Achinta Sheuli: বার্মিংহ্যাম থেকে বাড়ি ফিরে মায়ের হাতে নারকেল-ভাত খাবেন সোনার ছেলে অচিন্ত্য

Commonwealth Games 2022 : কমনওয়েলথ গেমসে সোনার পদকেই আত্মতুষ্ট হতে চান না অচিন্ত্য। নিজের জন্য যেমন লক্ষ্য স্থির করেছেন। পরবর্তী প্রজন্মের জন্যও বিশেষ বার্তা রয়েছে তাঁর।

Achinta Sheuli: বার্মিংহ্যাম থেকে বাড়ি ফিরে মায়ের হাতে নারকেল-ভাত খাবেন সোনার ছেলে অচিন্ত্য
কমনওয়েলথ গেমসে সোনাজয়ী অচিন্ত্য। গ্রামের বাড়িতে তাঁর মাকে মিষ্টিমুখ করাচ্ছেন প্রতিবেশীরা।Image Credit source: PTI
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 01, 2022 | 8:26 PM

কৌস্তভ গঙ্গোপাধ্যায়

যদি বলি, রবিবার মাঝরাতের আগে ক’জন চিনত তাঁকে? পরিবার, বাড়ির আশেপাশের কয়েকজন হয়তো! পুরো হাওড়া? সারা বাংলা? একটা রাত অনেকের জীবন বদলে দেয়। বলা উচিত, রাতারাতি সারা দেশের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছেন তিনি। সোনার পদকের স্বপ্ন কেউ দেখতে দেখতে যদি তা ছুঁয়ে ফেলেন, তা হলে হঠাৎ করেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন দেশবাসীর কাছে। অচিন্ত্য শিউলির গল্পটা সেই রকমই। পরিস্থিতি প্রতিকূল হলেও হাল ছাড়েননি। ছোটবেলায় বাবার মৃত্যু, পরিবারের আর্থিক অনটন, প্রতিকূল পরিকাঠামো, কোনও কিছুই আটকে রাখতে পরেনি দেউলপুরের অচিন্ত্যকে। সেই দুর্গম পথ অতিক্রম করে কমনওয়েলথ চ্যাম্পিয়নশিপে জোড়া সোনা জিতেছিলেন। এ বার বার্মিংহ্যাম কমনওয়েলথ গেমসেও (Commonwealth Games 2022) গলায় ঝোলালেন সোনার পদক। টিভি নাইন বাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ভবিষ্যতের স্বপ্নও তুলে ধরলেন অচিন্ত্য।

বার্মিংহ্যাম থেকে যখন কথা বলছিলেন, হোয়াটসঅ্যাপে জবাবের আসতে দেরি হচ্ছিল। অচিন্ত্যর আদর্শ মীরাবাঈ চানু। ইম্ফলের মেয়ের মতোই জিতেছেন সোনা। চানুর মতোই বিনয়ী ভঙ্গিতে জানালেন, ভারোত্তোলনের ইভেন্ট দেখছেন। নিজে সোনা জিতেছেন। সতীর্থরাও সাফল্য পাক, তাদের তাতাতে, আরও নতুন কিছু শিখতেই নজর রাখছেন সেদিকে। প্রশ্নের উত্তর দিতে দেরী হলেও এড়িয়ে যাননি। আচ্ছা, বাংলায় ভারোত্তোলনের জনপ্রিয়তা না থাকা কিংবা পরিকাঠামো সম্পর্কে কী বলবেন? অচিন্ত্য বললেন, ‘খুব খারাপ লাগে। যে জায়গাগুলো থেকে আমরা পদক আনতে পারি, সেখানে পরিকাঠামোই নেই। অনেক কষ্ট করে আমাদের উঠে আসতে হয়। অন্যান্য রাজ্য, বিশেষ করে পঞ্জাবের মতো উন্নত পরিকাঠামো, সেটা আমাদের রাজ্যে নেই। সেটা দেখলে অবশ্যই খারাপ লাগে।’

পরিকাঠামো যতই না থাকুক, সোনা জয় আটকায়নি অচিন্ত্যর। তবে একটা সময় বাংলা ছাড়ার কথা ভাবতে শুরু করেছিলেন অচিন্ত্য। জাতীয় শিবিরে সুযোগ না পেলে হয়তো তেমন কিছুই ঘটত। ভারোত্তোলন ছাড়া অন্য কোনও খেলা টানেনি? জবাব দিতে খুব বেশি সময় নিলেন না অচিন্ত্য, ‘ছোট বেলা থেকে আমার একটাই নেশা, সেটা হল ভারোত্তোলন। সেই স্বপ্ন কিছুটা পূরণ হয়েছে কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জিতে। পরবর্তী লক্ষ্য অবশ্যই অলিম্পিকের যোগ্যতা অর্জন। ডিসেম্বরে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ রয়েছে। সেখানে ভালো ফল করতে চাই। অলিম্পিকের যোগ্যতা অর্জন এবং অলিম্পিক পদক জিততে পারলে, বলতে পারব, স্বপ্নপূরণ হয়েছে।’

মা, দাদার সঙ্গে তাঁকেও সেলাইয়ের কাজ করতে হয়েছে। তিনবেলা খাবার জুটত না। অন্য কেউ হলে হয়তো জলাঞ্জলি দিতেন স্বপ্নের। তবে দাদা অলোক শিউলি এবং কোচ অষ্টম দাসের ফোকাস হারাতে দেননি অচিন্ত্যকে। তিনি নিজেও করেছেন কঠোর পরিশ্রম। সাফল্যের জন্য আলাদা করে কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুললেন না তাঁর দুই গুরুকে। বলছেন, ‘দাদা এবং কোচ ছাড়া আর কেউ আমাকে উঠে আসার ক্ষেত্রে সেভাবে সাহায্য করেনি। এই দিনটার জন্য ওদের অবদান অনেক। দাদাকেই এই পদক উপহার দিতে চেয়েছিলাম যে কারণে।’ আর মায়ের জন্য বিশেষ কোনও উপহার! অচিন্ত্য বলছেন, ‘বাড়ি ফিরে মায়ের হাতে নারকেল ভাত খেতে চাই। পরিবারের জন্য যতটা ভালো করার চেষ্টা করব। বাড়ি ঘর ঠিক করতে হবে। সে সবের হালও বেশ খারাপ।’

কমনওয়েলথ গেমসে সোনার পদকেই আত্মতুষ্ট হতে চান না অচিন্ত্য। নিজের জন্য যেমন লক্ষ্য স্থির করেছেন। পরবর্তী প্রজন্মের জন্যও বিশেষ বার্তা রয়েছে তাঁর। বলছেন, ‘আমার মতো যারা ভারোত্তলনে উঠে আসার চেষ্টা করছে, তাদের জন্য একটাই কথা বলব, পরিশ্রমের কোনও বিকল্প নেই। পরিশ্রম করলে সুফল একদিন ঠিকই পাওয়া যাবে।’ আরও যোগ করলেন, ‘দুর্গম পথ পেরিয়ে সোনা জেতার পর অদ্ভূত একটা অনুভূতি হচ্ছে। বিদেশে ট্রেনিং নেওয়ার চেষ্টা করব, যাতে সর্বোচ্চ পর্যায়ে আরও ভালো পারফর্ম করতে পারি।’