Arshdeep Singh: ডেথ ওভারের ‘কবি’ অর্শদীপ

Arshdeep Singh, Way to T20 World Cup: অর্শদীপের উত্থান খানিকটা স্বপ্নের মতো। ২০১৯ আইপিএল নিলামে তাঁকে কিনে নয় পঞ্জাব কিংস। ২০২১-এর জুন থেকে তাঁকে ভারতীয় দলের আশেপাশে দেখা গেলেও, ভারতীয় দলের হয়ে তাঁর অভিষেক হয় ২০২২ সালের ৭ জুলাই। তাঁর এই স্বপ্নের উত্থানের রাস্তাতে ছড়িয়ে রয়েছে কাঁটাও।

Arshdeep Singh: ডেথ ওভারের 'কবি' অর্শদীপ
ডেথ ওভারের 'কবি' অর্শদীপImage Credit source: BCCI Twitter
Follow Us:
| Updated on: Oct 22, 2022 | 6:57 PM

সুপ্রিয় ঘোষ

তিনি কবিতা লিখতে ভালোবাসেন। ক্রিকেট কিট ব্যাগে তাঁর সর্বক্ষণের সঙ্গী একটি পেন ও একটি ডায়েরি। আর মাঠে নামলে সেই কবির হাত দিয়ে ডেথ ওভারে যখন ব্যাটারদের সামনে আছড়ে পড়ে একের পর এক ইয়র্কার, লেখা হয় এক ক্রিকেটীয় মহাকাব্য। তিনি অর্শদীপ সিং (Arshdeep Singh)। ৭ জুলাই ভারতের হয়ে অভিষেক হয় তাঁর। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর অভিজ্ঞতা খুব বেশি না হলেও আইপিএলে ৩৭ ম্যাচে তাঁর উইকেট সংখ্যা ৪০ আর ডেথ ওভারে বোলিং করা সত্ত্বেও ইকোনমি রেট মাত্র ৮.৩৫। তাঁর ব্যাপারে অজানা তথ্য তুলে ধরল TV9Bangla

একে টি২০ ক্রিকেট, তার উপর ডেথ ওভারে বোলিং করতে শুধু শৈল্পিক নৈপুন্য থাকলেই চলে না। সঙ্গে থাকতে হয় অসীম মনের জোর। আর সেই সব রসদ জড়ো করে বছর তেইশের অর্শদীপ, জশপ্রীত বুমরার অনুপস্থিতিতে হয়ে উঠেছে ভারতীয় দলের প্রধান ভরসার জায়গা। দক্ষিণ আফ্রিকান স্পিডস্টার কাগিসো রাবাডা, যিনি অর্শদীপের আইপিএল দল পঞ্জাব কিংসের সদস্য, তিনি বলেছেন, “আইপিএলের সেরা ডেথ ওভার স্পেশালিস্ট অর্শদীপই”। আর তাঁর কথার যথার্থতা প্রমাণ করেছেন অর্শদীপ নিজেই। আইপিএলের শেষ মরশুমে অর্শদীপের ডেথ ওভারের ইকোনমি রেট ৭.৫৮ যা কিনা ভারতীয়দের মধ্যে দ্বিতীয় সেরা।

অর্শদীপের বাবা দর্শন সিং কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা বাহিনী বা Central Industrial Security Force (CISF)-এ কর্মরত। তাঁর মা বলজিৎ কৌর। তাঁর বড় হয়ে ওঠার পিছনে রয়েছে তাঁর মায়ের আত্মত্যাগের গল্পও। তাঁরা থাকতেন চণ্ডীগড়ের কাছে খারার নামক জায়গায়। ২০১৫ সালে অর্শদীপ চণ্ডীগড়ে জশবন্ত রাইয়ের ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে যোগ দেন। তখন থেকে শুরু হয় তাঁর মায়ের আত্মত্যাগের পালা। রোজ প্রায় ১৫ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে অর্শদীপকে ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে নিয়ে যেতেন তাঁর মা। যতক্ষণ না ছেলের প্র্যাকটিস শেষ হচ্ছে, তিনি অপেক্ষা করতেন। ছেলেকে নিয়ে আবার বাড়ি তিনি ফিরতেন। তাঁর এই  প্রতীক্ষা বিফলে যায়নি। পঞ্জাবের বিজয় হাজারে দলেও ডাক পান তিনি। লিস্ট এ ক্রিকেটে অভিষেকও হয় সেই বছর। তারপরই ২০১৮-এর অনুর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে ভারতীয় দলে ডাক পান তিনি।

