ফিরতেন মহম্মদ হাবিব, শ্যাম থাপা, সুভাষ ভৌমিকরা। একটা নব্বই মিনিটের ম্যাচ শেষ হলে স্মৃতির মতো ছোপ লেগে থাকে। কারও গোল, কোনও পাস, কারও সেভ। আরব সাগরের তীরে হাইলাইটসের মতো ফিরে ফিরে আসছে ঝলক, ১৫ মিনিট… ৭২ মিনিট.. ৮৯ মিনিট… আর কী আশ্চর্য, স্মৃতির আয়নায় ভাসছে শুধু একটাই মুখ, রয় কৃষ্ণা! যিনি ১৫-তেও ছিলেন। ৭২-এও। এমনকি ৮৯-এও! গোলের ঘনঘন বিস্ফোরণে যেন বারুদ হয়ে থাকলেন কৃষ্ণা। ডার্বি এমনও হয়! কোনও একজন একাই ফারাক গড়ে দেন। একাই কেউ কেড়ে নিয়ে যান ম্যাচটা। স্রেফ একাই জিতিয়ে দেন টিমকে। ফতোরদায় এসসি ইস্টবেঙ্গল(SC East Bengal) আরও একবার দেখল কৃষ্ণালীলা! যিনি গোল করলেন একটা, করালেন আরও দুটো। আর ফতোরদা, যেন তাঁর লীলাভূমি। এই আইএসএলে সব মিলিয়ে ১৪ গোল করে ফেললেন কৃষ্ণা। যার ৯টাই ফতোরদাতে। আইএসএল(ISL) জুড়ে অপ্রাপ্তিতে ছয়লাপ। এই ফিরতি ডার্বিতে সব মিটিয়ে নিতে চেয়েছিলেন লাল-হলুদ ফুটবলাররা। সম্মানের ম্যাচেও নিঃস্ব ইস্টবেঙ্গল। ড্যানি ফক্সদের ডিফেন্সের ভুলে পর পর গোল খেতে হল রবি ফাউলারের টিমকে। নির্বাসনে পড়ে বড় ম্যাচেও না হয় ছিলেন না লাল-হলুদ কোচ। টিমকে নিয়ে প্র্যাক্টিসেও কি নামতে পারেননি এতদিন? গত ডার্বিতেও এই কৃষ্ণাই ফারাক গড়ে দিয়েছিলেন। সেই তাঁকেই কেন ফ্রি খেলতে দেওয়া হল, ইংরেজ কোচই জবাব দিতে পারবেন। ম্যাচের একদম শুরুতে একবার ব্রাইটের জ্বলে ওঠা, বিরতির আগের ১০-১৫ মিনিট মরিয়া তাগিদ ছাড়া আর কিছু ছিল না লাল-হলুদের। কৃষ্ণা যদি নায়ক হন, তবে এই ডার্বিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেন প্রীতম কোটাল। উত্তরপাড়ার ছেলের উপর ছিল ব্রাইটকে আটকানোর ভার। ম্যাচের আগেই নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকারের ভিডিও ক্লাস সেরে রেখেছিলেন প্রীতম। সেই মতো তাঁকে নড়তেই দিলেন না বাঙালি ডিফেন্ডার। সারা মাঠে যেখানে বল ধরার চেষ্টা করেছেন ব্রাইট, পৌঁছে গিয়েছেন প্রীতম। তাঁকে দেখে শিখতে পারেন ফক্সরা। এমনকি, কোচ ফাউলারও। তিনিও যদি কৃষ্ণার জন্য এমন ‘পুলিশম্যান’ রাখতেন, ম্যাচটা একপেশে হত না। এক পাশে মার্সেলিনহো। আর এক পাশে ডেভিড উইলিয়ামস। মাঝখান থেকে খেলা তৈরি করা, চকিত গতিতে তোলা, বিপক্ষের বক্সে নিঃশব্দে ঢুকে পড়া, গোলের মরিয়া তাগিদের জন্যই কৃষ্ণা এই মুহূর্তে আইএসএলের সেরা বিদেশি। ডার্বিতেও সেটাই যেন প্রমাণ করলেন। ১৫ মিনিটের মাথায় তিরির পাঠানো লম্বা বলটা ধরে ঝড়ের গতিতে ঢুকে পড়েছিলেন ইস্টবেঙ্গল বক্সে। ফক্স-রাজু-সার্থকরা তাঁকে ধরতে পারেননি। কিপার সুব্রত পালকে টপকে ১-০ করেন কৃষ্ণা। প্রথমার্ধটা মোটামুটি দখলেই রেখেছিল হাবাসের টিম। বিরতির কিছু আগে হঠাত্‍ই ১-১ ইস্টবেঙ্গলের। তবে ওই গোলের সময় নিখুঁত থ্রো করার জন্য রাজু ছাড়া আর কেউই প্রশংসা পাবেন না। রাজুর থ্রো ক্লিয়ার করতে গিয়ে ৪১ মিনিটের মাথায় আত্মঘাতী গোল করে বসেন তিরি। বিরতির ঠিক আগে সমতা ফেরানো ইস্টবেঙ্গলের মধ্যে সাময়িক তাগিদ দেখা দিয়েছিল। সেটা আর দেখতে পাওয়া গেল না বিরতির ওপারে। দ্বিতীয়ার্ধটা পুরোপুরি হাবাসেরই। বল দখলে রাখা, বিপক্ষের বক্সে হানা দেওয়া, আর ঘনঘন ডিফেন্স আর কিপারকে পরীক্ষার মুখে ফেলে দেওয়া। এই তীব্র চাপ কতক্ষণ সামলাতে পারে ইস্টবেঙ্গল, সেটাই বোধহয় দেখতে চেয়েছিলেন হাবাস। স্প্যানিশ কোচের স্ট্র্যাটেজি একদম সফল। ৭২ মিনিটে ২-১ এটিকে মোহনবাগানের। ফক্সের ভুলে বক্সের মধ্যে বল পেয়ে যান কৃষ্ণা। তাঁর বাড়ান পাস থেকে গোল ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থাকা ডেভিড উইলিয়ামসের। ৮৯ মিনিটে কৃষ্ণার চিপ থেকে জাভি হার্নান্ডেজের হেডে ৩-১। এই ডার্বি ইস্টবেঙ্গলের আইএসএল সফর কার্যত শেষ করে দিল। এই ডার্বি মোহনবাগানের(ATK Mohunbagan) আইএসএল স্বপ্ন আরও উস্কে দিল। ডার্বি এমনই হয়!

মোহনবাগান: অরিন্দম, প্রীতম, তিরি, সন্দেশ, শুভাশিস, লেনি, কার্ল, মনবীর (প্রবীর ৯০), মার্সেলিনহো, কৃষ্ণা, উইলিয়ামস (প্রণয় ৮৮)। ইস্টবেঙ্গল: সুব্রত, সার্থক, রাজু, ফক্স, অঙ্কিত, নারায়ণ, সৌরভ, মাঘোমা, স্টেইনম্যান (অ্যারন ৭৩), পিলকিংটন, ব্রাইট।