Sourav Ganguly: বিদায়েও ভরসা দিয়ে গেলেন সৌরভ, ‘মন খারাপের কী আছে!’

বাঙালির কখন মন খারাপ হয় বলুন তো? পরীক্ষায় ভালো ফল না হলে, বছরের শেষে ইনক্রিমেন্ট ঠিকঠাক না হলে, দুর্গাপুজোর দশমীতে, প্রিয় দল ম্যাচ হেরে গেলে। আর? আর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ব্যাকফুটে চলে গেলে।

Sourav Ganguly: বিদায়েও ভরসা দিয়ে গেলেন সৌরভ, 'মন খারাপের কী আছে!'
বিদায়েও ভরসা দিয়ে গেলেন সৌরভ, 'মন খারাপের কী আছে'Image Credit source: PTI
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Oct 13, 2022 | 7:13 PM

কৌস্তভ গঙ্গোপাধ্যায়

‘আরে মন খারাপের কী আছে!’ সেই পরিচিত গলা যেন আশ্বাস দিয়ে গেল! সহজ গলায় বলে গেল, কঠিন যা কিছু সহজে নিতে হয়। আর একবার শিখিয়ে দিয়ে গেল, একটা হার, একটা চলে যাওয়া মাপকাঠি হয় না কারও! বিশেষ করে তিনি যদি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly) হন!

বাঙালির কখন মন খারাপ হয় বলুন তো? পরীক্ষায় ভালো ফল না হলে, বছরের শেষে ইনক্রিমেন্ট ঠিকঠাক না হলে, দুর্গাপুজোর দশমীতে, প্রিয় দল ম্যাচ হেরে গেলে। আর? আর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ব্যাকফুটে চলে গেলে। ১৪ বছর আগের এক দুর্গাপুজোয় বাঙালির হৃদয়ে মন খারাপের বিষাদের ঢাক বাজিয়ে দিয়েছিলেন মহারাজ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে। এ বার পুজো শেষে আবারও বাঙালির হৃদয়ে মন খারাপের সুর। সৌরভ আর বোর্ড প্রেসিডেন্টের পদে থাকবেন না। কয়েক দিন আলোচনা, ডামাডোল, বিতর্ক, বিশ্বাসঘাতক কে, এ সবের খোঁজ চলেছে। বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে দেখা মিলল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের। সেখান থেকে বেরোনোর সময় কয়েক জন ভক্ত আকুতি নিয়ে বললেন, ‘দাদা মন ভালো নেই আমাদের।’ ভক্তদের দিকে তাকিয়ে সেই চেনা হাসি হাসলেন সৌরভ। তারপর এল উত্তর, ‘আরে, মন খারাপের কী আছে!’

সৌরভ বোর্ড সভাপতির চেয়ার হারাতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বোমা ফাটিয়েছেন প্রাক্তন সিএবি কর্তা বিশ্বরূপ দে। একের পর এক মন্তব্যে ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ককে বিদ্ধ করেছেন। যে মন্তব্য স্বাভাবিক ভাবেই মেনে নিতে পারেননি সৌরভ। যদিও সামনাসামনি কিছু বলছেন না। বোর্ড প্রেসিডেন্টের আপ্ত সহায়ক তানিয়া ভট্টাচার্য এ প্রসঙ্গে কার্যত তুলোধোনা করেন প্রাক্তন সিএবি কর্তাকে। ‘দাদা তো নিজে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গিয়ে বলেননি, উনি সিএবির সভাপতি হতে চান। অমিত শাহর কাছে যাননি বোর্ড সভাপতি হওয়ার জন্য। ৩ বছর আগে বোর্ড সভাপতি হওয়ার দৌড়ে ছিলেন ব্রিজেশ প্যাটেল। আর সিএবিতে তো নির্বাচনের সময় দাদার বিরুদ্ধে দাঁড়াতেই পারতেন বিশ্বরূপ দে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বাঙালির আইকন। তাঁকে কেউ কোনও কিছু পাইয়ে দেননি, নিজের যোগ্যতায় অর্জন করেছেন। লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সেঞ্চুরিটাও কিন্তু নিজের যোগ্যাতাতেই করেছিলেন? বিশ্বরূপ দে কেন এই মন্তব্য করেছেন, তা সবারই জানা। কথায় বলে বাঙালি কাঁকড়ার জাত। ওঁকে দেখে সেটাই মনে হচ্ছে।’

অনুষ্ঠানে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ইঙ্গিতপূর্ণ কয়েকটি মন্তব্য করেন। ‘সিএবি প্রেসিডেন্ট ছিলাম, বোর্ড প্রেসিডেন্ট হয়েছি। এ বার আরও বড় কিছু করব।’ একই সঙ্গে সৌরভ বলে গেলেন, ‘এত বছর ভারতীয় ক্রিকেটের প্রশাসনিক পদ সামলেছি। এ বার সেখান থেকে সরে অন্য কোথাও যাব।’ কোথায় যাবেন মহারাজ? কোন আসনে দেখা যাবে তাঁকে? তা নিয়ে বিস্তর জল্পনা। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের আপ্তসহায়কের উত্তর, ‘মহারাজদার বয়স সবে ৫০। এখনও অনেক কিছু করার আছে। দাদা যাই করুন, সেটা অবশ্যই চমক হবে।’

আইসিসি প্রধান হওয়ার জন্য ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রস্তাব প্রয়োজন। এখন সৌরভের সঙ্গে বোর্ডের যা সম্পর্ক, তাতে হয়তো আইসিসিতে তাঁকে দেখা না যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে এটা বলা যেতেই পারে, পিকচার আভি বাকি হ্যায়…। বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠানেও বেশ কয়েকটি তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেন সৌরভ। যেমন অনুষ্ঠানে একটা পুরনো ম্যাচের ক্লিপিংস দেখানো হয়। যেখানে দ্রাবিড়ের সঙ্গে কমেন্ট্রি করছিলেন সৌরভ। আর ওই ম্যাচের সেই ক্লিপিংসে দেখা যায় স্টুয়ার্ট বিনিকে বোলিং করতে। ভিডিও শেষ হওয়ার পর মাইক হাতে সৌরভ বলে উঠলেন, ‘এটা স্টুয়ার্ট বিনি, রজার বিনি নন। রজার বিনির ছেলে।’ এরপর আর নতুন করে বুঝে নিতে কষ্ট হয় না, কেন তিনি এই মন্তব্য করলেন। ‌কোনটা প্রাসঙ্গিক আর কোনটা অপ্রাসঙ্গিক, সময় বলবে। এখনও পর্যন্ত যা খবর, তাতে ১৮ তারিখ বোর্ডের বার্ষিক সভায় শেষ বার প্রেসিডেন্ট পদের চেয়ারে বসবেন সৌরভ। তারপরই দায়িত্ব তুলে দেবেন রজার বিনিকে। মহারাজ যতই বলুন, বাঙালির পক্ষে এ দৃশ্য মেনে নেওয়া সত্যিই কঠিন। চ্যাপেল জমানাতেও তাঁর কাছ থেকে নেতৃত্ব কেড়ে তুলে দেওয়া হয়েছিল রাহুল দ্রাবিড়কে। যে ছবি আজও মেনে নিতে পারে না বাঙালি।

খোদ সৌরভই কি আর পেরেছিলেন? পারেননি বলেই তো ফিরে এসেছিলেন। প্রবল ভাবে। এ বারও আসবেন। বাঙালির এই ভরসা আজও অটুট।