এরপর অর্শদীপের উত্থান খানিকটা স্বপ্নের মতো। ২০১৯ আইপিএল নিলামে তাঁকে কিনে নয় পঞ্জাব কিংস। ২০২১-এর জুন থেকে তাঁকে ভারতীয় দলের আশেপাশে দেখা গেলেও, ভারতীয় দলের হয়ে তাঁর অভিষেক হয় ২০২২ সালের ৭ জুলাই। তাঁর এই স্বপ্নের উত্থানের রাস্তাতে ছড়িয়ে রয়েছে কাঁটাও। এশিয়া কাপের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে তাঁর হাত থেকে একটি ক্যাচ ফস্কে যাওয়ায় তিনি সমালোচকদের নিশানায় চলে আসেন। পরিবর্তন করে দেওয়া হয় তাঁর উইকিপিডিয়া পেজের বিবরণও। তারপরই তৎপর হয় ভারত সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রক। উইকিপিডিয়ার আধিকারিকদের ডেকে পাঠিয়ে এই গণ্ডগোলের কারণ দর্শাতেও বলা হয়।

আগেই জানিয়েছি, অর্শদীপ কবিতা লিখতে ভালোবাসেন। তাঁর লেখা একটা কবিতা কিছুদিন আগেই তিনি শেয়ার করেছিলেন। সেই কবিতার মর্মদ্ধার করলে যা দাঁড়ায়, তা হয়তো তাঁর নিজের জীবনেরই গল্প। “কারও জন্য, আমি ভাগ্যবান, / কারও জন্য, তা হয়তো অপ্রত্যাশিত। কিন্তু তারা আমার কঠোর পরিশ্রমকে উপেক্ষা করে। তারা শুধুমাত্র আমার ভাগ্য ও নিয়তিই নিয়েই মন্তব্য করে। যখন মানুষের সুসময় তখন যে কেউ সফল হতে পারে। কিন্তু কেউ যখন কঠিন সময় পেরিয়ে এলে, চরিত্রের আসল পরীক্ষা সেটাই। যারা সাহসী, তারা সহজে পিছিয়ে যায় না। আর যারা আমার মতো, তারা কঠিন সময়েও আশা হারাবে না।”

তাঁর এই কবিতা লেখা নিয়ে অর্শদীপ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমার সঙ্গে সব সময় আমার পেন ও ডায়েরি থাকে। আমার মাথায় যা ভাবনা আসে, তা আমি সব সময় লিখে রাখতে পছন্দ করি। আর কবিতা লেখা আমাকে ক্রিকেটের বাইরে কিছু ভাবতে সব সময় সাহায্য করে।

তাঁর আইপিএল ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পরিসংখ্যান দেখলে যে কোনও মানুষই বুঝবেন টি২০ বিশ্বকাপে ভারতের কতটা প্রয়োজন হতে চলেছে তাঁকে। টি২০ বিশ্বকাপে রবিবার ভারত-পাক মহারণ। আর সেই ম্যাচেই জশপ্রীত বুমরার অনুপস্থিতিতে সেই অর্শদীপই হয়তো হতে চলেছে শাহিন আফ্রিদিদের বিরুদ্ধে রোহিত শর্মার তুরুপের তাস।