India vs New Zealand: আজাজের ‘১০/১০’ এও ম্যাচ ঢলে বিরাটদের দিকে

আজাজের ১০ উইকেটেও দ্বিতীয় দিনের শেষ চালকের আসনে ভারত। প্রথম টেস্ট নাগপুরে ড্র হয়েছিল। দ্বিতীয় টেস্ট জয়ের স্বপ্ন দেখা শুরু করে দিয়েছেন বিরাটরা।

India vs New Zealand: আজাজের '১০/১০' এও ম্যাচ ঢলে বিরাটদের দিকে
India vs New Zealand: আজাজের '১০/১০' এও ম্যাচ ঢলে বিরাটদের দিকে
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 04, 2021 | 8:11 PM

অভিষেক সেনগুপ্ত

ভারত ৩২৫ ও ৬৯-০ নিউজিল্যান্ড ৬২ (আগের দিন ভারত ২২১-৪)

এই দিন কয়েক আগেও গ্রিন পার্কের ঝলকে কোনও রকম পূর্বাভাস ছিল না। বাঁ হাতি ঠিকই, কিন্তু নিপাট সাদামাঠা বোলার। পিচ সহায়ক না হয়ে উঠলে তেমন ভয়ঙ্করও নন। কানপুর থেকে দু’ইনিংস মিলিয়ে ৩ উইকেট ছিল নামের পাশে। ব্যাস! ভারতীয় বংশোদ্ভূত এমন কত বোলারই তো খেলেন। টেস্ট শেষ হয়ে গেলে তাঁকে নিয়ে আর তেমন আলোচনাই বা থাকে কোথায়?

ক্রিকেট নিয়ে এই এক মুশকিল। যাঁকে গড়পড়তা, অতিসাধারণ মনে হয়, তিনিই কখন যে অকল্পনীয় কিছু ঘটিয়ে বসবেন, কে জানে! আর যখন ঘটাবেন, তখন তিনিই থাকবে মধ্যাকাশে। আজাজ প্যাটেলের মতো!

ক্রিকেট বরাবরই একটু ব্যাটার ঘেঁষা। বাইশ গজ যেন ব্যাটিং শৈলী দেখার অপেক্ষাতেই থাকে! একটা সেঞ্চুরি, ম্যাচ বাঁচানো ইনিংস যতটা আলো পায়, বোলাররা কি ততটা পান? ৫ উইকেট নিলে আলোচনা হয়। টেস্ট ম্যাচের দু’ইনিংস মিলিয়ে ১০ উইকেট পেলে বোলারের প্রাধান্য, দাপট, গভীরতা, ধারাবাহিকতার প্রশংসা ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু কেউ যদি এক ইনিংসের সব ক’টা উইকেট সাবাড় করেন?

১৯৫৬ সালে ইংল্যান্ডের স্পিনার জিম লেকার যেমন করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাঞ্চেস্টারে। ক্রিকেট ইতিহাসে ওই ১০টা উইকেটের মতো বিরল ঘটনা ৪৩ বছর ধরে অক্ষত ছিল। ১৯৯৯ সালে ফিরোজ শাহ কোটলায় যদি না অনিল কুম্বলে নামক লেগস্পিনার না থাকতেন, তা হলে ইতিহাস আবার ফিরে দেখা হত না। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওই রেকর্ড চিরকালীন গর্বের। ২২ বছর পর সেই ভারতের মাটিতেই আর এক স্পিনার রেখে গেলেন স্থায়ী ছাপ। ওয়াংখেড়েতে বিরাট কোহলির টিমের বিরুদ্ধে আজাজ একাই নিয়ে গেলেন ১০টা উইকেট! ৪৭.৫ ওভার বল করে ১২টা মেডেন সহ ১১৯ রান দিয়ে ১০ উইকেট! লেকার কিংবা কুম্বলের সঙ্গে ফারাক কোথায় আজাজের? লেকার, কুম্বলেরা নিজেদের দেশেই করেছিলেন ওই অবিস্মরণীয় রেকর্ড। আর আজাজ করলেন বিদেশের মাটিতে। বা আরও ভালো করে বললে, যে দেশে জন্ম তাঁর, সেই দেশই দু’হাত ভরিয়ে দিল তাঁকে।

প্রথম দিনের শেষে ২২১-৪ ছিল ভারতের। ১২০ রান নিয়ে নামা মায়াঙ্ক আগরওয়াল ১৫০ করে ফিরে গেলেন। আজাজের ঘূর্ণির সামনে অক্ষর প্যাটেল ৫২ করলেন। ঋদ্ধিমান সাহা ২৭ করে ফিরলেন। ৩২৫-এ শেষ বিরাট কোহলিরা। আজাজের ছোবলে ছবি পুরো ভারতীয় টিম!

আজাজ যা পারতেন, তার অনেক বেশি কিছু করে গেলেন। কিন্তু পাল্টা লড়াইটাও তো করতে হবে! সেটাই নিউজিল্যান্ড করতে পারল না। কেন উইলিয়ামসন না থাকলে কিউয়িদের ব্যাটিং গভীরতা কমে। তাই বলে ৬২ রানে অল আউট হয়ে যাবে পুরো টিম? কাইল জেমিসন (১৭) আর টম ল্যাথাম (১০) কিছুটা রান না করলে দলগত হাফসেঞ্চুরিও হত না সফরকারী টিমের। আজাজের দেখানো পথেই ওয়াংখেড়ে থেকে উইকেট আদায় করে নিলেন অক্ষর প্যাটেল, রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও জয়ন্ত যাদব। ৮ ওভার বল করে ২ মেডেন সহ ৮ রান দিয়ে ৪ উইকেট অশ্বিনের। ২ উইকেট অক্ষরের, ১টা জয়ন্তের। সেই সঙ্গে মহম্মদ সিরাজের দুরন্ত বোলিং। আগের টেস্টে টিমে সুযোগ পাননি। ইশান্ত শর্মার পরিবর্ত হিসেবে টিমে ঢুকেই ১৯ রানে ৩ উইকেট নিলেন সিরাজ। মাত্র ২৮.১ ওভারে ৬২ রানে শেষ কিউয়িরা। ভারতে সফরকারী টিমগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন স্কোর এটাই।

আজাজের ১০ উইকেটেও দ্বিতীয় দিনের শেষ চালকের আসনে ভারত। প্রথম টেস্ট নাগপুরে ড্র হয়েছিল। দ্বিতীয় টেস্ট জয়ের স্বপ্ন দেখা শুরু করে দিয়েছেন বিরাটরা। দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৯-০ ভারত। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করা মায়াঙ্ক ৩৮ রানে ব্যাট করছেন। ওপেন করতে পাঠানো পূজারাও ২৯ রান করে ক্রিজে। ৩৩২ রানের লিড নিয়ে ফেলেছেন বিরাটরা।

যে দিকে গড়াচ্ছে ওয়াংখেড়ে টেস্ট, তাতে ফয়সালা হবেই। আর যা গতি প্রকৃতি, তাতে ভারতেরই জেতার সম্ভাবনা বেশি। তাই যদি হয়, তা হলে আজাজের সঙ্গে আরও একটা ফারাক থেকে যাবে লেকার ও কুম্বলের। ১০ উইকেটের ক্লাবে জায়গা পাওয়া প্রথম দুই সদস্যের ‘পারফেক্ট টেন’ টেস্ট জিতিয়েছিল টিমকে। আজাজকে ফিরতে হবে শূন্য হাতে! ভুল বললাম, ১০ উইকেট নিয়ে!

সংক্ষিপ্ত স্কোর: ভারত ৩২৫ (মায়াঙ্ক ১৫০, অক্ষর ৫২, ঋদ্ধি ২৭, আজাজ ১০-১১৯)। নিউজিল্যান্ড ৬২ (জেমিসন ১৭, ল্যাথাম ১০, অশ্বিন ৪-৮, সিরাজ ১৯-৩, অক্ষর ২-১৪, জয়ন্ত ১-১৩)। ভারত (দ্বিতীয় ইনিংস) ৬৯-০ (মায়াঙ্ক নট আউট ৩৮, পূজারা নট আউট ২৯)।